গান ছেড়ে রাজনীতিতে ন্যান্সি, শেষ ইচ্ছা তারেক রহমানের সাক্ষাত পাওয়া!
একের পর এক বিতর্ক তৈরি করে চলেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি। একদিনে নিজেই বলছেন তাঁকে শান্তিতে থাকতে দিতে, অন্যদিকে নিজেই বিতর্কিত কথাবার্তা বলে তৈরি করছেন সমালোচনা। আজ ২৬ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরে ছাপা হয়েছে ন্যান্সির আরও একটি সাক্ষাৎকার। যেটায় তিনি জানিয়েছেন গান ছেড়ে রাজনীতিতে যাওয়ার কথা, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে ব্যক্তিগত অনুভূতি। সাথে দাবী করেছেন যে তিনি আত্মহত্যা করেননি, বর্তমান সরকারকে নানান বিষয়ে করেছেন অভিযুক্ত। দৈনিক যুগান্তরের সৌজন্যে ন্যান্সির সেই বিতর্কিত সাক্ষাৎকারটি তুলে দেয়া হলো হুবহু। পাঠক পড়ে নিন নিজেই!
আপনি এ সময়ের জনপ্রিয় একজন কণ্ঠশিল্পী। উঠতি ক্যারিয়ারের এ সুবর্ণ সময়ে কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন?
-দেখুন, আত্মহত্যা চেষ্টার খবরটাই মিথ্যা।
তাহলে এতগুলো ঘুমের ওষুধ কেন খেলেন?
-ফেসবুকে আমার রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরার পর থেকে একের পর এক আমার স্টেজ শো বাতিল হচ্ছিল। রিহ্যাব ফেয়ার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের শো, হোটেল প্যালেসিয়া থেকে শুরু করে বেশকয়েকটি বড় বড় শো-তে আমন্ত্রণ জানানোর পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমি বেশ হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। ঘটনার দিন রাতে কোনোভাবেই আমার ঘুম আসছিল না। আমি বোকামি করে একের পর এক ৮-১০টি ঘুমের ওষুধ খাই। এরপর আর কিছুই মনে নেই।
ডাক্তার বলেছেন, আপনি ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। এটা কি তাহলে মিথ্যা?
-এটা টোটালি রং ইনফরমেশন। আমার বিরুদ্ধে পুরোটাই অপপ্রচার।
আপনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হলেন ডাক্তাররা, এটা তো অস্বাভাবিক একটা অবস্থা!
-ময়মনসিংহে ডাক্তাররা আমার চিকিৎসা করতে ভয় পেয়েছিলেন। তারা মনে করেছেন, ন্যান্সির চিকিৎসা করতে গিয়ে কোনো ভুল হয়ে গেলে সারা দেশে হৈচৈ পড়ে যাবে। বোঝেনই তো, সেলিব্রেটি হলে যা হয়! মিডিয়ার ভয়েই তারা আমাকে ঢাকায় পাঠান।
কিন্তু ঢাকায় এসে আপনাকে ল্যাব এইডের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থা নিশ্চয় গুরুতর ছিল?
-এটা ডাক্তারদের ভুল ছিল। কারণ আইসিইউতে নেয়ার মতো খারাপ অবস্থা আমার ছিল না। এরপর আমার পারিবারিক ডাক্তার তাদের ভুল ধরিয়ে দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে কেবিনে স্থানান্তর করে।
আপনি বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে আপনাকে গান গাইতে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা যতটা জানি, আপনি বিএনপির কোনো সক্রিয় সদস্য নন, তাহলে এ প্রশ্ন তোলা কি অবান্তর নয়?
-দেখুন, ফেসবুকের ওই একটা স্ট্যাটাসই আমার কাল হয়েছে। ফরিদপুরে আমার প্রোগ্রাম ছিল। আগের রাতে ফোন করে আমাকে বলা হয়েছে, আপু আপনি এখানে আসবেন না। আপনার প্রতিপক্ষ আপনাকে খুন করে ফেলবে।
গানের শো না করতে দেয়ার অন্তরালে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
-ওই যে, আমি নাকি বিএনপি করি।
আপনাকে তো মনির খান বা বেবী নাজনীনের মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় না। আসলেই কী আপনি বিএনপি করেন?
-দেখা না যাক, আমি বিএনপির পক্ষে স্ট্যাটাস লিখেছি, ওটাই আমার অপরাধ। আমি বিএনপির সামান্য একজন সমর্থক মাত্র। সেটা পারিবারিকভাবেই। এটা বলাই কি আমার অপরাধ? তাহলে আমি কি স্বাধীন মতামতও দিতে পারব না? দেখুন আমার এখন ২৭ বছর বয়স। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছর। সে হিসেবে আমি আরও ৩৩ বছর বাঁচব। এ সময়ের মধ্যে যদি বিএনপি ক্ষমতায় না আসে তাও আমি বিএনপি করব।
ফেসবুকে তো অনেক তারকাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে লেখেন। তাদের তো এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না…
-অন্যদের কথা জানি না। আমার সমস্যা হয়েছে এটা বুঝতে পারি।
আমরা জানি আপনি একজন প্রফেশনাল শিল্পী!
-কিন্তু আমার গায়ে তো বিএনপির সিল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সবাই সেভাবেই ট্রিট করছে।
তাহলে কি পুরোদমে রাজনীতি শুরু করবেন?
-আমি একজন শিল্পী। রাজনীতি করার কথা কখনও ভাবিনি। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে বিএনপির কোনো না কোনো অঙ্গ সংগঠনে আমাকে যোগ দিতে হবে।
আপনি ফেসবুকে যা লিখেছিলেন, সেই অবস্থানে অনড় আছেন?
-হ্যাঁ, আমাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলেও আমি আমার অবস্থান বদলাব না।
তাহলে আর হতাশার কী আছে?
-না, হতাশা নয়। কথা হল আমার তো কোনো অপরাধ নেই। কেন তাহলে আমার স্টেজ শো বাতিল করে দেবে বা বাধা দেবে। আমাকে তো জোর করে রাজনীতিতে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
কবে থেকে রাজনীতিতে নামছেন?
-ভাবছি। দু-তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আবার দেখা করবেন?
-দু’বার দেখা হয়েছে। ম্যাডামকে আমার অসাধারণ মনে হয়েছে। আবারও দেখা করার ইচ্ছা আছে।
গান আর রাজনীতি কি একসঙ্গে চলবে?
-আর দু’মাস আমি দেখব। এর মধ্যে যদি স্টেজ শো আর গানের কাজ না আসে তাহলে আমি গান ছেড়ে দেব। গানই যদি গাইতে না পারি, তাহলে ঢাকায় থেকে কি হবে! চলে যাব গ্রামের বাড়িতে। আর দশটা সাধারণ নারীর মতো আমিও স্বামী-সন্তান নিয়ে দিন কাটাব।
স্টেজ-শো না থাক, আপনার হাতে তো সিনেমার গানের কাজ রয়েছে। তাছাড়া আপনি নিজেও তো বিত্তশালী।
-দেখুন, দূর থেকে অনেক কিছুই মনে হয়। বাস্তবটা অনেক কঠিন। গত দু’মাসে আমি মাত্র চারটা ফিল্মের গানে ভয়েস দিয়েছি। এ মাসে আমার কোনো কাজ নেই। শুধু সুবীর নন্দী দাদার সঙ্গে একটা ডুয়েট গান করেছি। এভাবে কি চলবে? বাসাভাড়া, বড় মেয়ে রোদেলার স্কুল, অন্যান্য খরচ? এগুলো কোত্থকে আসবে।
এ অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তো আপনার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গেও ঝামেলা, তাই না?
-একদম মিথ্যা। শাশুড়ি আমার মায়ের মতোই। মা মারা যাওয়ার পর এখন তিনিই আমার মা। তার সঙ্গে কি আমার বিরোধ হতে পারে! তাছাড়া আমি একজন তালাকপ্রাপ্ত মহিলা। প্রথম পক্ষের আমার একটা মেয়ে আছে। সবকিছু মেনে নিয়েছেন যে শাশুড়ি, তার সঙ্গে আমার কি কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে!
আপনি এখন শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত টাকা দিতে পারছেন না, এমন অভিযোগ শোনা যায়!
-এগুলো পুরোটাই অবান্তর। গসিপ।
আপনার বাবার সঙ্গেও আপনার দূরত্ব, তার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে?
-এটাও ঠিক নয়। আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এখন থেকে ১৪ বছর আগে। তখন আমার মা ও আমরা এটা মেনে নিয়েছি। সুতরাং এখন প্রশ্ন ওঠা অবান্তর।
আপনি নিজেই বললেন, আপনি বিএনপির সমর্থক। বঙ্গবন্ধুকে আপনি কীভাবে দেখেন?
-বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই। তাকে নিয়ে বিতর্ক চলে না। কিন্তু কেউ যদি শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু মনে করেন তাহলেই ভুল। আর এখন সেটাই হচ্ছে। একটা স্বৈরাচারী সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সবকিছু স্তব্ধ করে দিচ্ছে, এটা হতে পারে না। একজন গানের শিল্পীও এ রাষ্ট্রে নিরাপদ নন! জনগণ যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে আর কিছুই করার নেই।
আপনার শেষ ইচ্ছে কী?
-মৃত্যুর আগে আমি একবার তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
গান নিয়ে স্বপ্ন?
-গানের স্বপ্ন তো সবই নষ্ট করে দিচ্ছে এ সরকার।
আপনি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, এটা বড় অভিযোগ?
-একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। একদিন একটা অনলাইনের এক সাংবাদিক আমাকে ফোন করলেন। আমি বললাম, ব্যস্ত আছি পরে ফোন করুন। ঘণ্টাখানেক পর ওই অনলাইন লিখে দিল, মুখ খুলছেন না ন্যান্সি। এটা কোনো কথা হল? ওরাই মূলত বাজারে রটিয়েছে, আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করি।