এমপিওভুক্তির মানদণ্ড তৈরির জন্য নীতিমালা করার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির মানদণ্ড তৈরির জন্য নীতিমালা করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন।
পরিদর্শনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, এমপিওভুক্ত করার জন্য আবেদন আসে। এরজন্য একটা নীতিমালা করেন। কতজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেব- তা নির্ধারণ করে একটা নীতিমালা করতে হবে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিশ্ব পরিবর্তনশীল। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে আমাদের ছেলে- মেয়েদের উন্নতি হবে।
এসময় এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফলের জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণায় জোর দিতে হবে। কমার্স আর টেকনিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানের ওপর জোর দিতে হবে। বিজ্ঞান ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না।
প্রধানমন্ত্রী প্রতি জেলায় অতন্ত একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন। মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের বিষয়ে নজর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার কারিকুলাম ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি পাঠ্য পুস্তক ক্রমান্বয়ে ই-বুকে রূপান্তর করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই অঞ্চলের শিক্ষার ভিত্তিটা মাদ্রাসা দিয়েই শুরু। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রসার এবং উন্নয়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) স্থাপনের প্রক্রিয়া দ্রত সম্পন্নের তাগিদ দেন। তিনি পরিকল্পিতভাবে প্রত্যেক জেলায় স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মাসিক বেতন প্রদান (এমপিও) নীতিমালা প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিবছর অনেক স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির আবেদন পেয়ে থাকি। কিন্তু আমার মনে হয় প্রতি জেলায় কতটি স্কুল ও কলেজ এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষক দেয়া হবে এ সম্পর্কিত একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা চলতি বছরের জানুয়ারিতে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যেক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষাখাতে ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে। এ জন্য স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। তবে শিক্ষার উন্নয়নে এই অর্থ অবশ্যই একটি নিয়ম ও কাঠামোর মধ্যে ব্যয় হওযা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা পাহাড়ী জেলাগুলোর যাতায়াতে অসুবিধা এমন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার এবং চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ আবাসিক অন্যান্য ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এটি স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।
ভুটান সরকারকে পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যায়টির নকশা প্রণয়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির স্থাপত্য নকশা সংশ্লিষ্ট এলাকায় পারিমান্ডলিক সৌন্দর্যের সাথে সঙ্গতি রেখে দৃষ্টিনন্দন করে প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং এটি দেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হবে।
তিনি বলেন তাঁর সরকার চরাঞ্চলের গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন সুবিধা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ে স্বাগত জানান। এ সময় শিক্ষা সচিব মুহাম্মদ সাদিক ও মন্ত্রণালয়টির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।