সাংবাদিকদের ‘অশ্লীল’ হুমকি দিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী
এবার সংবাদিকদের ‘অশ্লীল’ হুমকি দিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী।
গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে মৌলভীবাজার জেলা শহরের শ্রীশ্রী নতুন কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে সংকীর্তন শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অশালীন ভাষায় এই হুমকি দেন।
সৈয়দ মহসীন আলী বলেন, যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁদের প্রতি আমার বীতশ্রদ্ধা নাই। তাঁদের আমার সমালোচনা নাই। সমালোচনা ওদের, যারা পয়সা নিয়ে সাংবাদিকতা করে। আমি ঘৃণা জানাই এবং তাঁদেরকেই বলি, আসেন, সৎ উদ্দেশ্যে সাংবাদিকতা করেন। দেশের জন্য, উন্নয়নের জন্য করেন। সমালোচনার জন্য সমালোচনা করলে আপনাদের ভালো হবে না। আপনাদের মানুষ খুব ভালোবাসে না।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমি পারি, ওই যে…সাংবাদিক, সিলেটের সাংবাদিক যারা আমার … ঢুকাতে চায়, তাদেরকে যেকোনো … করি দিতে পারি। কিন্তু তা আমি করি না। আমি বলব, আসুন, আমার সাথে বসুন। আপনারা অন্যায় টিপ্পনি কাটবেন আর আমি সহ্য করব, আমি সেই মন্ত্রী নই।
সৈয়দ মহসীন আলী বলেন, কিছু সংখ্যক সাংবাদিক যারা, সবাই এক নয়। আব্দুস সালামসহ সব সাংবাদিকের প্রতি আমার সমালোচনা নেই। সমালোচনা হলো যারা পয়সা দিয়ে সাংবাদিক। তাদেরকে বলি দেশের জন্য সাংবাদিকতা করেন, দেশের মানুষের জন্য সাংবাদিকতা করেন। আমি বলবো আসুন, আমার সঙ্গে বসুন।
এসময় তিনি বেশ শাসিয়ে বলেন, আপনারা অন্যায় করবেন, আর সহ্য করবো আমি মহসীন আলী?
মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা লেখার জন্য সাংবাদিকতার লাইসেন্স পাইছেন। কিন্তু লেখার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন ছিল তা আপনাদের নাই।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছেন। সরকারও তাদের সহযোগিতা করছে।
এর আগে রোববার সকালে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার জয়পুরে শ্রীশ্রী শচী অঙ্গন জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মন্ত্রী নিজেকে জ্ঞানী-গুনী দাবি করে বলেন, আমি একজন জ্ঞানী-গুণী এবং মন্ত্রী হিসেবে পদার্পণ করেছি যখন, এ মাটি অটোমেটিক্যালি পবিত্র হবে এবং এখানে যাই চাইবে তাই হবে।
এসময় মন্ত্রী তার পদার্পণের ফলে শুভকর কী কী ঘটে তা বর্ণনার পর শ্রীকৃষ্ণের আত্মা কোথায় আছে তার বর্ণনা করেন। শেষে গেয়ে ওঠেন মান্নাদের বিখ্যাত গান- ‘হৃদয়ে লেখ নাম সে নাম রয়ে যাবে।’
এরপর মন্ত্রী বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আত্মা সমাবেশের আশপাশে আছে, তিনি আশীর্বাদ দিচ্ছেন। আমি সৈয়দ বংশের ছেলে হিসেবে বলছি, আপনাদের কোনো স্বপ্ন বৃথা যাবে না।
এরপরই মন্ত্রী আবারো গাইতে শুরু করেন, ‘গভীর হয় যে গো, যেখানে ভালোবাসা/ মুখে তো সেখানে থাকে না কোনো ভাষা/ কেউ কি বলেছিল, শ্যামকে ভালোবেসে/ রাধার ভালোবাসা, কাহিনী হয়ে যাবে/ হৃদয়ে লেখ নাম, সে নাম রয়ে যাবে…।’
এর আগে গত ৯ আগস্ট সাংবাদিকদের চরিত্রহীন বলে পেছনে লোক লেলিয়ে দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। সেদিন সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনায় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবকটা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখে নেবো তোমরা (সাংবাদিকেরা) কতটুকু যেতে পারো!’
তার এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। এ সময় তারা মন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন। সৈয়দ মহসিন আলী তখন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না।’
এরপরই দেশের আপামর সাংবাদিকসমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণসহ গ্রেপ্তারের দাবিও জানায় সাংবাদিক নেতারা। পরবর্তীতে নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
এরপর গত ১১ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে তার মন্তব্যের জন্য সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেসময় প্রধানমন্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে নিয়ে এত লেখালেখি কেন? কী হলো আপনার? মঞ্চে সিগারেট খেলেন, পত্রিকায় আসলো। এরপর সিগারেট ছেড়েও দিলেন। এগুলো তো আপনার জন্য ভালো।
উত্তরে মহসিন আলী বলেন, স্থানীয় দু’একজন সাংবাদিক আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন কথা বলে, আমি উত্তেজিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, খবিশ, রাবিশ কাছাকাছি শব্দ। এভাবে খবিশ বলা কোথায় পেলেন?
মহসিন আলী তাৎক্ষণাৎ জবাব দেন- খবিশ, রাবিশ এক জায়গা থেকেই এসেছে কি না- তাই।
এর আগে গত ২২ জুলাই নিজ মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানেও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেছিলেন, এমন আইন করা হচ্ছে যে তাদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।