আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

BNP1দল গুছিয়ে আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপির নেত্বাতাধীন ২০ দলীয় জোট। বিএনপির শীর্ষ মহল ভাবছে সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে নামলে এবার আন্দোলন সফল হবে। সে লক্ষে ঢাকা মহানগরে এবার অঙ্গ সংগঠনে নতুন নতুন নেতৃত্ব আনার জোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপি গণসংযোগ কর্মসূচি। এই কর্মসূচী চলবে ৩১ আগষ্ট পযর্ন্ত। এর মাধমে মূলত সংগঠন গুছিয়ে যৌক্তিক সময়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আন্দোলনে নামার উপযুক্ত সময় ধরা হচ্ছে নভেম্বর। তবে এর আগে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখলেও রাখার চিন্তাও আছে। ইতোমধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সমাবেশে সভায় বলেছেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, আন্দোলনের মাধ্যমেই এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে। পাশাপশি তিি সংকট সমাধানে সরকারকে আলোচায় বসার আহবান জানান।

আগামী কোরবানির ঈদ পরবর্তী সরকারবিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর জন্য দ্রুত দলকে সংগঠিত করতে চাচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, দুর্বল সংগঠন নিয়ে আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত ধাপে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যে কারণে রমজান মাসজুড়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে এলেও তারা সেই অবস্থান থেকে পুরো ইউটার্ন নিয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা এবার ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথে থাকার পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করার দিকেই মনোনিবেশ করতে চাইছেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল আরো চাঙ্গা এবং একই সঙ্গে দলের বিভিন্ন স্তরে নতুন ও তরুণদের দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দল। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই হোঁচট খেতে হচ্ছে দলের হাইকমান্ডকে। দলের ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটি থেকে শুরু করে অঙ্গ সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় গলদঘর্ম হতে হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এসবের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এবার মাঠে নামছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। এর অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলা সফর করবেন তারা।

সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনপরবর্তী দলকে পুনর্গঠন করার দিকে মনোনিবেশ করেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি ১০ এপ্রিল থেকে পুরো এক মাসে প্রায় ১৫টি জেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু এর ফলে দলের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করায় তার সেই প্রক্রিয়া থমকে আছে দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির দিকে নজর দেন। প্রায় ১৭ বছর পর দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটিকে বিলুপ্ত করে ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাস ও সোহেলের নেতৃত্বে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। মহানগর কমিটি ঘোষণার কারণে দলের অন্যান্য সাংগঠনিক কমিটিও শিগগিরই পুনর্গঠন করা হবে বলে নেতাকর্মীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে আসে।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার ওমরা পালনের আগে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নতুন কমিটির একটি খসড়া তৈরি করা হয়, যা তিনি সৌদি আরব থাকাকালীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য এবং তার মতামত নেয়ার জন্য সঙ্গে নিয়ে যান। নেতাকর্মীরা মনে করছিলেন, চেয়ারপার্সন ওমরা শেষে দেশে ফিরে আসলেই এসব কমিটি দ্রুত ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তিনি দেশের আসার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও কোনো কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তাই নেতাকর্মীরা এবারো আশাহত হয়েছেন।

তারা জানান, বিএনপিতে সব সাংগঠনিক প্রক্রিয়াই একটি অনিশ্চিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকে। আন্দোলনকে টার্গেট করে এবার হয়তো সেই আমলাতান্ত্রিক জট ধোপে টিকবে না। কিন্তু পদপ্রত্যাশী নেতাদের শক্ত লবিং-তদবিরের কারণে এবারো কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব ঘটছে বলে মনে করেন তারা।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলনের মূল শক্তি হিসেবে পরিচিত দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। যুবদলের মূল দায়িত্ব কার ওপর ন্যস্ত করা হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কখনো দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন আবার কখনো সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে কবে-কখন যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে তা আন্দাজ করতে পারছেন না কর্মীরা।

একই অবস্থা বিরাজ করছে ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও। কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কোনো সুরাহা করতে না পারায় এবার খালেদা জিয়া নিজে কথা বলছেন সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার রাতে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ চার ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু বৈঠকটি অসমাপ্ত রেখেই মুলতবি রাখা হয়েছে। আগামী ২৪ আগস্ট ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আবার বসবেন খালেদা জিয়া। এর আগেও বিগত ছাত্রদল কমিটি গঠনের আগে তিনি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তবে কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মতামতকে গ্রাহ্য করা হয়নি বলে আগের কমিটি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এবারো আগের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে অনেক ছাত্রনেতা আশঙ্কা করছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস ও কৃষক দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়।

তবে দলের সাংগঠনিক হ-য-ব-র-ল অবস্থা মানতে নারাজ স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ দল। এ দলে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সবকিছু চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগছে। তবে এটা দলের জন্য ভালো।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করা হয়েছে, যারা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে গণসংযোগ করবেন। দলের সিনিয়র নেতাদের এ সাংগঠনিক সফরে মূলত তৃণমূলের সংগঠনকে চাঙ্গা করা ও কোন্দল থাকলে তার সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সফর শেষে দলের চেয়ারপার্সনের কাছে আলাদা আলাদা প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া নির্দলীয় সরকারের দাবি ও সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাবেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরে গণসংযোগের টিম প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য টিম প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকা জেলা ও নারায়ণগঞ্জ, তরিকুল ইসলাম নড়াইল, খুলনা জেলা ও মহানগর, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দিনাজপুর ও সৈয়দপুর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর, ড. আবদুল মঈন খান ফরিদপুর ও মাদারীপুর, এম কে আনোয়ার চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও মহানগর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যশোর ও ঝিনাইদহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, নজরুল ইসলাম খান বগুড়া, রাজশাহী মহানগর ও সিরাজগঞ্জ, নাটোর জেলা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পিরোজপুর, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ভোলা, সেলিমা রহমান নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ, আবদুল্লাহ আল নোমান বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর, এম মোরশেদ খান কক্সবাজার, শমশের মবিন চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইফসুফ রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক নরসিংদী, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাঙ্গামাটি ও ফেনী, আবদুল আউয়াল মিন্টু খাগড়াছড়ি, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন কুমিল্লা, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রাজশাহী ও পাবনা জেলা, ফজলুর রহমান পটল নীলফামারী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুশফিকুর রহমান শেরপুর, খন্দকার মাহবুব হোসেন বরগুনা, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান শরীয়তপুর, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গাজীপুর জেলা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান মাগুরা ও বাগেরহাট, মিজানুর রহমান মিনু রংপুর জেলা ও মহানগর, মো. শাহজাহান সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, বরকত উল্লাহ বুলু কুমিল্লা উত্তর ও চাঁদপুর, সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিলেট মহানগর ও জেলা, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার গোলাম আকবর বান্দরবান, হারুন অর রশিদ নওগাঁ ও জয়পুরহাট, মশিউর রহমান কুষ্টিয়া, আসাদুল হাবিব দুলু কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা, মনিরুল হক চৌধুরী মেহেরপুর, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লালমনিরহাট, রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু পটুয়াখালী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাতক্ষীরা, নিতাই রায় চৌধুরী চুয়াডাঙ্গা, নাজিম উদ্দিন আলম ঝালকাঠি, জয়নুল আবদীন ফারুককে জামালপুর জেলায় গণসংযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

গণসংযোগ কর্মসূচির বিষয় জানতে চাইলে লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি এখনো সফরের দিন নির্ধারণ করিনি। দুই-একদিনের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নির্ধারিত এলাকায় যাব। সফরে নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখী করার নির্দেশনা এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান তিনি।চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, আমাকে নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টিমের বাকিদের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই নির্ধারিত এলাকায় সফরে যাওয়া হবে। গণসংযোগ কর্মসূচি মূলত সাংগঠনিক সফর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আর সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ২৪ ও ২৫ তারিখ কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে।

বিভাগ

– See more at: http://www.priyo.com/2014/08/22/98888.html#sthash.hPvk9jOY.dpuf

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend