দিনের পর দির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষন, ধরাছোঁয়ার বাইরে ধর্ষনকারী
এটা গতানুগতিক কোনো ধর্ষণের ঘটনা নয়। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ১৩ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে দিনের পর দিন নিজের ইচ্ছামত ধর্ষণ করে যাচ্ছে মাঈন উদ্দিন পিন্টু (৩২) নামের এক নরপশু। এ পর্যন্ত কয়েক দফায় মেয়েটিকে উঠিয়ে নিয়ে উপুর্যপুরি ধর্ষণ করেছে সে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। এমনকি তার স্ত্রী পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে এসে লম্পট স্বামীর বিচার দাবী করেছে। জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কাটাছরা ইউনিয়নের ফাতেমা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে সে।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বখাটে এই যুবকের নাম মাঈন উদ্দিন পিন্টু (৩২)।
একই এলাকায় তার বাস। ইচ্ছে হলেই এই নরপশু স্কুলছাত্রীটিকে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকদিন রেখে ইচ্ছেমতো ধর্ষণ করে আবার ফেলে দিয়ে যায়। এ যেন এক মগের মুল্লুক। প্রথমবার অপহরণ ও ধর্ষণের পর একবার পুলিশ মিন্টুকে গ্রেফতার করলেও জেল থেকে বের হয়ে সে পুনরায় অপহরণ আর ধর্ষণ করে জেল খাটার প্রতিশোধ নিয়েছে। শুনতে সিনেমার গল্পের মতো হলেও রোমহর্ষক এই ঘটনাটি ঘটেই চলেছে। থানায় দায়েরকৃত মামলা ও ধর্ষিত স্কুলছাত্রীর বাবার বর্ণনা থেকে জানা যায়, বখাটে মাঈন উদ্দিন পিন্টু মিরসরাই উপজেলার কাটাছরা ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে সে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত ওই স্কুলছাত্রীকে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পিন্টু প্রথমে গত ২৩ এপ্রিল ভোরবেলা নিজ বাড়িতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হলে এই স্কুলছাত্রীকে মুখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
প্রথম দিনের এই ঘটনায় এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে ঘটনার ৬ ঘণ্টা পর ওই ছাত্রী উদ্ধার হলেও সামাজিক সম্মানের কথা চিন্তা করে থানায় কোনো মামলা দায়ের করেনি মেয়েটির পরিবার। এরপর দ্বিতীয় দফা স্কুলে যাওয়ার পথে গত ৯ মে সকাল ১০টায় আবারও অপহরণ করা হয় এই স্কুলছাত্রীকে। এদিন উপজেলার হাজীশ্বরাই গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বদ্ধ ঘরে এই স্কুলছাত্রীকে ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। এই অপহরণের পর থানায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার এক দিন পর ১০ মে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার ও পিন্টুকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনায় মিরসরাই জোরারগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পিন্টুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে পুলিশ পিন্টুকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসে বখাটে পিন্টু। জেল থেকে বেরিয়েই জেলে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে এই নরপশু। সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট সকাল ১০টায় তৃতীয় দফা ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় পিন্টু। এই ঘটনায় ২০ আগস্ট জোরারগঞ্জ থানায় পিন্টুর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্কুলছাত্রীটির বাবা। এই অপহরণের চার দিন পর গত শনিবার দিবাগত রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভা এলাকায় এই স্কুলছাত্রীর সন্ধান পায় পরিবার। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ছাগলনাইয়া এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্কুলছাত্রীটিকে উদ্ধার করে।
স্কুলছাত্রীটি জানায়, এবারও তাকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে লম্পট নরপশু পিন্টু চার দিন ধরে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। উদ্ধারের পর ওই ছাত্রীকে প্রথমে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্কুলছাত্রীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এলাকার বখাটে মাঈন উদ্দিন পিন্টু তার মেয়েটিকে বারবার অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে। তার ইচ্ছে হলেই আমার মেয়েকে সে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ যে কোন মগের মুল্লুকে বসবাস করছি আমরা। লম্পট ওই অপহরণকারী এলাকায় দুটি বিয়ে করেছে। তার সাত বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে।
কাটাছরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার সবুজ বলেন, মেয়েটি আমার এলাকার একটি হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তাকে তিন দফা অপহরণ করে ধর্ষণ করার বিষয়টি আমি জেনেছি। অভিযুক্ত অপহরণকারী পিন্টু আমার এলাকারই একজন বখাটে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। এই নরপশুকে গ্রেফতার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান ইউপি চেয়ারম্যান। একই ঘটনায় বখাটে লম্পট পিন্টুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার সশরীরে ইউপি কার্যালয়ে স্বামীর অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে লম্পট স্বামীর বিচার দাবি করেছেন।
মিরসরাই জোরারগঞ্জ থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, পিন্টুর বিরুদ্ধে ওই স্কুলছাত্রীকে একবার অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় জামিনে বেরিয়ে সে আবার একই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা জেনেছি।