রেকর্ডবুকে হেরাথ
শ্রীলংকান ক্রিকেটে কখনো স্পিনারদের সংকট থাকেনি। উপল চন্দনা থেকে হেরাথ পর্যন্ত সময়টাতে তো আরো নয়। ৯০’র দশকের জাত লেগ স্পিনার ছিলেন চন্দনা। এর পরের গল্পের নায়ক মুরালিধরনের কথাতো কারোই অজানা নয়। দুসরা দিয়ে ব্যাটসম্যানকে কাবু বানানোর ওস্তাদি দেখেছেন টেস্ট প্লেয়িং সব দেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান থেকে লোয়ার অর্ডার পর্যন্ত। মুরালি অধ্যায় শেষ হবার দু’বছর আগে দলে নিয়মিত হন রঙ্গনা হেরাথ। তার আগে অবশ্য অজন্তা মেন্ডিসও মুরালির সাথে কম যাননি। মিলেমিশে গুটিয়েছেন প্রতিপক্ষের ইনিংস।
মুরালির অবসরের সময় শ্রীলংকান ক্রিকেটে এসেছিল কিছুটা চিন্তার ভাজ। বল হাতে ফর্মে ছিলেন না মেন্ডিস। মুরালির মতো করে কে তুলবে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উইকেট! তবে সেভাবে আশ্চর্য হবার মতো তেমন কিছু ঘটেনি শ্রীলংকান স্পিন বোলিং ডিপার্টমেন্টে। মুরালির ছাঁয়ায় যেন ঢাকা ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। নিজের জাত বার বার চেনালেও কেন জানি তার উপর পুরোপুরি নির্ভরে থাকতে একটু উদাসীনই ছিল লংকান ক্রিকেট। তবে এ বছরটাতে হেরাথের পারফরম্যান্স তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
তিনি কত বড় জাত বোলার তার প্রমাণ মিললো কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব(এসএসসি) মাঠে।পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে শনিবার দুপুরে সাঈদ আজমলকে আউট করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তিনি। পাশাপাশি স্থান করে নেন এক ইনিংসে ৯ উইকেট শিকারকারীদের তালিকায়। একে একে তিনি তার শিকারে পরিণত করেন খুররম মনজুর, আজহার আলী, ইউনুস খান, মিসবাহ-উল-হক, আসাদ শফিক, শরফরাজ আহমেদ, আব্দুর রেহমান, ওয়াহাব রিয়াজ ও সাঈদ আজমলকে। অন্য উইকেটটি নেন দিলরুয়ান পেরেরা।
এত বড় অর্জনের পরও হেরাথের মনে একটা আফসোস থেকে যেতে পারে। আফসোসটা প্রতিপক্ষের কোনো ব্যাটসম্যানের ওপর নয় বরং সতীর্থ দিলরুয়ান পেরেরার ওপর। কী দরকার ছিল আহমেদ শেহজাদের উইকেটটা নেওয়ার! পেরেরা উইকেটটা না নিলে এক ইনিংসে ১০ উইকেট হতে পারতো তাঁর। সেটি হলে নাম উঠে যেতো জিম লেকার ও অনিল কুম্বলের পাশে।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার তাঁর। হেরাথ ভেঙেছেন ১২৫ বছরের পুরনো এক রেকর্ড। ১৮৮৯ সালে ইংলিশ বাঁ-হাতি স্পিনার জনি ব্রিগস কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিয়েছিলেন ১১ রানে ৮ উইকেট। ১২৫ বছর পর ব্রিগসকে ছাপিয়ে গেলেন এ লঙ্কান স্পিনার।
এসএসসিতে এক ইনিংসে এটিই সেরা বোলিং ফিগার। এর আগের রেকর্ডটি ছিল মুত্তিয়া মুরালিধরনের দখলে। ২০০১ সালে এ মাঠে ভারতের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৮৭ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান স্পিনার কিংবদন্তি। আরও একটি রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে হেরাথের সামনে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তিন ইনিংসে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। আর ৪ উইকেট নিতে পারলে ছুঁয়ে ফেলবেন মুরালির ২২ উইকেটের রেকর্ড । চলতি বছর প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেরাথ। এ বছর তার উইকেট সংখ্যা ৫১ তে দাঁড়ালো।
এমন রেকর্ড (ইনিংসে ৯ উইকেট) কাকে উৎসর্গ করবেন হেরাথ? টেস্টের ফল হাতেই হয়তো নিজেই সে ঘোষনা দেবেন। মাহেলা জয়বর্ধনের জন্যে সেটা উৎসর্গ করা হলে মন্দ হতো না।