খুলনায় ৭ ভুয়া চিকিৎসক আটক
খুলনায় র্যাব-৬ এর সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ৭ জন ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা অভিযানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- গাউসুল আযম, ফেরদৌস রহমান, সৌমেন মিত্র, ইব্রাহিম বাহাদুর, কান্তি লাল, পঞ্চানন মহলী ও অনুপ মিত্র।
সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে নগরীর শেরে বাংলা রোডে সেবা ক্লিনিকের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এনামুল আরিফ সুমন জানান, এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখার সময় ৭ জন ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ সারাদেশে তাদের মতো আড়াই শতাধিক ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছে। স্থান পরিবর্তন করে এবং কৌশলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলে এই সব ভুয়া চিকিৎসকরা। নামের পাশে নানা রকম ভুয়া ডিগ্রিও ব্যবহার করছিলেন তারা।
র্যাব জানায়, মীম নার্সিং হোমের ভুয়া চিকিৎসক ফেরদাউস রহমানকে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। খুলনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুয়া চিকিৎসক পঞ্চানন মহলী ও সেবা ক্লিনিকের ভুয়া চিকিৎসক অনুপ মিত্রকে ২ বছর করে কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল ডেন্টাল ক্লিনিকের ভুয়া ডাক্তার গাউসুল আজম, এএন ডেন্টাল কেয়ারের ভুয়া ডাক্তার সৌমেন ও রংধুন ক্লিনিকের ভুয়া ডাক্তার ইব্রাহিম বাহাদুরকে ৯ মাস করে কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া প্রাইভেট প্রাকটিস করা ভুয়া চিকিৎসক ডা. কান্তিলাল বৃদ্ধ হওয়ায় তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক আরও জানান, অধিকাংশ ভুয়া চিকিৎসকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তারও নিচে। দিনের পর দিন তারা প্রতারণা করে ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন রোগীদের। গ্রেফতারকৃত ৩/৪ জন বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া না করেও এমবিবিএস বনে গেছেন। এসব ভুয়া ডাক্তারের স্বার্থ রক্ষায় একটি সংগঠনও রয়েছে বলে জানান র্যাব-৬ এর অধিনায়ক।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে ঢাকায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে পিচ-ব্লেন্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে সার্টিফিকেট বিক্রির কার্যক্রম চালায় প্রতিষ্ঠানটি। খুলনার ভুয়া চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন সেখান থেকে সার্টিফিকেট কিনেছেন।
র্যাবের অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেফতারকৃত ভুয়া চিকিৎসকরা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না ভেবেই রোগীদের উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিকসহ ৫ ধরনের ওষুধ লিখে দিতেন। যা রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
র্যাব জানায়, নগরীর ৩১০ নম্বর খানজাহান আলী রোডে ভুয়া চিকিৎসক জি এম মৃধাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হলেও তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
মোবাইল কোর্টটি পরিচালনা করেন র্যাব-৬ এর ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা। অভিযানের সময় র্যাব-৬ এর উপ-অধিনায়ক মেজর কুদরত, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাসুদ সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।