আজ কলঙ্কজনক ১৭ আগস্ট
আজ কলঙ্কজনক ১৭ আগস্ট। ২০০৪ সালের এদিনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি দেশের ৬৩টি জেলায় সাড়ে ৪শ’ স্পটে একযোগে প্রায় ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এর পর থেকে কয়েক মাসে জঙ্গীদের ধারাবাহিক নারকীয় বোমা হামলায় বিচারক আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন প্রাণ হারান। আহত হন চার শতাধিক।
জঙ্গীরা বিভিন্ন সময়ে দেশের আদালত প্রাঙ্গণ, বিমান বন্দর, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাড়ে চার শতাধিক পয়েন্টে একযোগে বোমা হামলা চালায়। বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সারাদেশ। রাজধানীর ৩৪টি পয়েন্টে ও জেলা শহরগুলোতে বারুদের গন্ধে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বোমা হামলার পরপরেই বিভিন্ন স্পটে এবং বোমা বিস্ফোরিত স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হয় জেএমবি’র লিফলেট।
এই হামলার ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি আদালতে আত্মঘাতি বোমা হামলায় বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল রহমান নিহত হন। ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এই বোমা হামলায় ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন।
২৯ নভেম্বর গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আবারও বোমা হামলায় ১১ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। একই দিন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এক আত্মঘাতি, জঙ্গি ও দুই পুলিশ নিহত হন। ১ ডিসেম্বর গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আবারো বোমা হামলায় নিহত হন ১ জন, আহত হন ৫ জন।
২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলায় কর্মরত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু সুফিয়ান জেএমবির বই বোমা হামলার শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে যান। বর্তমানে তিনি অন্য একটি জেলার জেলা জজের দায়িত্ব পালন করছেন। সেদিন এজলাস চলার সময় একজন সাক্ষী কাঠগড়ায় উঠার পূর্ব মুহূর্তে জেএমবির’ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে বই বোমা ছুঁড়ে মারে।
সেই দিনের এই হামলা সম্পর্কে আবু সুফিয়ান বলেন, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর সেই সময়ের সরকারের অবহেলা ও গোয়েন্দা বিভাগের অযোগ্যতার কারণে হামলাকারীরা দ্বিতীয় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহারকারী বিপদগামী জঙ্গিরা বিচারক হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের কথিত তাগুদি আইনের ধোঁয়া তুলে প্রকাশ্যে বিচারকের লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে মারে, তখন মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ার কারণে ইসলাম নাম ব্যবহারকারীর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের পথ সঠিক নয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর সরকার কিংবা বিচার বিভাগ তাকে কোন সহানুভূতি কিংবা সহযোগিতা করেনি। কোন নিরাপত্তাও দেয়া হয়নি, যা ছিল হতাশাজনক।
র্যাবের মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, ২০০৫ সালের সারাদেশে সিরিজ বোমা হামরার ঘটনায় জেএমবির ৬৭০জন সদস্যকে আসামী করে মোট ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১০২টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে।
এতে ২৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ এই রায় প্রদান করা হলে শাইখ আবদুর রহমান এবং বাংলা ভাইসহ ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
বোমা হামলার অভিযোগে শায়েখ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ জেএমবি’র ৬ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৮ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য জড়িত থাকার কথা বলা হলেও জঙ্গিদের সহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছিলেন বিএনপি নেতারা।
এছাড়াও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বোমা হামলার আগে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি’র নেতা বাংলা ভাই এবং শায়েখ আবদুর রহমানকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বিকাল ৪ টায় বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য রাখবেন।