জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার কিছু অংশ সাংঘর্ষিক: টিআইবি

tib_logo_bangla

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার কিছু অংশ তথ্য অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল অবকাশের ব্যাস্কুয়েট হলে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। সম্মেলনে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ বিষয়ে সংগঠনটির অবস্থান তুলে ধরেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) রিজওয়ান-উল-আলম।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নীতিমালা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।

নীতিমালার ইতিবাচক দিকগুলোকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব নীতি নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলোকে অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। নীতিমালার বাস্তবায়নে স্বচ্ছ কমিশন করার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছ কমিশন গঠন করতে হবে। এ নীতিমালার বেশ কিছু ধারা ইতিবাচক হলেও এমন অনেক ধারা রয়েছে যা গণমাধ্যমের জন্য বেশ হুমকির।

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া এই সম্প্রচার নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান অংশের ৩.২.১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশবিরোধী কিংবা জনস্বার্থবিরোধী কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। কিন্তু এ ধারাটিতে দেশবিরোধী কিংবা জনস্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো কি কি তার সুস্পষ্ট বলা নেই।

ধারাটিতে দেশবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী বিষয় নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় এতে সরকার বা ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় বলা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের মানহানি হয় এমন কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। তার মানে কি যারা দুর্নীতি করবেন তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না?

আর এ রকম বেশ কিছু সাংঘর্ষিক বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, নীতিমালার শর্তগুলোর মাধ্যমে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এতে দেশ, সরকার ও রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নীতিমালায় উল্লেখ করা ধারা প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, এ নীতিমালা কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থাহীনতা আরও বেড়ে যাবে।

নীতিমালার শর্তগুলোতে ‘অস্পষ্টতার’ কারণে সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে দেওয়া ‘বিপজ্জনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুলতানা কামাল বলেন, এ নীতিমালা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এভাবে গণমাধ্যম চলতে পারে না। এ নীতিমালায় গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে সম্প্রচার গণমাধ্যমকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, এ নীতিমালা তথ্য অধিকার আইন, সংবিধান, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

উল্লেখ্য, গত ৪ অগাস্ট মন্ত্রিসভা এই নীতিমালা অনুমোদন করার পর থেকেই বিএনপি ও সাংবাদিকদের একটি অংশ এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে ১৯ অগাস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশেরও কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

অবশ্য সরকার বলেছে, কণ্ঠরোধের জন্য নয়, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে গণমাধ্যমের কল্যাণের জন্যই।

সুলতানা কামাল বলেন, তথ্য অধিকার আইনে বিশেষ বাহিনীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানার সুযোগ রাখা হয়নি। আর এ নীতিমালায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এর মাধ্যমে আইনের ঊর্ধে রেখে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হবে। তখন তারা দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, তারা মনে করেন, সরকারের বিরদ্ধে কথা বলা মানে দেশের বিরদ্ধে কথা বলা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend