বাংলাদেশের উইন্ডিজ সফর: তরুণদের উপরেই মূল ফোকাস

Desktop13সবশেষ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছিল বাংলাদেশ। সেবার প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুধু জয় কেন, সিরিজই জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষের সেই জয় ছিল গর্বের। সেবারের জয়ের সুখকর স্মৃতি টাইগারদের আত্নবিশ্বাস যুগিয়েছে বহুদিন। এখনো সেই জয়ের গৌরবের ফল হিসেবে তরুন একটি দলকে নিয়েই সাহসি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরুসিংহে। সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুজনেই। তবে ২০০৯ সালের সাফল্যের রেশ কতটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব-তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। সেবার সাকিব আর তামিমের দারুন পারফরম্যান্স ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে। পাঁচ বছর পেরিয়ে ২০১৪ সালে এসে বদলেছে দৃশ্যপট।

বিদেশের মাটিতে ওই একবারই টেস্ট সিরিজ জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এর অনেকটাই অবদান যার, সেই সাকিব আল হাসান এবার দলে নেই। বুধবার রাতে মুশফিকরা যখন বিমানে চড়বেন, তখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি মাথায় নিয়ে দেশেই থাকবেন বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেটার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ব্যাটে রান দেখছেন না তামিম ইকবাল।

তাইতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে এবার ভরসা রাখতে হচ্ছে তরুন আর নতুনদের উপরই। অন্তত ব্যাটিং-এ তো ভরসার জায়গা তরুনরাই। ব্যাটিংয়ে তাই নতুন আর তরুনদের উপরই মূল ফোকাসটা রাখতে হবে বাংলাদেশ দলকে। অধিনায়ক হিসেবে তো বটেই, সেই সাথে নিজের ব্যাটিংটা নিয়েও চাপে থাকবেন মুশফিক। অবশ্য সেই চাপ একা না নিয়ে পুরো দলের উপর তা বাতলে দিয়েছেন। নতুনদের উপর ভরসা রাখছেন মুশফিক-এটা এক রকম বুঝিয়েই দিয়েছেন তাদের। রোববার সফর পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের কন্ঠে তেমনটাই বোঝা গেল। মুশফিক বলেন, নতুন অনেকে ভালো করছেন। বিজয় (আনামুল হক), মমিনুল, আল আমিন-তাসকিন সবাই নতুন হিসেবে ভালো খেলছে। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। ওদের জন্য শুভকামনা রইলো।’

দেশসেরা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা বিদেশের মাটিতে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১২ সেপ্টেম্বরে। শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে। দেশের বাইরে শেষ ওয়ানডে খেলেছেন গ্লাসগোতে ২০১০ জুলাইয়ে হল্যান্ডের বিপক্ষে। মাঝে লম্বা বিরতি। আজ রাতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিমানে ওঠার আগে তাই একটু স্নায়ুচাপে ভোগাই স্বাভাবিক মাশরাফির। তবে মাশরাফিকে স্বাও্বনা দিতে পারেন তারই শিষ্য তাসকিন আহমেদ। সতীর্থ পেসারের দূর্বলতা ঢাকতে পারার মতো জৌলুস আছে তার বোলিংয়ে।

তাসকিন আহমেদের জাতীয় দলের হয়ে প্রথম বিদেশ সফর।‘আমি চাই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে। জাতীয় দলে আসার পর প্রথম সফর, এটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো ভালো ব্যাটসম্যান আছে। গেইল, ব্রাভো..আমি ওদের উইকেট নিতে চাই। চাই আক্রমণাত্মক বোলিং করতে।’

আরেক পেসার রুবেল হোসেনের দর্শনও প্রায় একই, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাউন্সি উইকেট পেলেই খুশি হব। আমাদের দেশে ওরকম উইকেট পাই না। আর যদি উইকেট অমন বাউন্সি না হয়, চেষ্টা করব ভালো জায়গায় বল করতে।’

গত মে-জুনে ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছেন নাসির হোসেন, শামসুর রহমান, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক। ‘এ’ দল সব ম্যাচই বার্বাডোজে খেলেছিল, যেখানে এবার কোনো ম্যাচই নেই। তবু শামসুরের বিশ্বাস, ‘এ’ দলের হয়ে খেলে আসার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। কাজেই উইকেট নয়, শামসুরের চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে অন্য একটা ব্যাপার। দলে যে এবার ওপেনারই আছেন চারজন!

জাতীয় দল এবং ‘এ’ দলের অধিনায়ক হিসেবে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সময়টা ভালো কাটেনি নাসিরের। এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর তাই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্য তার। তবে নাসির বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন দল হিসেবে ভালো খেলার ওপর, ‘আমরা দল হিসেবে ভালো খেলছি না। আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কথা হয়েছে। সবারই লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দল হিসেবে ভালো ফল নিয়ে ফেরা।’

গেল বছর দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ‘টিম বাংলাদেশ’ হয়ে উঠার তকমা পেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু এ বছরের এক-তৃতীয়াশ সময় পেরিয়ে গেলেও টেস্ট প্লেয়িং কোনো দলের বিপক্ষে ওয়ানডে, টেস্ট কিংবা টি-২০ কোনোটিতেই জয় নেই বাংলাদেশের। তরুনদের পারফরম্যান্সের দিকেই তাই তাকিয়ে থাকবে টাইগার ভক্তরা। তারুন্য নির্ভর দলের ‘নির্ভরতা’ তো তরুন ক্রিকেটাররাই।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend