আরেকটি দুঃখ হয়েই রইল নেপাল
‘দর্শক না থাকলে মাঠে খেলে মজা পাওয়া যায় না। দর্শক থাকলেই শতভাগ উজাড় করে দিতে পারি’—বাংলাদেশ-নেপাল অনূর্ধ্ব ২৩ প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জয়ের পর ম্যাচের নায়ক সোহেল রানা এমনটাই বলেছিলেন। আজ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে এত দর্শক এল যে ম্যাচ শুরু করতেই দেরি হলো প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা! কিন্তু হাজার হাজার দর্শককে হতাশায় ডুবিয়ে নেপালের কাছে বাংলাদেশ হারল ১-০ ব্যবধানে।
সাদা চোখে আজকের ম্যাচকে ‘আন্তর্জাতিক’ বলা কঠিনই বটে! মনে হবে গ্রাম-গঞ্জের কোনো ফুটবল ম্যাচ! গ্যালারি তো বটেই, ডাগ আউট, টাচলাইন পর্যন্ত দর্শকে ঠাসা। এতে খেলোয়াড়দের থ্রো-ইন, কর্নার কিক নিতে বেশ কষ্টই হলো। দুদলই দর্শকদের উপহার দিলেন অগোছালো ফুটবলও।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশিই এগিয়ে! ভুল পাস, নিয়ন্ত্রণহীন মধ্যমাঠ, প্রতি-আক্রমণে ফিনিশারের অভাব প্রকট হয়ে উঠল। এই এলোপাতাড়ি ফুটবলের মধ্যেই ৭৮ মিনিটে সুশীলের গোলে এগিয়ে গেল নেপাল। সে গোল আর শোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে খেলোয়াড়দের মাথা-গরম হওয়ার স্বভাব লক্ষ করা গেল বেশ কয়েকবার। বিশেষ করে অধিনায়ক মামুনুল উত্তেজিত হলেন ক্ষণে ক্ষণে। মধ্যভাগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শূন্যতা বেশি স্পষ্ট হলো দ্বিতীয়ার্ধে। বেশ কয়েকটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম ম্যাচের নায়ক সোহেলের দারুণ একটি দূরপাল্লার শট লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। শেষমেশ পরাজয়ের যন্ত্রণা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো লাল-সবুজদের।
অবশ্য এ পরাজয়ের পরও দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ের হিসাবে এখনো এগিয়ে বাংলাদেশ। মোট ২১টি ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ১২টি, নেপাল সাতটি। নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাতটি হারের তিনটিই কাঠমান্ডুর মাঠে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হেরেছে দুবার—একটি ১৯৯৩ সালে ষষ্ঠ সাফ গেমসে, আরেকটি আজ সিলেটে। বাকি দুটো হার কলকাতা ও দিল্লির মাঠে।
১৯৮৪ সালে কাঠমান্ডুর প্রথম সাফ গেমসের ফাইনালে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও বাংলাদেশকে নেপাল হারিয়েছিল ৪-২ গোলে। ওটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে নেপালের সবচেয়ে বড় জয়। ১৯৮৭ কলকাতা সাফ গেমসে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ১-০ ব্যবধানে। এরপর ১৯৯৩ ঢাকা সাফ গেমসে নেপালের কাছেই ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজকের মতো সেদিনও দর্শকের জোয়ার ছিল স্টেডিয়ামে।
মাত্র এক বছর আগেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কাঠমান্ডুতে নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২৬ আগস্ট বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ১-০ ব্যবধানে নেপালকে হারিয়ে কিছুটা হলেও সাফে হারার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে সিলেটে হেরে সে জয়ের আনন্দ মিইয়ে গেল অনেকখানি।
অতীতের নেপাল-দুঃখের সঙ্গে আজকের প্রীতি ম্যাচটির হয়তো তুলনা চলে না। দর্শকদের আগ্রহ, অনেক দিন পর মাঠ ভেঙে দর্শক নেমে উত্সবের আবহ তৈরি করা, ৭৮ মিনিট পর্যন্ত সিরিজে এগিয়ে থাকার পরও সিরিজ জিততে না পারা; নেপাল আরেকটি দুঃখগাথা হয়ে রইল বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য!