কিশোরগঞ্জে ডায়রিয়ায় ৩ জনের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালে রোগী মৃতের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে তিনজনে। হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ভয়ে অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। শহরের নিউটাউন এলাকার রওশন আরার মৃত্যুর পর শনিবার রাতে শিশু আল-আমিন ও রবিবার সকালে ফজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। দেখা গেছে, জেলা সদর হাসপাতালে শয্যা ছাড়াও বারান্দা আর করিডোরগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সী রোগী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিছানা পেতেছেন। কোথাও তিলধারণের জায়গা নেই। জেলার বাইরে থেকেও অনেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এতে করে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইনের।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে তারা চাহিদামতো সেবা ও ওষুধ পাচ্ছেন না।
শহরের সতাল এলাকা থেকে আসা রোগী রেনুফা (২৭) ও নিউটাউনের অসিত পাল (৩৫) জানান, গত নয়দিন ধরে পৌর এলাকার নিউটাউন, সতাল ও বোয়ালা বাসিন্দারা সাপ্লাইয়ের ময়লাযুক্ত ও দূষিত পানি পান করছেন। ফলে প্রতিদিন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
তারা আরও জানান, ভালো চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু অভিজ্ঞ ডাক্তার না এসে নার্স ও ইন্টার্ন ডাক্তার দিয়ে আমাদের চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় ইতিমধ্যে তিন চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ শাহনাজ পারভীন জানান, প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সে তুলনায় হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিটও সীমিত, আর আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ইনজেকশন সিপটিয়াজম ১, ২ গ্রাম ও ৫০০ মিলি গ্রাম ট্রাকশন ১, ২ গ্রাম ও ৫০০ মিলিগ্রাম সিপ্লিও ও স্যালাইনের সংকট রয়েছে। তাই সব সামলে নিতে সমস্যা হচ্ছে।
হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া রোগীদের মধ্যে পৌর এলাকার বয়লা তারাপাশার সোহরাব মিয়া ও ইমন, বগাদিয়া (নগুয়া) এলাকার রিমা আক্তারসহ আরও অনেকের অভিযোগ, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ওষুধ সংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় না বলেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা মাত্র ১২টি। অথচ রোগীর সংখ্যা এখনো দেড় শতাধিক। এতে একই বেডে ২-৩ জন করে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কর্তব্যরত ডাক্তাররা বলছেন, দূষিত পানি পান করার কারণেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে শহরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সাপ্লাইয়ের পানির লাইনের সমস্যা সমাধানে এখনো পৌর কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো টনক নড়েনি।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ কাঞ্চন ভূঞা ও সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জেলা পরিষদ সংলগ্ন ট্যাংকটির সাপ্লাই লাইন ফুটো হয়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফুটো হওয়া লাইনটি অতিদ্রুত মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান।
কর্তব্যরত ডাক্তারের অবহেলার কারণে ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু হচ্ছে অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
সিভিল সার্জন ডা. মৃণাল কান্তি পণ্ডিত রোগীদের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে ওষুধ রয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি দোতলায় স্থানান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।