রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দুর্বলতাই বিএনপির শত্রু-কাজী সিরাজ

sirazদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একটা সঙ্কটকাল যাচ্ছে। দলের ভেতর থেকেই এ সঙ্কটের সৃষ্টি। দলের মূল নেতৃত্ব যদি এ সঙ্কট সৃষ্টির পেছনে তাদের দায়টা স্বীকার করার সৎ মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেন, তাহলে এ সঙ্কট কাটিয়ে তোলা কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়। বিএনপিতে দুটি সঙ্কটই প্রকট_ ১. রাজনৈতিক, ২. সাংগঠনিক। একটি সুস্পষ্ট রাজনীতি এবং আদর্শিক ভিত্তি নিয়েই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এ দলের যাত্রা শুরু। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রের মুক্তি ও বিকাশ এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যই ছিল জিয়ার রাজনীতির মূল কথা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ছিল তার ও দলের আদর্শিক ভিত্তি। বিএনপির ঘোষণাপত্রে এসব কথা বিধৃত আছে। কিন্তু জিয়ার সেই বিএনপি এখন নেই। খালেদা জিয়া ও পরবর্তীকালে তারেক রহমান মাতা-পুত্রের নেতৃত্বে শেকলে বন্দি হয়ে বিএনপি এখন লক্ষ্যচ্যুত, আদর্শচ্যুত। দলের অনুসারী ও অনুরাগীরাই এখন ক্ষোভের সঙ্গে এ অভিযোগ করেন। জোট রাজনীতি করতে গিয়ে, বিশেষ করে জোটের রাজনীতির নামে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে লীন হয়ে নন্দিত দলটি এখন নিন্দিত। নিন্দিত স্বকীয়তা বিসর্জনের জন্য, নিন্দিত আদর্শচ্যুক্তির জন্য। ক্ষমতা, শুধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করতে গেলে আদর্শ সেখানে গৌণ হয়ে যায়। এ খারাপ প্রবণতা আমরা আওয়ামী লীগের মধ্যেও লক্ষ্য করেছি। বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগও নিজেদের কাছে টেনেছে, কাছে রেখেছে। আপস বা বন্ধুতা করেছে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, বাইরের দুনিয়ার দিকে তাকালেও দেখা যায়, অনেক দেশেই নির্বাচনের আগে কিংবা পরে রাষ্ট্রক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য জোটবদ্ধতার মেরুকরণ ও মিলনে চেষ্টা করা হয় যথাসম্ভব সমমনাদের নিয়ে জোট গড়তে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন_ হিন্দুত্ববাদী বিজেপির বিগত (প্রথম) সরকারের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস জোট বেঁধেছিল। মমতা ব্যানার্জি সেই সরকারের রেলমন্ত্রীও হয়েছিলেন। সে সম্পর্ক অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এখন তো একেবারে সাপে-নেউলে। ব্রিটেনসহ আরও কিছু দেশেই এখন জোট বা কোয়ালিশন সরকার দেখা যায়। বাংলাদেশেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটবদ্ধ রাজনীতির বাইরে কিছু ভাবছে বলে মনে হয় না। বিএনপি বলছে, তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট শুধুই ভোটের জোট। আমরা জানি, তাদের জোটে জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ শরিক। আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলও আছে তাদের সঙ্গে। এ কারণে বিএনপির ঘাড়ে উঠেছে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ পৃষ্ঠপোষকতার গুরুতর অভিযোগ। আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবী-সংস্কৃতিসেবীদের বিএনপির বিরুদ্ধে এ ক্যাম্পেইন খুবই সরব ও সফল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দুধ-কলা দিয়ে বুদ্ধিজীবী নামধারী কিছু সাপ পুষলেও প্রয়োজনের সময় তারা বিএনপিকে সাহায্য করছে না, করেনি। জামায়াতপন্থী-সমৃদ্ধ যে কথিত থিঙ্কট্যাঙ্কটি বিএনপি নেত্রীর ওপর খুবই প্রভাব বিস্তারকারী বলে ধারণা করা হয়, এরা জামায়াতের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ‘ডবল স্ট্যান্ডার্ড’ নীতির কোনো সমালোচনা করে না জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায়। কেননা, জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মৈত্রী (হোক সাময়িক) দোষের বললে বলতে হবে বিএনপিও একই দোষ করছে। সমালোচনা জাস্টিফাই করতে হলে বলতে হবে, বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে। কিন্তু ‘ঘুঘু’রা সে কথাটি তো বলবেন না জামায়াতের স্বার্থে। অথচ এটা বাস্তব ও সত্য, আওয়ামী লীগ একটি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করা হলেও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটেও কয়েকটি পরিপূর্ণ ধর্মভিত্তিক দল আছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ ভোটার মুসলিম। এ মুসলিম জনগণ ধর্মপ্রাণ; কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। অথচ এদের সমর্থন লাভের আশায় প্রধান দুই দলই ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলকেও জোটে ভিড়িয়েছে। ভোটের আশায় ও নেশায় ফতোয়াকে বৈধতা দিয়ে ধর্মান্ধ সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা সন্ধি করেছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের প্রশ্নে নীতি-আদর্শের বালাই আসলে দুই দলের কারও মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ একসময় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে তুলেছিল। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে যে পাতানো নির্বাচনটি হয়েছিল (বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় সংসদ) সেই নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব পরিচিত রাজনৈতিক দলই বর্জন করেছিল। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার মনে সন্দেহ জাগলো যে, বিএনপি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে চলে যাবে। চট্টগ্রামে এক জনসভায় তিনি খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করেই হুশিয়ারি দিয়ে বললেন, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা হবে জাতীয় বেঈমান। দুই দিন পরই তিনি সমগ্র জাতিকে বিস্মিত ও হতাশ করে জানালেন, তার আওয়ামী লীগ এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে যাচ্ছে। এ সুবিধাবাদী সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই তাদের ১১ দলীয় জোট ভেঙে যায়, গঠিত হয় বাম প্রগতিশীলদের পাঁচদলীয় জোট। অন্য কাউকে নির্বাচনে নিয়ে যেতে রাজি করাতে না পেরে রাজনৈতিকভাবে অপমানজনক অবস্থায় পড়েন শেখ হাসিনা। শরণাপন্ন হন জামায়াতে ইসলামীর। আওয়ামী লীগের কথায় তারা রাজি হয় এবং জামায়াতও ১৯৮৬ সালের সেই পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ বলার একটা পথ খুঁজে পায় যে, আমরা একা নই, জামায়াতও নির্বাচন করছে। একই পথের পথিক হলো আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। পঞ্চম জাতীয় সংসদেও জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মধুর মিলন হয়েছিল। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে একবার একটি বিলে বিএনপিকে ভোটে হারিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে জেতানোর জন্য গোলাম আযমের কাছে ধরনা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। পঞ্চম জাতীয় সংসদে সরকার গঠনে বিএনপিকে জামায়াত সমর্থন করেছিল। বিএনপি তাদের উপহার দিয়েছিল দুটি সংরক্ষিত মহিলা আসন। অষ্টম সংসদে জামায়াতকে দুটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেয়ায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে জামায়াত নেতারা একটি গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয় যে, পঞ্চম সংসদে সরকার গঠনে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সমর্থন চেয়ে আরও বেশি মন্ত্রিত্ব অফার করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে জামায়াত আওয়ামী লীগের পক্ষেই ছিল। অসহযোগসহ যুগপৎ কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলনে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিল। এসবই সত্য, মিথ্যা নেই কোথাও। তবে পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সঙ্গে রেখেছে কখনও কখনও; কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ধারণ করেনি আওয়ামী লীগ। আবার এটাও ঠিক যে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াত তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থাকাকালীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একবারও তারা রাজাকার-আলবদর গালি শোনেনি।

বিএনপির অবস্থাটা ভিন্ন। দলীয় রাজনীতি-আদর্শ বাদ দিয়ে তারা জামায়াতি দর্শনই ধারণ করে ফেলেছে বলে মনে হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে এত বড় অবদান নিয়ে গর্ব করতেও তারা সঙ্কোচ বোধ করে, পাছে না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গর্ববোধ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী রুষ্ট হয় সে কারণে। ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি দিবসে তাদের দায়সারা গোছের কর্মসূচি দেখে শহীদ জিয়ার আত্মাও যেন কষ্ট পায়। জিয়ার আত্মার কষ্ট তারা মানে; কিন্তু জামায়াতকে কষ্ট দিতে চায় না। এখানেই শহীদ জিয়ার বিএনপির দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে বর্তমান বিএনপির জামায়াতপন্থী ও জামায়াত তোষণ রাজনীতির সংঘর্ষ। খালেদা জিয়াকে এ সংঘর্ষের নিরসন করতে হবে। চরম সাম্প্রদায়িক দক্ষিণপন্থীরা চিরকালই হয় প্রতিক্রিয়াশীল; এরা কখনও জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী হয় না। বিএনপি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রীদের দল_ ঘোষণাপত্রে সে কথা বললেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপি এখন শুধুই ইসলামী চেতনাধারী দল বলে সাধারণ্যে বিবেচিত। ফলে দলের মূল স্রোত এতে রুষ্ট। দলে মূলধারার রাজনীতি না থাকলে প্রাণশক্তিও থাকে না। তখন নির্ভর করতে হয় অন্যের শক্তির ওপর। বিএনপিকে তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে, নাকি নিজস্ব শক্তিতে বলিয়ান হবে। এ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বিএনপির সাফল্য-ব্যর্থতা।

বিএনপির সাংগঠনিক সঙ্কটও তীব্র। দলটির উপরিকাঠামো দুর্বল ও বেমানান। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা আছে। তবুও তুলনামূলক বিচারে আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম আর বিএনপির স্থায়ী কমিটি সমমানের। পাঠক, নাম উল্লেখ করলাম না। আপনারাই মিলিয়ে দেখুন ফারাকটা কত! দুই দলের উপদেষ্টা কাউন্সিলের কথা ভাবুন। একই দৃশ্য। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব কাঠামোতে যারাই থাকুন, রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে নেই কথাটা জোর দিয়েই বলা হয়। রাজনৈতিক দলে দুটি ‘গ্যাং অব ফোর’ আছে, তারা কারা রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিমাত্রই নিশ্চয় ওয়াকিবহাল। লক্ষণীয় এ ‘গ্যাং অব ফোর’ এর দিক থেকেও আওয়ামী লীগ এগিয়ে, বিএনপি পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সমমানের বা কাছাকাছি মানের লোক তো লাগবে। আর আন্দোলন? ক্যাডারনির্ভর সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করবে সুবিধাবাদী, বিনা পুঁজি, বিনা শ্রমে কোনো বৈধ উৎস ছাড়া একমাত্র দল ও সরকারের সঙ্গে যুক্ত থেকে মাত্র ক’বছরে কোটি কোটি, কেউ কেউ শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া পোশাকি নেতারা? যখন কিছুই ছিল না, তখন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। ঝুঁকিও নিয়েছেন অনেকে। এরশাদের আমলে কিছু এবং শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ সালের সরকার আমলে নিয়েছেন বেশ। কিন্তু এখন এত হয়েছে যে, হারাবার ভয় খুবই বেশি। সম্পদ ও সুখের টানে জেলেও যেতে চান না। জুলুম-নির্যাতনের ভয় তো আছেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এদের দিয়ে খালেদা জিয়ার চলবে না। ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের যে ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন তাও সফল করতে পারবেন বলে মনে করেন না পর্যবেক্ষকরা। বিএনপির অভ্যন্তরে চরম সাংগঠনিক কোন্দলের বিষয়ে লুকোছাপা কিছু নেই। শুধু মূল দলের নয়, অঙ্গ ও সহযোগী দলগুলোতেও। এরই মধ্যে শ্রমিক দলে কমিটি হয়েছে দুটি। মূল দল কিছু বলছে না। অনেকে বলছেন যে, নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কারও হাত থাকতে পারে এ অঙ্গ দলটির দুই টুকরা হওয়ার পেছনে। টাকা দিয়ে নাকি দলে নেতা হওয়া যায়। কমিটিও নাকি বেচাকেনা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর কারও কারও প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটা আস্থার ভাব জন্মেছিল। সেই বিশ্বাসের জায়গাও নাকি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষমতায় গেলে এরা আবার দাপট দেখাতে পারবে; কিন্তু দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য কী এরা সাহসী কোনো ভূমিকা রাখবে, না রাখতে পারবে? কাজেই খালেদা জিয়ার জনসভায় লাখ লাখ লোক হলে কী হবে, তিনি আন্দোলন করতে চাইলেই বা কী হবে? নেতৃত্ব কাঠামোয় পরিবর্তন না আনলে, জনগণ যাদের বিশ্বাস করে না, কর্মী-সমর্থকরা যাদের আন্দোলনের মাঠে পায় না, তাদের ওপর ভরসা বাদ দিতে হবে। নতুন নেতৃত্ব-শক্তি গড়ে তুলতে হবে বিএনপিতে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের মতো দলে এটা সম্ভব।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ণয় করা (জোট যাতে শুধু ভোটেরই হয়, আদর্শের না হয়), বিএনপিকে শহীদ জিয়ার রাজনীতির মূল সড়কে ফিরিয়ে আনা এবং একটি কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্নির্মাণ করাই এখন বিএনপির সামনে প্রধান কাজ। রাজনীতি যদি ঠিক হয়, জনসমর্থন থাকলে অনেক সময় দুর্বল সংগঠন নিয়েও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে নেতৃত্বের জন্য খাঁটি সোনাও বেরিয়ে আসে। সেজন্যও দুটি কাজ আছে_ কঠিন কাজ। ১. বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামো বাতিল করে দুর্নীতিমুক্ত সৎ ও সাহসী নবীন-তরুণদের সামনে নিয়ে আসা এবং কোন্দল ও ভেদাভেদ দূর করে, অবমূল্যায়নের কারণে অভিমানে অথবা অন্য কারণে যারা দূরে সরে আছে, দূরে ঠেলে রাখা হয়েছে, সবাইকে কাছে টেনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, ২. খালেদা জিয়াকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতো একক ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করা। তা না হলে আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠন ও তাদের দলীয় সরকারকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যতই অর্থহীন হোক_ কাবু করা এত সহজ হবে না।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend