মধ্যবর্তী নির্বাচনের টোপ, পাল্টা কৌশল বিএনপির
মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ও সরকারের কৌশল নিয়ে শুরু হয়েছে এ গুঞ্জন। সূত্র জানায়, বিরোধী রাজনৈতিক জোটের দাবি ও আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবছে সরকার। তবে সে নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে নিয়ে সম্ভাব্য একাধিক বিকল্প কৌশলে হাঁটছে সরকার। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও ঘরোয়া আলাপে তাদের ঘনিষ্ঠজনদের তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর স্বীকৃতি ও সমর্থন পায়নি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দৃশ্যত বাংলাদেশের প্রভাবশালী বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সম্পর্ক রক্ষা করলেও তা নিয়ে স্বস্তিতে নেই সরকার। প্রতিনিয়ত দেশে-বিদেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও প্রতিবাদমুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরকারকে। বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে যে সম্পর্ক তা ‘রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র’ সম্পর্কের- বেশি কিছু নয়। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের একটি চাপের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে সরকারকে। একদিকে সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য পন্থা খুঁজে বের করে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন কূটনীতিকরা। অন্যদিকে দেশে প্রধান বিরোধী জোটের পাশাপাশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আরেকটি জোট। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয়ে বিকল্প পথ নিয়ে ভাবছে সরকার। পাশাপাশি বিকল্প কৌশলগুলোর বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে সে ক্ষেত্র। রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনের অযোগ্য করার কৌশলে অনেক দূর এগিয়েছে সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাজার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারের কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন। একই ভাবে দলের দ্বিতীয় প্রধান প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমান একাধিক মামলার আসামি। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। কিন্তু সেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি। বর্তমানে একাধিক মামলায় তাকে ফেরারি ঘোষণা করেছে আদালত। সম্পূরক চার্জশিটে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি করা হয়েছে তারেক রহমানকে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাজা ঘোষণা হতে পারে। এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্তত শতাধিক শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপির অন্তত দেড় শতাধিক নেতাকে নির্বাচনের অযোগ্য করা হতে পারে। সূত্র জানায়, দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে ভাঙন ধরানো এবং মহাজোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সেটা মহাজোটে যোগদান কিংবা গৃহপালিত বিরোধী জোটে রাখার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হতে পারে। ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়ায়ও অনেক দূর এগিয়েছে সরকার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে কয়েকজন নেতা সরে গিয়ে নাম কা ওয়াস্তে একটি জোট গঠন করেছেন। বিএনপি সূত্র জানায়, একদিকে দলের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করে রাখা অন্যদিকে জোটকে দুর্বল করে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে পারে সরকার। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মামলার ভয় ও সুযোগের লোভ দেখিয়ে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করাতে পারে বিএনপির কিছু নেতাকে। ইতিমধ্যে তেমন লক্ষণও প্রকাশ পেয়েছে। নেতারা জানান, দলের স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্যকে এ ব্যাপারে সন্দেহের চোখে দেখছে নেতাকর্মীরা। এছাড়া সে নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কিছু নেতাকে রাখা হচ্ছে সন্দেহের তালিকায়। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও দল এবং জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাবে না ২০দলীয় জোট। সে ক্ষেত্রে গৃহপালিত বিরোধী দলসহ একটি খণ্ডিত বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করবে সরকার। এতে সফল হলে একদিকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বেশি সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি যেমন প্রমাণ করতে পারবে সরকার অন্যদিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বিএনপির নির্বাচন বিমুখতা। সূত্র জানায়, সরকার কৌশল বাস্তবায়নে আরেকটি বিকল্প কৌশল নিতে পারে। সেক্ষেত্রে সাজা হলেও গ্রেপ্তার করা হবে না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনার মাধ্যমে ঝুলিয়ে রাখা হবে সে রায়। তারপর চলবে দেনদরবার। তখন খালেদা জিয়া আপস এবং আপসহীনতার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে পরবর্তী পরিস্থিতি। এদিকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এলে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয় তাদের পাল্টা কৌশল। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের ঐক্য ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে শিগগিরই ধারাবাহিক একটি মতবিনিময়ের উদ্যোগ নিতে পারেন খালেদা জিয়া। এদিকে কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির হাল ধরতে দেশে ফিরছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দলের একটি অংশ বিষয়টিকে ইতিবাচক দেখলেও বড় অংশটিই এমন গুঞ্জনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের খেলা। সরকারের মামলা ও গ্রেপ্তার কৌশলের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকটা বিপর্যস্ত। ফলে বিএনপির রাজনীতিও কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। তবে এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় না বিএনপি জনমতের রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে গেছে। তারা বলেন, এখনই ডা. জুবাইদা রহমানের হাতে বিএনপির হাল তুলে দেয়ার অর্থ দাঁড়াবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গেছেন।
সূত্র: মানব জমিন।