ভারী বর্ষণে বিভিন্ন জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী, দূর্ভোগ চরমে
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চট্রগ্রাম, ভোলা,লালমনিরহাট ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণে কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে।এতে মানুষের দূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আমন বীজতলা ও কাঁচা পাকা আউশ ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবং দ্রুত পানি সরে না গেলে আমন বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা রয়েছে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
মিরসরাই: মিরসরাইয়ে গত দুইদিনের (বুধবারও বৃহস্পতিবার) ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার উপজেলার প্রায় ৯৭০ হেক্টর আমন বীজতলা ও প্রায় ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর কাঁচা পাকা আউশ ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবং দ্রুত পানি সরে না গেলে আমন বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। মিরসরাই পৌরসভার প্রায় ৩ সহস্রাধিক বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে গেছে গ্রামগঞ্জের প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামীণ সড়ক লন্ডবন্ড হয়ে গেছে এবং অর্ধ শতাধিক মৎস্য পুকুর, পল্লী বিদ্যুতের মিঠাছড়া সাব-ষ্টেশন পানিতে ডুবে যায়।
জানা গেছে, গত বুধবার দিনরাত টানা বৃষ্টি ও বৃহস্পতিবার থেমে থেমে প্রবল বর্ষণের কারণে উপজেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। মিরসরাই উপজেলা সদরে পয়ঃনিষ্কাশন সুব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রায় অর্ধ শতাধিক দোকানে বৃষ্টির পানি ঢুকে মালপত্র নষ্ট হয়ে যায়। পানিতে তলিয়ে যায় সদরের সবকয়েটি সড়ক। ভারিবর্ষণের ফলে উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার সাদেক আলী ভূঁইয়া সড়কে একটি কালভার্ট পানির তোড়ে ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে এবং ইউনিয়নের ছত্তরুয়া, দক্ষিণ অলিনগর, ভালুকিয়া, পশ্চিম জোয়ার এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যায় সদরের বেশ কয়েকয়টি সড়ক।
এছাড়াও ভারিবর্ষণের ফলে উপজেলার করেরহাট, ওসমানপুর, সাহেরখালী, ওয়াহেদপুর, খৈয়াছড়া, আমবাড়িয়া, মিরসরাই সদর, দুর্গাপুর, ইছাখালী, বামনসুন্দর, এলাকায় সড়ক ও ফসলী জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের নিজামপুর রেল ষ্টেশন সড়ক, হাবীব উল্ল্যাহ ভূঁঁইয়া সড়ক পাহাড়ী ঢলে ভেঙ্গে গেছে বলে জানান ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম। উপজেলার ওসমানপুর, সাহেরখালী, ওয়াহেদপুর, খৈয়াছড়া, মিরসরাই সদর, দুর্গাপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, মঘাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও ফসলী জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিরসরাই সদর ইউনিয়নের সুুফিয়া রোড় এলাকায় অবস্থিত আল মদীনা বেকারীতে পাহাড়ী ঢলের পানি ডুকে পড়ে কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীও খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করার মেশিন নষ্ট হয়ে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বেকারী মালিকও ইছাখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। মিরসরাই পৌরসদরের ফারুকীয়া মদীনাতুল উলুম ক্যাডেট মাদ্রাসা শ্রেণী কক্ষে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শ্রেণী কার্য্যক্রম বন্ধ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মজহারুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড় ভবনে পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবেশ করে ভবন ধ্বসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এতে করে স্কুলের শ্রেণী কার্য্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ চৌধুরী।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মিরসরাই পৌরসভায়। পৌরসভার প্রায় ৩ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে আছে।বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতিও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. গিয়াস উদ্দিন,মিরসরাই পৌরসভার মেয়র এম শাহজাহানসহ পৌর কাউন্সিলরবৃন্দ। পৌর সদরের আবাসিক ভবনগুলোর নিচতলায় কোমর পরিমাণ পানি প্রবেশ করে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচাঘরের বাসিন্দাদের রান্না ঘরের চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। পৌরসভার উত্তর আমবাড়িয়া, নোয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, পূর্ব গোভানীয়া, গোভনীয়া, দক্ষিণ আমবাড়িয়া, পূর্ব মিরসরাই, পশ্চিম মিরসরাই, মধ্যম মঘাদিয়া, তালবাড়িয়া, ফেনাফুনী এলাকার প্রায় ৩ সহস্রাধিক বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
মিরসরাই পৌরসভার মেয়র এম শাহজাহান জানান, মিরসরাই পৌরসভার ৩ হাজার ৪০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৩ কোটি টাকার মাছও ফসল পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে। মিরসরাই-নোয়াপাড়া সড়কের ৩ টি স্থানে, শহীদ মোস্তফা সড়কের ২ টি স্থানে ভেঙ্গে গেছে এবং চাঁদপুর গোভনীয়া সড়ক, গোভনীয়া সড়ক, রামমন্ডল সড়ক, আব্দুল লতিফ শিকদার সড়কও আব্দুল লতিফ সড়কের উপর দিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে যানবাহনও মানুষ চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক মেরামতে প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন গোভনীয়া ছড়া সংস্কার না হওয়ার ফলে পাহাড়ী পানির তোড়ে ছড়ার নোয়াপাড়ার ২ টি অংশে, পূর্ব গোভনীয়ার ২ টি অংশে, পূর্ব মিরসরাই’র ২ টি অংশেও গোভনীয়ার ২টি অংশে ভেঙ্গে পৌর বাসিন্দাদের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এবিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, উপজেলার প্রায় ৯৭০ হেক্টর আমন বীজতলাও প্রায় ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর আউশ ধান বন্যার পানিতে নিনজ্জিত হয়ে আছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবং দ্রুত পানি সরে না গেলে আমন বীজতলার বেশি ক্ষতি হতে পারে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে উপজেলার মিঠাছরা এলাকার সাব-ষ্টেশনে পানি উঠে যায়।ফলে উপজেলার বিভিন্ন ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম: মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃহষ্পতিবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। এদিকে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রামে ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহওয়া অধিদপ্তর।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুল হামিদ জানান, শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি সারাদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাকে মাঝারি বৃষ্টিপাত বলা যায়, কিন্তু অনেক স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
নগরীতে টানা বৃষ্টিপাতে জলজট দেখা দিয়েছে মুরাদপুর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা,দেশের বৃহৎ ভোগপণ্যের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। তবে, রাতে পানির পরিমাণ অনেক বেশী থাকলেও সকাল থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানান এসব এলাকার বাসিন্দারা। বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল তানিম জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দারা জোয়ারের পানির কারণে ভোগান্তি পোহচ্ছেন। টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলজট দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাংশ হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপাসগর পর্যন্ত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর কারণে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারী ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসের গতি ও দিক দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লালমনিরহাট: সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণে লালমনিরহাটে তিস্তা, সানিয়াজান, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সতী নদীর পানি শুক্রবার ভোর থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশের সর্ব বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ’র অধিকাংশ গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে দেশের বহুল আলোচিত আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহলসহ গোটা জেলার ২২ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা দোয়ানী-ডালিয়া’র প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রকৌশলী হাফিজুর ইসলাম জানান, ভারত থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধুয়ে আসছে। এতে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বিপদ সীমার ২৭ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
ফলে ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে অসংখ্য গ্রামের মানুষজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। র্যারাজ রক্ষার্থে বাইপাসের আশ পাশে বসত বাড়ি’র লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। পানির গতি বেড়ে গেলে বাইপাস কেটে দেয়া হবে। ওই বাইপাস কেটে দেয়া হলে গোটা লালমনিরহাট জেলা পানি বন্দি হয়ে পড়বে। তিনি জানান, ভারতে বন্যা দেখা দিয়েছে। পাশা-পাশি কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে যে কোন মুহুত্বে তিস্তা’র পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এ দিকে তিস্তার পানি সানিয়াজান, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সতী নদীতে প্রবেশ করায় ওই সব নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলোর হাজার হাজার বসত বাড়িও পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
সুত্র মতে,জেলার পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহল, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্চ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছা ও গোকুন্ড ইউনিয়নের ২২ গ্রামের অন্তত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তিস্তা ব্যরাজের ভাটিতে হাতীবান্ধা উপজেলা ৬ টি ইউনিয়নের।
ফেনী: টানা বর্ষন ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর বেড়ী বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙ্গন স্থানের পাশে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সামনের ফেনী-পরশুরাম সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় গ্রামবাসি জানায়, টানা কয়েক দিনের বর্ষন ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে মুহুরী নদীর বেড়ী বাঁধের ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর ও দৌলতপুর গ্রামের দু’টি স্থানে এবং কহুয়া নদীর বৈরাগপুর একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিন শ্রীপুর, নিলক্ষী, দেড়পাড়া, বাসুরা, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিন দৌলতপুর, বিজয়পুর, বসন্তপুর, ঘোষাইপুর, বরইয়া, বৈরাগপুর, কমুয়া, বালুয়া, চানপর গ্রাম পানিতে প্লবিত হয়েছে। এতে গ্রামীন সড়ক সমুহ পানিতে তলীয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সদ্য মাঠে লাগানো আমন ফসল পানিতে তলীয়ে গেছে।
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ জানান, থানার সমানে প্রায় দুই ফুট পানি। পুরানো ভবনের মেঝেতে পানি ঢুকে গেছে। এক থেকে দেড় ইঞ্চি পানি বাড়লে নতুন থানা ভবনেও পানি ঢুকতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহিদুর রহমান জানান, মুহুরী নদীর বেড়ী বাঁধের দু’টি স্থানে এবং কহুয়া নদীর একটি স্থানে ভাঙ্গনের ফলে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সামনে ফেনী-পরশুরাম সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকেীশলী মো. রমজান আলী প্রামানিক মুহুরী নদী ও কুহুয়া নদীর বেড়ী বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙ্গনের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টেমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে ও ভারতীয় উজানের পানি কমে গেলে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে-তখন ভাঙ্গন স্থান সমুহ মেরামত করা যাবে।
ভোলা: টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে বাঁধের ভেতর ও বাইরের অংশসহ ভোলার বিভিন্ন এলাকার নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। অন্যদিকে অতি বৃষ্টির কারণে ফসলি জমি ক্ষতির আশঙ্কার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে আরো ২/৩ দিন ধরে এ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, টানা বর্ষণে ভোলার জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হচ্ছে পারছে না খেটে খাওয়া মানুষজন। দিন মজুরেরা কাজে যেতে পারছেনা। মাঠে কাজ করতে পারছেনা কৃষক।
বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা ছাড়া দিনভর কখনও হালকা, কখনও মাঝারি আবার কখনও ভারী বর্ষণ হয়।
শুক্রবার ভোর থেকেই এ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে জনজীবনে নেমে এসেছে দুভোর্গ। বিশেষ করে উপকূলের বাঁধে আশ্রিত মানুষ জোয়ার আর বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানিতে জেলার তিনটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। একই সঙ্গে টানা বর্ষণে নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়। শুক্রবারও ঢালু অনেক স্থানে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের ভেতর ও বাইরের বেশ কিছু জায়গাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে শিকার হয়ে পড়েছেন নদী তীরবাসী এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, মাঝের চর, রামদাসপুর,চর পাতিলা,চর নিজাম, চর জহির উদ্দিন,মেদুয়া, নেয়ামতপুর, মদনপুর, হাজিপুর, দক্ষিণ সাকুচিয়া, চর কুকরী-মুকরীসহ বেশকিছু নিচু এলাকায় পানিতে তলিয়ে আছে রাস্তা-ঘাট, ভিটেমাটি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গত কয়েক দিনের মতো পানিবন্দি হয়ে শুত্রবারও দুভোর্গ দিন কাটাচ্ছেন বানবাসী এসব মানুষ।
ভোলা আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। আরো দু’দিন এ বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম জানান, বৃহস্পতিবার মেঘনার পানি উচ্চতা বিপদসীমার ৩ দশমিক ৭২মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভোলা থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ।
এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ভোলার অভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লার সব রুটে ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরনের লঞ্চ ও ছোট ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার আদেশ জারি করে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।দুরপাল্লার রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোলা-বরিশাল, বোরাহনউদ্দিন-বরিশাল, লালমোহন-কালাইয়া, ভেলুমিয়া-ধূলিয়া, দৌলতখান আলেক জেন্ডার, ভোলা-রামগতি ও ভোলা-লক্ষীপুর।
অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে চরফ্যাশন-মনপুরা-ঢালচর-কুকরী-মুকরী, তজুমদ্দিন-চর জহিরউদ্দিন-মনপুরা, বোরহানউদ্দিন-মলংচড়া-চরজহিরউদ্দিন-তজুমদ্দিন, দৌলতখান-হাজিপুর, ভোলা-মাঝেরচর-মেদুয়া-রামদাসপুরসহ অন্তত ২২টি রুট।
এদিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে করে যাতে লঞ্চ ও ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচল করতে না পারে সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য গঠন করা হয়েছে বেশ কিছু মোবাইল টিম। ভোলা বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বরত কর্মকর্তা (ট্রাফিক) মো. নাসিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ২ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারী: তিস্তা অববাহিকায় কয়েকদিনের বর্ষনের সাথে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হুহু করে বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর তিস্তার পানি নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং তিস্তাপাড়ের চরগ্রামগুলোর সহস্রাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে খুলে দেযা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুুইস গেট।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনে অবস্থিত বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৩টায় তা বিপদসীমার ( ৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত থাকে। যা তিনঘন্টার ব্যবধানে ৬টায় ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চরগ্রাম চরখড়িবাড়ি, উল্টর খড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানি, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার গ্রামগুলোর সহ¯্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ঘরবাড়িতে কোমড় পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার নৌকা যোগে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে।