পাঁচ বছরে সারাদেশে ২০ হাজার ৬৮০ জন খুন
আগাম নির্বাচনের চাপ এবং আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক কারণে খুনোখুনির ঘটনা কমেছে। তবে সামাজিক অস্থিরতার কারণে খুনের ঘটনা বাড়ছে। সাধারণত পারিবারিক কলহ, অর্থ লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে এরা খুন হয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত-এই পাঁচ বছরে সারাদেশে ২০ হাজার ৬৮০ জন খুন হয়েছেন। শুধু চলতি বছরেই আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ৩ হাজার ৬১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে রাজধানীতে ১৭২ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ জন খুন হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। বাকি ১৬২টি খুনের বেশিরভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্রে প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর বাইরেও রাজনৈতিক কারণে খুনের ঘটনা অনেক কমেছে বলে জানা গেছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে রাজনৈতিক খুন অনেক কম। তবে ঢাকা, ফেনী, যশোর, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বরিশাল, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় চলতি বছর কয়েকটি রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য সারাদেশে মোট খুনের শতকরা এক ভাগ ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক কম।
প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪/১৫ জন খুন হচ্ছেন। তবে এসব খুনের বেশিরভাগ ঘটছে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে। বাবা অথবা মা নিজের শিশু সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করছেন। বাবা অথবা মাও খুন হচ্ছেন সন্তানের হাতে। রাস্তা বা ডোবা থেকে উদ্ধার হচ্ছে তরুণীর খণ্ডিত লাশ। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে সচেতন নাগরিক এমনকি জনসাধারণের মাঝে। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে হত্যাকাণ্ড।
সম্প্রতি কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে বাসায় ঢুকে টিভি উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মগবাজারে বাসায় ঢুকে গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়। কেরানীগঞ্জে একই পরিবারের চারজনকে হত্যা করা হয়। এছাড়া কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিজ বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় তিন মেয়েসহ মাকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চিংড়ি মাছের ঘের দখল নিয়ে নিহত হয়েছেন একজন। হবিগঞ্জে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে এক স্কুল ছাত্রী ও এক বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সৎ মায়ের হাতে খুন হয়েছে এক শিশু। গাইবান্ধায় প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে এক যুবককে।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত মন্তব্যে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার দাবি করেন, বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধ সেভাবে বাড়েনি। ব্যাপক পুলিশি তত্পরতার কারণে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ড, অপহরণ বা ইভটিজিংয়ের মত অপরাধ আইনের মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। সমাজের বিদগ্ধজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।