কৃষি মন্ত্রীর এলাকায় কোন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নেই
মুহাম্মদ হযরত আলী: শেরপুর-২ নির্বাচনী এলাকায়(নকলা,নালিতাবাড়ী) হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ে কোন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। নকলা উপজেলা সদরের জন গুরুত্বপূর্ন স্থানে দুটি ডিগ্রী কলেজ থাকলেও কোন কলেজেই অনার্স কোর্স চালু নেই। দুটি উপজেলার বিপুল জন গোষ্ঠী হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এলাকার বিত্তশালী লোকেরা মোটা টাকা খরচ করে শেরপুর জেলা শহর ও পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ শহরের নামী দামী স্কুল কলেজে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করালেও মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এ সুযোগ পাচ্ছেনা। সন্তানদের লেখা পড়া করানোর জন্য ভাল কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীগন পরিবার নিয়ে শেরপুর অথবা ময়মনসিংহ শহরে বসবাস করেন এবং সেখান থেকে এসেই অফিস করেন। এতে করে সরকারের অনেক কাজেও ব্যঘাত ঘটে।
নকলা উপজেলায় ২৬টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,১৬টি দাখিল মাদরাসা,১টি আলিম মাদরাসা,২টি ফাযিল মাদরাসা,৩টি বেসরকারী ডিগ্রি কলেজ ও ২টি বি.এম. কলেজ রয়েছে।বিগত এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় নকলা উপজেলার ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৯টি মাদরাসা থেকে ২হাজার ২শ ৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২হাজার ৩৫ জন উর্ত্তীণ হয়।এতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ৮৯ জন। অপর দিকে সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৩ টি কলেজ ও ৩ টি মাদরাসা থেকে ১ হাজার ১শ ৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ৯শ ৯২ জন উর্ত্তীন হয়। এতে মানবিক বিভাগে ৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেলেও বিজ্ঞান বিভাগের কোন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পায়নি।
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত নকলা,নালিতাবাড়ী উপজেলা দুটি সীমান্তবর্তী উপজেলা হিসেবে খুবই জন গুরুত্বপূর্ণ।যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুটি উপজেলায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই পশ্চাদপদ। এ নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীল লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান অবদি তিনিই এ এলাকার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১এর ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ও এ আসনের এমপি আলহাজ্ব জাহেদ আলী চৌধুরী জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বে ছিলেন। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের পুরো আমলই এ আসনের এমপি অধ্যাপক আব্দুস ছালাম বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। এক কথায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারেরর আমলেই নকলা,নালিতাবাড়ীর জনগন মন্ত্রীত্বের সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও স্বাধীনতার পর সুদীর্ঘ প্রায় চুয়াল্লিশ বছরেও নকলা-নালিতাবাড়ী উপজেলায় কোন হাইস্কুল ও কলেজ সরকারী করন করা হয়নি। যা দুটি উপজেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বলে এলাকার শিক্ষাবিদরা মনে করেন।
নকলা উপজেলা সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত নকলা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালে ও হাজী জালমামুদ ডিগ্রি কলেজটি স্থাপিত হয় ১৯৭২ সালে। এ প্রতিষ্ঠান দুটি নকলা উপজেলা সদরে অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান।তাছাড়া নকলা সদরে অবস্থিত নকলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ। এ ৪ টি প্রতিষ্ঠানেই নান্দনিক একাডেমীক ভবন, সুপরিসর খেলার মাঠ ও সীমানা প্রাচীর সহ সুন্দর অবকাঠামো রয়েছে। এ ব্যাপারে হাজী জালমামুদ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুসফিকুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমাদের কলেজে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এটি সরকারী করন করা হলে সরকারের কোন অতিরিক্ত ব্যয়ভার তো বহন করতে হবেইনা বরং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানও একই মত প্রকাশ করেছেন।