রাজধানীর পথে পথে ভোগান্তি, দায় নিতে রাজি নয় কোন অধিদফতর
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাতেও ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
বাংলাদেশের ৬২ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ১২ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক এবং এলজিইডি নিয়ন্ত্রিত ৫০ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।
ঢাকা জেলার জাতীয় তথ্যকোষ থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরে রাস্তার সংখ্যা ১৫৯৮টি যার দৈর্ঘ্য ৪১০৭ কিলোমিটার। এসব পাকা সড়কের বেশ কিছু অংশ এতটাই নাজুক যে, নতুন করে নির্মাণ না করলে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে। খানাখন্দের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
যানজটের দুর্ভোগে বিষয়ে বুয়েটের গবেষণায় সারা দেশের দুই শতাধিক স্থানকে দুর্ঘটনার স্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক স্পট। এর সবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীর এসব স্পটে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণ কেড়ে নেয়া দুর্ঘটনাও এসব স্পটেই ঘটে থাকে। রাস্তাঘাটের দুরবস্থা প্রাণনাশের সেই শংকাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে অস্বাভাবিক খানাখন্দে ভরা। আর অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর অধিকাংশই ডুবে যায়। উবে যায় কার্পেটিং। ইটপাটকেলগুলো বেরিয়ে পড়ে। যানবাহনের চাপে নতুন করে সৃষ্টি হয় খানাখন্দ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, মৌচাক, সাতরাস্তা, শান্তিনগরসহ কয়েকটি রাস্তায় ফ্লাইওভার নির্মাণ ও রাস্তা মেরামতের জন্য রাস্তা খুঁড়ে বড়-বড় গর্ত করা হয়েছে। ঢাকার রাস্তা আজ পুকুর কিংবা গর্তে পরিণত হয়ে চলেছে। বৃষ্টি হলেই এসব এলাকায় হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে।
নগরীর সড়কগুলোর এই বেহাল দশা নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সরকার জনদুর্ভোগ কমাতে শুধু নগরী নয় দেশব্যাপী সড়কপথে দুর্ভোগ কমাতে মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সড়ক পথে সমস্যা কাটিয়ে উঠব। তবে রাজধানীর সড়কগুলো যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়; এগুলো স্থানীয় সরকার এবং আংশিক সওজ-এর আওতাধীন।
রাজধানীর এ বেহাল অবস্থা সম্পর্কে সকলেই অবগত। তবুও দায় নিতে রাজি নয় কোন বিভাগের কর্মকর্তারাই। সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক জানান, ঢাকা শহরের সড়কগুলো সিটি কর্পোরেশনের অধীন, এগুলো আমাদের আওতায় নয়। দীর্ঘদিন ধরে যে ফ্লাইওভার দুটি তৈরি হচ্ছে সেটা এলজিইডির আওতায়।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী এম ফিরোজ ইকবাল বলেন, ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের দায়-দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তারা বলেন, আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবহন সমস্যা নিয়ে কাজ করি। সড়কের ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আনসার আলী মুঠোফোনে জানান, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে যেসব রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই সময় শর্ত ছিল, ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন সময় তারাই এই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের কিছু করার নেই।
এখন পুরো স্পষ্ট যে, রাজধানীর রাস্তাঘাটগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্য তথা দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নগরবাসীর দুর্বিষহ যাতনার কারণে পরিণত হয়েছে।