বিনম্র চিত্তে দেশব্যাপী জাতীয় শোকদিবস পালিত
বছর ঘুরে আবারো এসেছে বাঙালি জাতির সেই শোকাবহ দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতি একইসঙ্গে স্মরণ করছে তার পরিবারের নিহত সদস্যদেরও।১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে। ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও।
শুক্রবার ছিল সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের এই দিন জাতীয় শোক দিবস। তাই ১৫ অগাস্ট সরকারি ছুটির দিন।সরকারের পাশাপাশি দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুক্রবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পাশাপাশি তোলা হয় কালো পতাকা।
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পালাতক খুনীদের দেশ ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর ও চিহ্নিত বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ ব্যাপি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়ে।
দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দস্থ’দের মাঝে খাবার বিতরনের মধ্য দিয়ে নগরীর সর্বস্তরের মানুষ বিন¤্র চিত্তে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শোক দিবস উপলক্ষে আজ ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেস্থ’ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
শুক্রবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময়ে তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির জনকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্তানে যান। যেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তাঁর মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের দাফন করা হয়।তিনি কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।এখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বনানী কবর¯’ানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বনানী কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল অভিবাদন জানায়। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং দেশের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মিলাদ মাহ্ফিল ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ মিলাদ মাহ্ফিলে অংশ নেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেছেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সমাজের আয়োজনে সর্বধর্ম এই প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মতিঝিলের ওয়াপদা ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক কর্মচারী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।সংগঠনের সভাপতি মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আফজালুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিশেষ দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জমান সোহাগের সভাপতিত্বে সভায় গৃহও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী উপস্থিবক্তব্য রাখেন।
জাতীয় শোক দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো। সব ক’টি থানা-ওর্য়াড জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করে।
ধানমন্ডি ৩২ এ খাবার বিতরণ ও রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।এখানে স্বেচছাসেবক লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস কথা কয় শীর্ষক একটি আলোক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বাদ জুমা দেশের সব মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। রাজধানীসহ সারা দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে দরিদ্র রোগীদের ২ ঘন্টা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
এছাড়াও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শেখ রাসেল শিশু কিশোর সংসদ,বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস এসোসিয়েশন, বাংলাদশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, জাতীয় রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ফাউন্ডেশন সেগুন বাগিচা নাগরিক সোসাইটি, বাংলাদেশ আওয়ামী পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা ফোরাম বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে পাবনায় জাতীয় শোক দিবস পালন
সিলেট: সিলেটে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে।সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শুরুতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এসময় সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়।এরপর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন ছাড়াও প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
শুক্রবার ভোরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সিলেট আওয়ামীলীগের অস্থায়ী কার্যালয়সহ দলীয় সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পাশাপাশি তোলা হয়েছে কালো পতাকা।জুমার পর বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া আয়োজন করা হয়। এছাড়া মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা সহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এদিকে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিলেট জেলার সবক’টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ও ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। দেশব্যাপি সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি সিলেট সিভিল সার্জন অফিস এই উদ্যোগ নেয়। এছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা ও মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার সকালে থেকে সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, জেলা ও মহানগর যুবলীগ, মহানগর ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ-সিলেট বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, নাট্যমঞ্চ, ছড়ামঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধ অনুশীলনসহ নানা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন।
মাগুরা: যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট বীরেন শিকদার বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার পরিপূর্ণ রূপ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ।তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি পরিপূর্ণ দেশ হিসেবে গেড়ে উঠবে।তিনি শুক্রবার মাগুরা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সিরাজুল আকবর এমপি, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, মুন্সি রেজাউল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু নাসির বাবলু, গোলাম মওলা, উপ-প্রচার সম্পাদক শাখারুল ইসলাম শাকিল, স্বেচ্ছা সেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রানা আমীর উসমান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একটি অভিন্ন শব্দ। বঙ্গবন্ধু তার প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন বাঙ্গালী জাতির অধিকার আদায়ের জন্য।বাংলাদেশকে পাকিস্তানী শাসকদের হাত থেকে স্বাধীন করে বঙ্গবন্ধু যখন সাবেমাত্র দেশ পুর্নগঠনের কাজ শুরু করেছিলেন ঠিক সেই সময় ষড়যন্ত্রকারি কিছু সেনা অফিসার তাকে স্বপরিবারে হত্যা করে দেশকে কলঙ্কিত করেছে।শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশকে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম: নগরজুড়ে শোকের পতাকা, বুকে কালো ব্যাজ। মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ভাবগম্ভীর প্রকৃতিও। সকাল থেকে কাঁদছে অঝোরে। তবুও থেমে নেই মানুষের মিছিল, মোড়ে মোড়ে জটলা। কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রতৃকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দীর্ঘ সারি, কোথাও আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল। কোথাও বা মাইকে বাজছে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো,বঙ্গবন্ধু মরে নাই..।এভাবেই নানা আয়োজনে শুক্রবার জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করছে চট্টগ্রামবাসী।
সকাল দশটায় নগরীর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী খান, সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আখতারসহ বিভিন্ন সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
জাতীয় শোক দিবসে সকল নয়টায় লালদিঘির পাড়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সিটি কর্পোরেশন। সকাল ১০টায় লালদিঘি শাহী জামে মসজিদে আয়োজন করা হয় এতিমদের সমাবেশ, খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ। এছাড়াও দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে সিটি কর্পোরেশন।
সকাল ছয়টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা ও কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করে মহানগর আওয়ামী লীগ। সকাল নয়টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। শোক দিবসে মহানগর আওয়ামী লীগের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাইকযোগে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার, খতমে কোরআন ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনা সভা।
সকাল আটটা থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার দিনব্যাপী কর্মসূচি। দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা। বিকাল দারুল ফজল মার্কেটে রয়েছে সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা।
বঙ্গবন্ধুর স্মরণে শুক্রবার সকালে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এ দোয়া মাহফিলে সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি এজাজ ইউসুফী , সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরীসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।এছাড়া সকাল থেকে নগরীর প্রতিটি থানা,ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,সেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ,ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে শোক দিবস পালিত হচ্ছে।
পাবনা: যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমানের ৩৯ তম শাহাদৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিনটি পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন, রচনা, কবিতা আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, শোক র্যালী, যুব উন্নয়নের ঋন বিতরন, দুঃস্ত, এতিমদের বিশেষ খাবার পরিবেশন, চিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা। জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সকালে দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও দলীয় কার্যালয়ে দিনভর কোরআন খানি, আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দূর্জয় পাবনায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পু®পমাল্য অর্পন শেষে শহরে শোক র্যালি প্রদক্ষিন করে। এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দীন আহমেদ, প্রবীণ নেতা এডঃ গোলাম হাসনায়েন, রেজাউল রহিম লাল প্রমুখ।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রত্যুষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘স্বাধীনতা চত্ত্বর’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালি, এক মিনিট নীরবতা পালন ও বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়। পাবনা মানসিক হাসপাতালের উদ্যোগে হাসপাতালের পরিচালক মোঃ হেদায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে শোক র্যালী বের করা হয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্নস্থানে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় নানা কর্মসূচিতে।
গৌরনদী (বরিশাল): বরিশালের গৌরনদীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্গন, বঙ্গবন্ধু’র জীবনী নিয়ে রচনা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে শোক র্যালী বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। শেষে উপজেলা বন্দরে দলীয় কার্যালয়ে এ শোক সভা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
শোক সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুন্সী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কালিয়া দমন গুহ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ হারুন, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া মনির হোসেন, সাধারন সম্পাদক কবির হোসেন খান, আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক হোসেন, আবু সায়েদ নান্টু, এনায়েত হোসেন খান, শাহজাহান বেপারী, যুবলীগ নেতা আল আমীন হাওলাদার, ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ, জুবায়ের ইসলাম সান্টু প্রমুখ। বাদ জুম্মা সরকারি গৌরনদী কলেজ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিল, দোযা-মোনাজাত ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া পালরদী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বাটাজোর অশ্বিনী কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাটাজোর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মাহিলাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন অনুরুপ কর্মসুচি পালন করে।
কাউখালী(পিরোজপুর): নানা কর্মসুচির মধ্য দিয়ে শুক্রবার পিরোজপুরের কাউখালীতে জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে সুের্যাদয়ের সাথে সাথে সকল প্রতিষ্ঠানে পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শোক র্যালী, বঙ্গবন্ধুর প্র্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পন, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ,চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন মসজিদ মন্দির ও গীর্জায় প্রার্থনা, বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া, আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানমালা।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্নার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সকাল ৭ টায় মুজিব চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পন করেন আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনের সকাল ৮ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে একটি শোক র্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে মুজিব চত্বরে এসে শেষ হয়।পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলামের সভাপতিতে ¡আলোচনা সভায় প্রদান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না, বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার দেলোয়ার হোসেন,সাবেক সবাপতি অ্যাডভোকেট একেএম আব্দুস শহীদ,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিঠু, সদর ইউপ চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ মিলটন ,গৌতম দাস, অলোক কর্মকার সহ সরকারী-বেসরকারী, স্কুল, কলেজ, এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামে গ্রামে বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত ছাড়াও গনভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
যশোর: যথাযোগ্য মর্যাদা ও শোকাবহ পরিবেশের মধ্য দিয়ে শুক্রবার যশোরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকাল থেকেই যশোর শহরে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সকালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ছাড়াও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন কোরান খতম, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ১৫ আগষ্ট ॥ পটুয়াখালীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শোক র্যালী ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে স্থানীয় সার্কিট হাউজ থেকে একটি শোক র্যালী বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। র্যালী ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জনাব অমিতাভ সরকার। র্যালী ও আলোচনা সভায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ৯ টায় সার্কিট হাউজ চত্ত্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের মানুষ।
খুলনা: মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে পাল্টানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতসহ একটি মৌলবাদি চক্রষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এক লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আজকের বিএনপি একটি অংশ জামায়াতের সাথে থেকে বাঙালী হত্যা আর মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছে। তারা কখনও চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করুক, বাঙালীরা স্বাধীনভাবে গণতন্ত্র চর্চা করুক। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের সাহস আর মনোবল দিয়ে মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে বাঙালীকে স্বাধীনতা এনেদিয়েছিলো।
বাঙলীর এই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র যাতে দেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন এবং স্থায়ী রূপ লাভ করতে না পারে সেজন্যে তারা আজো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ’৭১-এর পরাজয়ের গ্লানি ঘোচাতে না পেরে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার অগ্রযাত্রাকে স্তিমিত করতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জাতির ক্রান্তিকালে দেশের হাল ধরেন। আজ দেশটিকে বিশ্বের দরবারে একটি সম্মানজনক স্থানে দাড় করিয়েছেন। দেশের এই উন্নয়ন তাদের সহ্য হচ্ছেনা। ফলে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় তারা অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছ্।ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শোকের মাসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের জাতীয় শোক দিবসে স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগ উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এমপি, জাতীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হায়দার আলী, কাজী এনায়েত হোসেন, অধ্যাপক ফকির আবু হোসেন, মল্লিক আবিদ হোসেন কবিরসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সকাল ৭টায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, কালো পতাকা উত্তোলণ ও কালো ব্যাজ ধারণ করে সকাল ৭টায় দলীয় কাযালয়ে এবং খুলনা বেতারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। সকাল ৯টায় দলীয় কার্যালয় হতে শোক র্যালী নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
এছাড়া সকাল থেকে নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ডে জুম্মাবাদ মসজিদে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরসহ প্রত্যেক ওয়ার্ড ও ইউনিট কার্যালয়ে কোরান তেলোয়াত ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়।অপরদিকে প্রত্যেক থানা ও উপজেলায় ওয়ার্ডে দরিদ্রদের মাঝে তাবারক বিতরণ করা হয়।এছাড়া অনুরুপ কর্মসূচি পালন করেছে খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এবং ৯টি উপজলা আওয়ামী লীগ।
নাটোর: নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজে শুক্রবার জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান স্থলে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রবেশের সময় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। অনেকে গুলির আওয়াজ শোনার কথাও জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নাটোর সদর থানা সূত্রে জানা যায়, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের মিলনায়তনে শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান ছিল। ১১টার কিছু পর পরই নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী আহাদ আলী সরকার গাড়ি নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এ সময় মিলনায়তনের কাছাকাছি মসজিদের সামনের রাস্তায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বুলবুল হোসেনের সমর্থকদের সাথে প্রতিক্ষ রাকিবুল হাসান ওরফে জেমসের সমর্থকদের প্রথমে হাতাহাতি ও পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কলেজ ছাত্রাবাসের আবাসিক এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় জেমসের গায়ের পাঞ্জাবি ছিড়ে যায় এবং বুলবুলের হাতে আঘাত লাগে। নিরুপায় হয়ে নেতৃবৃন্দ গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত মিলনায়তনের ভেতরে ঢোকেন। বাইরে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দিতে থাকে। এ সময় দুইটি গুলির শব্দ শোনা যায়। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। তবে বিলম্বে হলেও মিলনায়তনে শোক দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ ও বেশকিছু শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বুলবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কলেজে রাজনীতি করে আসছি। অথচ শহরের কিছু কিছু নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে নবাগত কিছু ছেলে কলেজে নেতা হওয়ার জন্য অপতৎপরতা শুরু করেছে। তারাই গন্ডগোল বাধিয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করতে চেয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমার কোন ছেলের হাতে অস্ত্রপাতি ছিল না বা কেউ গুলিও করেনি। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপিপদে ছাত্রলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি রাকিবুল হাসান বলেন, বড় ধরণের কিছু ঘটনা ঘটেনি। আমার ছেলেরা শান্ত ছিল।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন বলেন, কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারও কোন ক্ষতি হয়নি। সংসদ মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুলের মতামত জানার জন্য বার বার তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
নারায়ণগঞ্জ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় শহরের দুই নং রেল গেট এলাকায় আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী, স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ আওয়ামীলীগ ও অংঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একই সময়ে নগরীর চাষাঢ়ায় বিজয় স্তম্ভে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার ড.খন্দকার মহিদ উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের নেতা-কর্মীরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তারা পৃথকভাবে শোকর্যালী বের করেন। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে কোরআন খানি, মিলাদ মাহফিল, রান্না করা খাবার ও গেঞ্জি বিতরণ করা হয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।