ইয়াহিয়ার পালিত কুকুররা এখনও দেশের মাটিতে আছে: প্রধানমন্ত্রী
ইয়াহিয়ার পালিত কুকুররা এখনও দেশের মাটিতে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব’ স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা যেন কোনোভাবেই মাথাচাড়া না দিতে পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। দেশের ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
অনেকে স্বজন হারানোর বেদনার কথা বলেন উল্লেখ কলে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমি যে সব হারা। মা বাবার আত্মা যেন শান্তি পায় তাই সব হারানোর বেদনা নিয়েই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি ‘ভোগে নয় ত্যাগেই তৃপ্তি’।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভোগের রাজনীতি বাদ দিয়ে ত্যাগের রাজনীতি করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভোগের রাজনীতি করেছে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখনও যারা করছে তারাও হারিয়ে যাবে।
এসময় তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নেতৃত্ব নিজের চাওয়া-পাওয়াকে বড় করে দেখে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
নিজের জীবন নিয়ে পরোয়া করেন না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, মৃত্যুকে আমি পরোয়া করি না। জীবন দেওয়ার মালিক আল্লাহ, আবার নেওয়ার মালিকও আল্লাহ। আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে মাথা নত করি না। আমি একটা নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। নিজের জীবনের দিকে তাকাই না। কি পেলাম তা নিয়ে ভাবি না।
শেখ হাসিনা বলেন, কথা দিয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। বিচার করেছি। যাদের বাকি আছে তাদেরও করবো।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ছাত্রনেতা হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে। বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের যে কোনো আন্দোলনে ছাত্রলীগের অবদান ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।
ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, আমারও ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি কাজের পেছনে অনুপ্রেরণাদাত্রী হিসেবে কাজ করতেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গমাতার সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগাযোগ রাখতেন। প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনেও অনুপ্রেরণা দেন বঙ্গমাতা।
৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ মানুষের মাঝে প্রেরণা দিয়েছে। এটা ঐতিহাসিক ভাষণ। সেই ভাষণ আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যা মানবজাতির আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ট ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। এই ভাষণ একটি জাতিকে প্রেরণা জুগিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ অর্জনের দিতে ধাবিত করেছিল। তিনি যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তার লক্ষ্য ছিল বিজয় অর্জন। তার ডাকে বাঙালিরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে।স্বাধীনতার পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে এ জাতির দায়িত্ব নেন। তিনি দেশকে গড়ে তুলতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই ভাষণ বাজাতে দিতেন না। কত নেতাকর্মী এই ভাষণের জন্য জীবন দিয়েছেন। কত নেতাকর্মীর উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই ভাষণকে থামানো যায়নি। তারা রক্ত দিয়েছে কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ তারা বন্ধ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কর্নেল ফারুক, রশিদ ও মেজর হুদাকে দিয়ে এরশাদ পার্টি করিয়েছিলেন। পরে খালেদা জিয়া তাদের সংসদে বসান। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে খালেদা জিয়া তাদের বিরোধীদল করেছিলেন। কিন্তু ৩০ মার্চই তাদের পতন ঘটে।
শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৮ শতাংশ হতে হবে এমন নির্দেশনা শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, পাসের হার ৯৮ শতাংশ হতে হবে। এদেশের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। দেশ এখন ডিজিটাল। এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু লোক আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না। ইয়াহিয়া খানের সময় তারা দালালি করেছে, পা চাটা কুকুর ছিল। এখনও তেমন কিছু পা চাটা কুকুর রয়েছে। এরা ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের সময় ঘুমিয়ে থাকে। এদের বিষয়ে ছাত্রসমাজকে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও কড়া সমালোচনা করেন সমাবেশে। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে এরশাদের সময় তার পুলিশ রকিব আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে সময় এরশাদের দোসর ছিল খালেদা জিয়া। এজন্যই পরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা রকিবকে প্রমোশন দিয়েছিল।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শমসের মুবিন একটা বেঈমান। তার পায়ে গুলি লেগেছিল। বঙ্গবন্ধু তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু তিনিই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেন। তিনি মুনাফেক। বেঈমান।
উল্লেখ্য, বিকেল সাড়ে চারটায় সমাবেশের মঞ্চে আরোহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শুরু করেন বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন তিনি।
এই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তসহ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।