কাঁচাবাজারে মরিচে ঝাল, সবজি-ডিম দামেও চড়া
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। মাছ ও চালের দামও বাড়তি। শুক্রবার ঢাকা মহানগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ জুড়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অপরদিকে আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে হলে ৫০ টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাকে।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখাঁলী কাঁচাবাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ, টমেটো, বেগুনসহ অন্যান্য মৌসুমি সবজির দাম অনেকটা বাড়তি। পাশাপাশি বেড়েছে মাছ ও চালের দামও। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। মরিচের দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহ কমে যাওয়া ও বৃষ্টিকেই দায়ী করেছেন বিক্রেতারা। হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা ফরিদ জানান, বর্ষার কারণে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সামনে কাঁচা মরিচের দাম আরো বাড়বে। বেড়েছে ডিমের দাম। ফার্ম ও হাঁসের ডিম হালিপ্রতি দুই থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। মহাখালী কাঁচাবাজারে প্রতি হালি সাদা ডিম ৩৪ থেকে ৩৫ ও হাঁসের ডিম ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রেতা উজ্জ্বল হোসেন জানান, বর্তমানে ১০০টি ডিম পাইকারি বাজারে ৮৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চারদিনে আগে আমরা একই ডিম ৭৮০ টাকায় কিনেছিলাম, যে কারণে হালিপ্রতি ডিমের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
তবে সব ধরনের মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পলাশী কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাংসের দাম স্থিতিশীল আছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ২৯০ থেকে ৩০০, খাসি ৪০০ থেকে ৪৫০ ও দেশি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে নগরীর মহাখালীর কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি বাছাইকৃত দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেলেও শুক্রবার সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
এদিন রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি প্রতি। ইন্ডিয়ান মরিচের দাম একটু কম থাকলেও বাড়তি রয়েছে দেশি মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এছাড়াও সপ্তাহের ব্যবধানে প্রত্যেকটি সবজির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি প্রতি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুন ২০ টাকা বেড়ে (লম্বা) ৭৫ থেকে ৮০ আর ( গোল) বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে আসা নতুন সবজিও। পটল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, করলা ২৮ থেকে ৩০ টাকা, আলু ২৪ থেকে ২৫ টাকা, শশা ৪০ থেকে ৪২ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২২ টাকা, কাররোল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংগা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কলা হালি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা পিস আর সিম বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
সবজির দাম বাড়ার কারন জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সবজি নষ্ট হয়ে যায়। যার কারনে বর্তমানে সবজির দাম অনেকটা বাড়তি রয়েছে। কিছু নতুন সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম একটু বেশি। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতার প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সবজির দাম বাড়াচ্ছেন।
চাকুরিজীবী রবিন আহমেদ বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকার কথা থাকলেও এখন সব বাজারেই দাম বাড়তি। আর শুক্রবার এলেই বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়।
বাড়তি রয়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দামও। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দেশি ৪০ টাকা আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি প্রতি। তবে কিছুটা কম রয়েছে পাইকারী বাজারে। অন্যদিকে বেড়েছে মাছের দামও তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি প্রতি। শুক্রবার রাজধানীতে ইলিশ বিক্রি হয়েছে জোড়া প্রতি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে। রুই মাছ কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি প্রতি। পাংগাস ১২০ টাকা আর তেলাপিয়া বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি প্রতি।
মুদিপণ্যের মধ্যে অন্যান্য পন্যের দাম কিছুটা স্থীতিশীল থাকলেও বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায় মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে, বিআর ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, নাজিরশাল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পোলাও ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, আতব ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
এ সম্পর্কে কথা হয় চাটখীল রাইস এজেন্সীর সত্ত্বাধীকারী জালাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন চাল উৎপাদন সিজনের শেষ সময়। তাই দাম একটু বাড়তি। এছাড়া বাড়তি দামে চাল আমদানির কারনেও দাম বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। বাজারে দেশের উৎপাদিত নতুন চাল আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে প্রতিবছর যাতে করে খাদ্যভান্ডারে অতিরিক্ত ৪০ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন খাদ্য যোগ হয় এবং সুগন্ধি ও চিকন চাল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় সেই উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ময়মনসিংহ- নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিভাগের ৩৫টি উপজেলায় সেচ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ-ভূ-উপরিস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার করে ১৬ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে।
সেচ সুবিধা সম্প্রসারণপূর্বক প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হবে। এবং অঞ্চল ভিত্তিক খাদ্যশস্যের বহুমুখিকরণ করার পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জনগণের মধ্যে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ করা হবে। এছাড়া সারাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি)।
প্রকল্পটি জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন ২০১৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পে সরকারি খাত থেকে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
সুগন্ধি চাল রফতানি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত ৪০ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন খাদ্য খাদ্যভান্ডারে যোগ করতে পারবো। এছাড়া প্রতিবছর দেশের খাদ্য নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করে বিদেশে সুগন্ধি ও চিকন চাল রফতানি করবো।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পের আওতায়, ঢাকা বিভাগের তিন জেলার ৩৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এতে করে ১৬ হাজার ৫২ হেক্টর জমি উন্নত সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এতে করে একদিকে শক্তিশালি হবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অপরদিকে সুগন্ধি ও চিকন চাল রফতানি করতে পারবো।