মেসির পেনাল্টি মিসের রহস্যটা কী?
তাঁর নিন্দুকেরা খোঁচা মেরে বলতে পারেন, ‘ও তো মেসি নয়, মিসি। এত এত পেনাল্টি যে মিস করে।’ আর তাঁর ভক্তেরা বলতে পারেন, ‘এসব বলে লাভ নেই। সস্তা গোল মেসি করেন না। পেনাল্টি থেকে নয়, তিনি সৌন্দর্যের ফুল ফোটানো সব গোল করতেই ভালোবাসেন।’
পক্ষে-বিপক্ষে চাপান-উতোর যা-ই হোক, এই সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, লিওনেল মেসির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দেখা দিয়েছে পেনাল্টি কিক। মাত্র ২৪-২৫ বছর বয়সেই যে খেলোয়াড়টা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন, সর্বকালের অন্যতম সেরাদের সঙ্গে উচ্চারিত হয় যাঁর নাম, যে খেলোয়াড়টি একের পর এক রক্ষণ-বাধা জাদুমন্ত্রের মতো বিবশ করে দিয়ে গোল করতে জানেন, সেই মানুষটা ১২ গজ দূর থেকে স্পট কিক নিতে এলেই কেন জানি সব গড়বড় করে ফেলেন।
ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ চারটি স্পট কিকের তিনটিই মিস করেছেন মেসি। সর্বশেষ দুটো পেনাল্টি থেকেই গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত মাসের শেষের দিকে লেভান্তের পর কাল ব্রাজিল ম্যাচে। মেসির পেনাল্টি মিসটা চোখে পড়বেই। কারণ ক্লাবের হয়ে একটি দুটি নয়, দশ দশটি পেনাল্টি মিস করেছেন মেসি। এর মধ্যে বার্সা সমর্থকদের মনে সবচেয়ে বেশি বিঁধে আছে ২০১১-১২ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের ফিরতি লেগের সেই মিসটি। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছিল বার্সা। অথচ মেসি পেনাল্টি থেকে গোলটা করলে ফাইনালে উঠত তারাই। কিন্তু মেসির পেনাল্টি ক্রসবারে ধাক্কা লেগে ফিরে আসে।
সে সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, বার্সেলোনা দলে স্পট কিক নেওয়ার মতো এত ভালো ভালো খেলোয়াড় থাকতে মেসিকেই কেন পেনাল্টিটা নিতে হবে। জাভি তখন সেরা ফর্মেও ছিলেন। কিন্তু কোনো কোচই মেসিকে স্পট কিকের এই দায়িত্ব থেকে সরাননি। কিংবা কে জানে, হয়তো মেসিই সরে যেতে চান না।
কিন্তু কেন? পেনাল্টি থেকে গোল করার হার মেসির এত কম কেন? পেনাল্টি নেওয়ার সময় তো আর মেসির মস্তিষ্কের এমআরআই করানো সম্ভব নয়। হলে এর একটা ব্যাখ্যা মিলত। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একের পর এক পেনাল্টি ব্যর্থতা মেসির মনের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। মেসির আত্মবিশ্বাসটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। ফলে কিক নেওয়ার সময় তিনি ভীষণ নার্ভাস থাকেন, পুরোনো ব্যর্থতার স্মৃতি তাঁর মনে উঁকি দিয়ে যায়।
মেসির জন্য যেটি মানসিক বাধা, প্রতিপক্ষের জন্য সেটিই আবার মানসিক সুবিধা। মেসির পেনাল্টি শটের দুর্বলতাটাও প্রতিপক্ষ দলের কাছে এখন প্রকাশিত রহস্য। কালকের ম্যাচের পর ব্রাজিলের গোলরক্ষক কোচ ক্লদিও তাফারেল আবার সেই দাওয়াইটা ফাঁসও করে দিয়েছেন। মেসির পেনাল্টি ঠেকাতে হলে গোলরক্ষককে ডাইভটা দিতে হবে একদম শেষ মুহূর্তে, সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু দেরিতে। তাহলেই নাকি বোঝা যায়, মেসি শটটা নিতে চলেছেন কোন দিকে!
মেসির জন্য চ্যালেঞ্জটা তাই বাড়ছে। তবে এটা সব খেলোয়াড়েরই হয়। ক্রিকেটেও অনেক সময় দেখা যায়, কোনো খেলোয়াড় পর পর কয়েক ম্যাচে ক্যাচ ফেলে দিলে তাঁর ক্যাচ ফেলার হার আরও বেড়ে যায়। কোনো একটা নির্দিষ্ট শট খেলতে গিয়ে আউট হলে সেই শটে আউট হওয়ার প্রবণতাও বাড়ে। কারণটা পুরোপুরি মানসিক।
বড় খেলোয়াড়দের পার্থক্য এখানেই, তাঁরা সেই মানসিক বাধাটাও জয় করতে জানেন। মেসিও পেনাল্টি-ভূতটা একদিন তাড়াবেন নিশ্চয়ই!