ইরাকে টানা দুই মাস বিদ্যুৎ-পানি-চিকিৎসাহীন অবরুদ্ধ আরমেলিবাসী
ইরাকে সুন্নী ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন আইএসআইএস প্রায় সত্তর দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিয়া অধ্যুষিত আমেরলি শহর। এই শহরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ, পানি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করছে অবরোধের কারণে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ইরাক প্রতিনিধি নিকোলাই ম্লানদেনভ বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত মানবেতর এবং এই শহরের মানুষদের রক্ষা করতে হলে এখনই অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমেরলি শহরের মানুষদের ভোগান্তি বর্ণনা করার মতো নয়। তাদের এখন শুধু একটাই দাবি, যেকোনো প্রকারে অবরোধ হটিয়ে দেওয়া হোক।
প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বাস এই আমেরলি শহরে। এরা সবাই সত্তর দিন ধরে অবরুদ্ধ বলে জানান টার্কমেন রক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান ড. আলি আলবায়াতি। তিনি জানান, শহরে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সেখানে চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষ কূপ থেকে পানি তুলে পান করছে।
আমেরলি শহরের আশেপাশের প্রায় তিন ডজন গ্রামও আইএসআইএস এর নিয়ন্ত্রণাধীন বলে জানান আলবায়াতি। এখানের মানুষরা ইরাক সরকারের অপেক্ষায় আছে। তাদের প্রত্যাশা, সরকার হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের মুক্ত করবে।
আল বায়াতি বলেন, গত ১০ দিনে মাত্র একটা সরকারি হেলিকপ্টার এই অঞ্চলে এসেছিল খাদ্য বিতরণ করতে।
ইরাকি মানবাধিকার কমিশনের মাসরর আসওয়াদ জানান, স্থানীয় পুলিশ ছাড়া এই অঞ্চলের ১৭ হাজার ৪০০ জনতার আত্মরক্ষার আর কোনো উপায় নেই।
এদিকে আইএসআইএস ইরাকের পথে অগ্রসরের সময় শিয়া, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের লক্ষ্যে পরিণত করছে। অপরদিকে বাগদাদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা সদরদপ্তরে এক আত্মঘাতীূ বোমা হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছে। কিরকুকেও তিনটি সিরিজ গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।
শুক্রবার আইএসআইএস হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, জালওয়ালায় সংগঠনটির ৫০ সদস্য নিহত হওয়ার প্রতিশোধ তারা নেবে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার উত্তরপূর্ব ইরাকের দিয়ালা প্রদেশের একটি মসজিদে সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলায় কম করেও ৭৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও শতাধিক লোক।
স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, শুক্রবার দিয়ালা প্রদেশের বাকুবা শহরের একটি এলাকায় সুন্নি সম্প্রদায়ের ওই মসজিদে হামলা চালায় শিয়াপন্থি জঙ্গিরা।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় কয়েকজন শিয়াপন্থি মারা যাওয়ার জবাবে এ হামলা চালানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাকে মার্কিন নাগরিকদের রক্ষায় আরো জোরদারে বিমান হামলার অনুমতি দিয়েছেন। সেই সাথে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রতিহত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তবে সমালোচকরা বলছেন অন্য কথা। তাদের মতে আইএসআইএস তাদের অপকর্মের মাধ্যমে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্যই করছে। এসব ঘটনার কারণে আইএসআইএসকে তাড়া করার নামে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানর একটা যুক্তি খুঁজে পাবে মার্কিনিরা বলে মনে করছেন সমালোচকরা।