বিএনপির টার্গেট জানুয়ারি: ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গণসংযোগ
নতুন নির্বাচনের দাবিতে আগামী জানুয়ারিকে আন্দোলনের চূড়ান্ত টার্গেট করে এগুচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এর আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন গণসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে ‘ওয়ার্মআপ’ করবেন জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলায় বেগম জিয়ার সফরসূচি নির্ধারিত হয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের ফের রাজপথমুখী করতেই নতুনভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ে যাওয়ার আগে বেগম জিয়া মতবিনিময় করবেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর ঢাকায় একটি বড় ধরনের শোডাউনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের নতুন করে একটি আলটিমেটামও দিতে পারেন তিনি। এর মধ্যে সরকারের মনোভাব পরিবর্তন না হলে নতুন বছরের শুরু থেকেই লাগাতার হরতাল, অবরোধ, গণঅবস্থান, ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।জানা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত বেগম জিয়ার ওয়ার্মআপ কর্মসূচিতে বাধা এলে এর আগেও রাজপথে নামতে পারে বিএনপি জোট। তবে এ সময় সংলাপ-সমঝোতার দুয়ার খোলা রাখার পাশাপাশি নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে কূটনৈতিক চাপও প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি, অসমাপ্ত জেলাগুলো পুনর্গঠন ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোটের শরিক দলগুলোও নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালাবে।এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আমরা আরও কিছু দিন গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করব। চলতি মাসেই ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) কয়েকটি জেলা সফর করবেন। নভেম্বরেও কয়েকটি জেলা সফর হতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরকে গোছাতেও আরও অন্তত দুই-আড়াই মাস সময় লাগতে পারে। এ সময়ে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। এর পর সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের রি-অ্যাকশন আসে তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি এর মধ্যে সরকারের মনোভাব ইতিবাচক না হয় তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে। জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য সংলাপ-সমঝোতার পথ খোলা রেখেই চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামবে বিএনপি। সরকারের মনোভাব পরিবর্তন হলে বিএনপিও সহিংস কর্মসূচি থেকে সরে আসবে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগেও চেষ্টা চালাবে বিএনপি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর নতুন করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করছে বিএনপির কূটনৈতিক মহল। বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাপ প্রয়োগ করতে তাদের সহযোগিতাও চাইছে দলটি। প্রায় অধিকাংশ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত বলে দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক এক নেতা জানান। একইভাবে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, সমাজের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নির্বাচনের একদফা দাবিতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে বিএনপির।বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধিরাও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। কংগ্রেস সরকারের কঠোর মনোভাবের তুলনায় মোদি সরকার বিএনপির প্রতি অনেকটাই ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ সম্পর্ককে জোরালো করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন তারা।এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বলেন, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই গত ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের নির্বাচনের বৈধতা দেয়নি। নির্বাচন-পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা বললেও বৈধতার প্রশ্নে তারা এখনো আগের অবস্থানেই রয়েছেন। প্রভাবশালী সব রাষ্ট্রই চাচ্ছে সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। প্রধানমন্ত্রী সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তেও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সব দেশই চায় বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই দাবি আদায়ে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।জানা গেছে, গণসংযোগ করতে চলতি মাসে কয়েকটি জেলায় জনসভা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২৩ অক্টোবর নীলফামারী জেলা সফর চূড়ান্ত হয়েছে তার। এর পর ৩০ অক্টোবর নাটোরে জনসভা করবেন তিনি। কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাটোর জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি সভা শুরু হয়ে গেছে। জনসভায় কয়েক লাখ লোকসমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এদিকে কুমিল্লা জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশীদ ইয়াসিন জানান, চলতি মাসে সম্ভব না হলেও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রধান অতিথি করে জনসভা করার চিন্তাভাবনা করছি। তবে পরিস্থিতি অনুকূল হলে এর আগেও হতে পারে। নভেম্বরে নওগাঁ, খুলনা, চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি জেলা সফর করতে পারেন বেগম জিয়া। এর আগে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের একটি সমাবেশ করার চিন্তাভাবনাও করছে বিএনপি জোট।সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সংলাপ-সমঝোতা ও মধ্যবর্তী নির্বাচন নাকচ করে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বিএনপি আপাতত আন্দোলনের বিকল্প কিছু ভাবছে না। কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি আন্দোলনকে সামনে রেখেই বিএনপি জোটের সব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে আন্দোলনে প্রস্তুত হওয়ার জন্য বেগম জিয়া নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নতুন কমিটি করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এ সময়ের মধ্যে দলের জাতীয় কাউন্সিলও করতে পারে বিএনপি। অন্যথায় নির্বাহী কমিটির জরুরি একটি সভা করে আন্দোলনে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন বেগম জিয়া।দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে- আপাতত আমরা এমন কোনো কর্মসূচিতে যেতে চাই না। আশা করি, সরকার আমাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে খুব শীঘ্রই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত সংলাপ-সমঝোতারও অপেক্ষায় থাকবে। তবে সরকারের মনোভাব যদি আগের মতোই থাকে তাহলে যা হওয়ার তা-ই হবে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।