শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন # পারবে কি বিএনপি?
প্রবল জনসমর্থন এখন বিএনপির দিকে। সরকারের নানা ব্যর্থতা, নানা ইস্যুতে মানুষ ইতোমধ্যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জনসমর্থনের দিকে তাই বিএনপি এগিয়ে। কিন্তু জনসমর্থনের এই সুফল শেরপুর জেলা বিএনপি কি ঘরে তুলতে পারবে আগামী ৩১ আগস্ট শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে এমন প্রশ্নই এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই দেখা গিয়েছে বিএনপির ভেতরের দ্বিধার চিত্র। দলের ম্টো ৪ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করে। কিন্তু পরবর্তীতে দল এডভোকেট সিরাজুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়ায় দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মামুনর রশীদ পলাশ ও শফিকুল ইসলাম মাসুদ তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাতাহার করে নেন। কিন্তু থেকে যায় বিএনপিতে নবাগত মুখ জহুরুল ইসলাম আবু। গত ১৩ আগস্ট দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। দলে ঢুকতে না ঢুকতেই অব্যাহতির মুখোমুখি হতে হয় জহুরুল ইসলাম আবুকে। মূলত আওয়ামীলীগ ঘরানা থেকে আসা এই ব্যক্তিটি গত উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর আওয়ামীলীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিকের বিরাগভাজন হওয়ায় তার আর আওয়ামী রাজনীতিতে শেকড় গাড়া সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে এবং ক্ষোভেই যোগ দেন বিএনপিতে। কিন্তু বিএনপিতে ঢুকেও তাকে পরতে হয় অব্যাহতির কবলে।
বর্তমান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম আইনজীবী হিসাবে সুপরিচিত। তিনি জেলা বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এর আগে। কিন্তু আইনজীবী হিসাবে তার যতটা পরিচিতি রয়েছে একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে সে পরিমান পরিচিতি তিনি গড়ে তুলতে পারেননি। তাছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তথা ভোটের নির্বাচনে এবারই প্রথম তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার ফলে তার অবস্থান সম্পর্কে দলীয় নেতাকর্মীরাই এখনো সন্দিহান।
এসব সত্বেও ব্যক্তি সিরাজুল ইসলাম সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা রয়েছে। মানুষ হিসাবেও তিনি অনেক রাজনীতিকের মতো বিতর্কিত নন। আইনজীবী হিসাবেও তিনি সুনামের অধিকারী। নির্বাচনে যোগ্যতার মাপকাঠিতে তিনি উত্তীর্ণ। এদিক চিন্তা করলে বিএনপির মনোনয়ন ঠিক হিসাবেই ধরে নিতে হয়।
কিন্তু তারপরেও শেরপুর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে যে আভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে তা কাটিয়ে সব কর্মীকে নির্বাচনের মাঠে নামানো যাবে কি না সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গত নির্বাচনে আভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে ফজলুল হক বাদশার মতো পরিচিত একজন প্রার্থীকে মাঠে নামিয়েও লজ্জাজনক ফলাফল মেনে নিতে হয়েছিল বিএনপিকে। গতবারের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই এবার বিএনপি নেতাদের নির্বাচনের মাঠে নামতে হবে।
তবে কালাম উকিলের অনুসারীরা এবার কালাম উকিলের ছেলে পলাশের সাথে রয়েছে, অন্যদিকে ফজলুল হক তারার একটি অংশ রয়েছে মূল ¯্রােতের বিরোধীতায়। এসব বিরোধীতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে জেলার বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদুল হক রুবেল পারবে কি এবার নির্বাচনে তরী তীরে ভেড়াতে?
অনেকে বলছেন বিগত ৪টি উপজেলা নির্বাচনে ৪টিতেই সফল ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদুল হক রুবেল। বিশেষ ঝিনাইগাতীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী কারাগারে থাকা অবস্থায় সফলভাবে তিনি নির্বাচন পরিচালনা করে বিএনপিকে বিজয়ী করেছিলেন। তাছাড়া শ্রীবরদীতে জামায়াতের বিরোধীতা, নিজ দলের অনেকের বিরোধীতা সত্বেও অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় প্রার্থীকেও ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন। যদিও শ্রীবরদী জয় পায়নি বিএনপি। কিন্তু তারপরেও অনেকের ধারণার চাইতেও ভালো করেছিল বিএনপির প্রার্থী।
আর সে কারণেই অনেকে আশা করছেন শেরপুর নির্বাচনেও বিএনপি এমন একটা কিছু করবে। আর সে আশার কতটুকু পূরণ হয় তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।