অনিয়মের কারণে পাঁচ প্রকল্পের অর্থ ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
চলমান পাঁচটি প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ক্রয়সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে এ অর্থ ফেরত নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেই সাথে পরবর্তীতে ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও সতর্ক হতে বলেছে সংস্থাটি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছে এই বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের চিঠির বিষয়ে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব কাজী সফিকুল আজম জানান, কিছু প্রকল্পে ক্রয়সংক্রান্ত অনিয়ম হয়েছে। যেটুকু অনিয়ম হয়েছে, সেই পরিমাণে টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়কে সতর্কীকরণ চিঠি দেয়া হয়েছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এসব টাকা এখন সরকারি খাত থেকে বিশ্বব্যাংকে দেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অধীনে বাস্তবায়নাধীন অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্পে কেনাকাটায় আবারও নানা ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর আগে প্রকল্পে দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা অনিয়ম ধরা পড়েছিল। নতুন করে কেনাকাটায় অনিয়ম ধরা পড়ায় এবার মন্ত্রণালয় ছয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে বিশ্বব্যাংককে। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত কমিটির মতে, কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে।
ইআরডি সূত্র আরো জানায়, কেনাকাটায় অনিয়মের কারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্পে দুই লাখ ৩০০ টাকা ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু’ প্রকল্পেও অনিয়মের কারণে ১৬ হাজার ডলার বা ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকে।
১০ কোটি ২২ লাখ ডলারের ‘ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’।
এ প্রকল্পটিতে বিগত ছয় বছরে ছাড় হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৮৮ লাখ ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কেনাকাটা ও দরপত্রজনিত অনিয়মের কারণে প্রকল্প থেকে চার লাখ ১১ হাজার ১১ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকে।
‘এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ শীর্ষক প্রকল্প থেকেও ১৭ হাজার টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে বিশ্বব্যাংককে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসাইন জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পে প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে যেটুকু মিস-প্রকিউরমেন্ট হয়, সেই পরিমাণ টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে হয়। সম্প্রতি কিছু প্রকল্পে মিস-প্রকিউরমেন্ট হয়েছে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প থেকেও ১২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ফেরত যাচ্ছে যাচ্ছে। মূল ডিপিপি’তে উপকেন্দ্রটি একটি রেগুলার স্টেশন হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় জায়গা না পাওয়ার কারণে উপকেন্দ্রটি রেগুলার সাব-স্টেশনের পরিবর্তে একটি কমপ্যাক্ট রেডিয়াল সাব-স্টেশন হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রথমদিকে প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৪৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ তিনশ’ ৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্যের জন্য সংস্থান রেখেছিল। এ অর্থ থেকে প্রকল্পের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরডিপিপি) ২৭ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দুইশ’ ২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এতে করে প্রকল্প থেকে একশ’ ২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংকে ফেরত যাবে। প্রকল্পটি আগস্ট ২০০৯ সালে একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচবছর পরে এসে একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় কমানো হয়েছে।