তবে কি শেষ দেখে ফেলেছেন ধোনি?
ভারতের অন্যতম প্রতিপক্ষ এখন ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটকে নির্দিষ্ট করে বললে ভারতীয়দের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ইংলিশরা। ভারতকে বধ করে বারবারই টেস্টে ইংল্যান্ডের রাজত্ব কায়েমের ঘর মজবুত করে চলেছে কুক, ব্রড, এন্ডারসনরা। ভারতের বিপক্ষে বিগত পাঁচ বছরে সবচেয়ে সফল দল ইংল্যান্ড। নিজ মাটিতে কিংবা ভারতে; দু’জায়গাতেই দারুন সফল অ্যালিস্টার কুকের টেস্ট দলটি।
২০১১ সালে নিজ মাটিতে ভারতকে ৪-০ তে ধবলধোলাই করে ইংলিশরা। পরের বছরই ভারত সফরে আসে ইংল্যান্ড। প্রতিশোধের অপেক্ষায় মহাপ্লাবনে ডুবছিল পুরো ভারত। সেই তেজ অবশ্য মাঠের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রতিশোধ তো দূরে থাক। ভারত নিজেদের মাটিতে সেবার সিরিজ হারে ২-১ এ। তারপরই ‘ধোনি হটাও’ বাক্যে সুর মিলিয়েছিলেন সাবেক ক্রিকেটাররা। সুনিল গাভাস্কার, কপিল দেব থেকে শুরু করে অনেক ক্রিকেট পন্ডিতই ধোনিকে ভারতীয় দলে দেখতে চাননি। তবে সেই দু:সময় দ্রতই কাটিয়ে ওঠেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ খ্যাত মাহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০১১ সালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে থেকে ভারতকে উপহার দেন বিশ্বকাপ ট্রফি। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জিতে ক্রিকেট পাগল ভারতীয়দের কাছে ‘দেবতা’ রুপ ধারন করেন ধোনি। সমালোচকদের জবাবটা দারুনভাবেই দেন। সব সমালোচনার ইতি হয় এক বিশ্বকাপ ট্রফিতে।
মাঝে তিন বছর বিরতির পর ‘ধোনি হটাও’ বাক্য আবারো ফিরে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেটে। এবার ইংল্যান্ডের সাথে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ (ইনভেস্টেক সিরিজ) ৩-১ এ হেরে যাওয়ায় পুরনো খড়গ আবার ভর করেছে ধোনির উপর। ধোনির ভারত প্রথমটিতে (লর্ডসে) জিতে বা-হ-বা কুড়ালেও শেষ পর্যন্ত পরপর তিন ম্যাচ শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ায় ভারতীয় মিডিয়ায় কথা উঠছে ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে। তাকে (ধোনি) নিয়ে সমালোচনার জল বহুদূর গড়াবে এটা হয়তো ঠিকই আঁচ করে করে ফেলেছেন ক্যাপ্টেন কুল!
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে ইনিংস ও ২৪৪ রানে হেরে ৩-১ এ সিরিজ হাতছাড়া হবার পর ম্যাচ শেষে সাংবাদিকরা ধোনির থেকে জানতে চান আগামি দিনেও তিনি কি ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিবেন কিনা। এর উত্তরে ধোনি বলেন, ‘আমি জানি না আদৌ আমার সেই শক্তি থাকবে কি না। আপনারা অপেক্ষা করুন। খবর পেয়ে যাবেন।’
বিদেশের মাটিতে অধিনায়ক ধোনির হারের বৃত্ত আঁকা শুরু হয় ২০১০ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হার দিয়ে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা,ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। এরপর নিউজিল্যান্ড, তারপর ফের দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে এবার ফের ইংল্যান্ডে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় দলের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়তে চলেছেন । এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তার কথাবার্তায়। অনেকে মনে করছেন, সম্ভবত ধোনি আর অধিনায়কত্বের চাপ সামলাতে পারছেন না।
সমালোচনার তীর ধোনির দিকে ছুড়ে দিলেও বাজে পারফরম্যান্সের কারন ঠিকই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ওভাল টেস্টে ভরাডুবির জন্য দলের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদেরই দায়ী করেছেন। পাশাপাশি দলের তরুণ ক্রিকেটারদের অনভিজ্ঞতাও হারার জন্য বড় কারণ বলে মনে করেন ভারতীয় কাপ্তান। ধোনি জানান,‘সিরিজের শুরু থেকেই দলের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা চাপ নিতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেটে চাপ নিয়েই স্কোর করতে হবে। ওদের ব্যাট থেকে ১৫০-৬০ রান এসেছে। এত কম রান করলে কখনই ‘হোম’ টিমের বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক অধিনায়কত্ব আর ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে দারুন চাপ সঙ্গী করে শুরু করেছিলেন ভারতের সাথে হোম সিরিজ। ভারত সিরিজ শুরুর আগে শ্রীলংকার সাথে ১-০ তে সিরিজ হারায় কুকের সমালোচনায় মুখর ছিল মাইকেল আথারটন, মাইকেল ভন, জিওফ বয়কটরা। ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে তিন যুগ পর টেস্ট হারায় সেই সমালোচনা ডালপালা মেলছিল। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে নিয়মিত রানের ধারায় ফিরে এবং দলকে সিরিজ জিতিয়ে সব সমালোচনার ইতি টানতে বাধ্য করেছেন অ্যালিস্টার কুক। তাতে কুক অবশ্য ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন। ভাগ্যিস, অফ ফর্মে তার অধিনায়ত্ব কেড়ে নেয়া হয়নি। ধোনিকেও কী এমন একটা সুযোগ দিয়ে দেখবে বিসিসিআই?