তারেকের বক্তব্যে উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেতারা
শেখ হাসিনা কুলাঙ্গারদের নেত্রী ও আওয়ামী লীগ কুলাঙ্গারদের দল, একথা বলে আবার আলোচনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত রোববার লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে আয়োজিত সেমিনারে তারেক রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা খোন্দকার মোশতাককে কুলাঙ্গার বলেছেন। অথচ ওই মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন এইচ টি ইমাম। সেখানে কর্নেল তাহের, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু ছিলেন। এঁদের নিয়েই শেখ হাসিনা চলছেন। এতে প্রমাণ হয় শেখ হাসিনা কুলাঙ্গারদের নেত্রী। আওয়ামী লীগ টোটালি ইজ এ দল অব কুলাঙ্গার।’
তারেকের এই মন্তব্যে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট নেতারা তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। তারেক রহমানের বক্তব্যের পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য প্রিয়.কম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তিনি একজন ফেরারি আসামি। পাকিস্তানি সেনা জানজোয়ার মৃত্যুর পর তাঁর মা সব প্রটোকল ভেঙে শোকবাণী পাঠিয়েছিলেন।’ তিনি দাবি করেন, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা ছাড়া তাঁদের আর কোনো মিশন নেই। তাঁকে (শেখ হাসিনা) হত্যা করা অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নষ্ট করা।’
মতিয়া চৌধুরী তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সাহস থাকলে দেশে এসে কেস ফেইস করুন। বিদেশ থেকে লম্বা কথা বলবেন না। বাংলাদেশের মানুষ আপনার লম্বা কথায় বিভ্রান্ত হবে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, তারেক রহমান নিজে একজন কুলাঙ্গার বলেই আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দল ও প্রধানমন্ত্রীকে কুলাঙ্গার বলেছেন।
তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে আজকের বিএনপি, ওর বাপ জিয়াউর রহমান এবং মা খালেদা জিয়ার জন্ম হতো না। তারা দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন
দেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান কুলাঙ্গারদের শিরোমনি বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
মেনন বলেন, তারেক রহমান এ ধরনের মন্তব্য করে দেশের তারুণ্যের চেতনাবোধকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।সেদিন আমি ঢাকায় আত্মরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। রেডিওতে মোশতাক সরকারের শপথ গ্রহণের খবর শুনেছি। সেখানে আমার উপস্থিতি বিষয়ে যারা কথা বলে তাদের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান নেই। আমার অগ্রজ মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কাছ থেকে শিখেছি এ ধরনের বক্তব্যে কান দিতে নেই। কিন্তু তারেক রহমানেরএ ধরনের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে আজকে আমি বাধ্য হলাম।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজেই তার লেখায় বঙ্গবন্ধুকে মহান নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার ছেলে অর্বাচীনের মতো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। মূলত ১৯৭১ সালে মা খালেদা জিয়ার যে ভূমিকা ছিল তা ধামাচাপা দিতে এসব কথা বলছে সে। তারা মূলত নির্বাচনের বাস মিস করে সরকার তো দূরের কথা তাদের বিরোধীদলে বসার স্বপ্নও ধূলিস্মাৎ হয়ে যাওয়ায় এসব মন্তব্য করছে। একই সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও দেশে জঙ্গি কার্যকলাপের তাদের সম্পৃক্ততার মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায় উল্টো পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু
হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার কোনো উত্তর না দিতে পেরে মা-ছেলে আবোল-তাবোল বলছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় জাসদ, কর্নেল তাহের এবং আমার অবস্থা আপনারা জানেন। জাসদই একমাত্র দল হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
তথ্যমন্ত্রী তার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, আমি খুনিদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনে ছিলাম। মা-ছেলে ও তাদের দল জাসদ, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে হঠাৎ বলতে শুরু করেছেন। কোনো তাদের অস্থিরতা, প্রশ্ন করেন ইনু। ইতিহাস এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর তাই জিয়াউর রহমানের দুষ্কর্ম আড়াল করতেই আবোল-তাবোল বলছেন মা-ছেলে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশে থেকে রাজনীতি করতে সাহস না থাকায় তিনি লন্ডন থেকে ঢিল ছোড়াছুড়ি করছেন। আমি তাঁর নাম উচ্চারণ করতে চাচ্ছি না। সাহস থাকলে লন্ডনে থেকে ষড়যন্ত্র কেন, দেশে এসে রাজনীতি করুন। দেখি কারা হারে আর কারা জেতে।’
যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ভুলের চোরাবালিতে বিএনপির রাজনীতি হারিয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচনে যে ভুল করেছে, তার মাশুল তারা দিচ্ছে। আর এই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে তারা আরও নতুন নতুন ভুলের জন্ম দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্বাচীন দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান ‘কুলাঙ্গার’-এর অর্থ বোঝে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ একজন কুলাঙ্গারকেই চেনেন, সে হলো ওই তারেক রহমান। সে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচারের দায়ে অভিযুক্ত।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (তারেক রহমান) হত্যা-সন্ত্রাস-দুর্নীতিসহ দেশকে অস্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে বৈঠক করে, তার মতো বড় কুলাঙ্গার আর কে হতে পারে। আর আমরা কুলাঙ্গার অর্থ বুঝি যার জন্মের ঠিক নেই। তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়ার তো জন্মের ঠিক নেই। তাঁর তো ৪/৫টা জন্মদিন। এতেই প্রমাণ হয় কুলাঙ্গার কে। তিনি বলেন, বিএনপির বড় পদধারী ওই অর্বাচীন ছেলেটি রাজনীতির নামে যে ভাষা ব্যবহার করেছে তাতে গণহত্যার দায়ে তার সর্বোচ্চ বিচার হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, একজন অর্ধশিক্ষিত গণ্ডমূর্খ, অর্বাচীন হত্যাসহ নানা অপকর্মের ফেরারি আসামির (তারেক রহমান) ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতেও রুচিতে বাঁধে। দেশের মানুষ তাকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বরপুত্র হিসেবেই চেনে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে পরে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা ওই ব্যক্তির কোন কথা শোনা বা তার জবাব দেয়ারও কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু বিদেশে পালিয়ে থেকে যতই বড় বড় কথা বলুক, হত্যা-দুর্নীতি-অর্থপাচারের দায় থেকে সে কখনই রক্ষা পাবে না। তার বিচার হবেই হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার হন তারেক রহমান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। সেই থেকে তারেক লন্ডনে স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বসবাস করছেন। লন্ডন থেকে তিনি বেরও হয়েছেন বিভিন্ন কারণে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে বলে দাবি করে তার দল।