দেশে ফিরতে আকুল লতিফ সিদ্দিকী, ফিরলেই গ্রেপ্তার
পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সদ্যসাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই দেশে ফেরার প্রত্যয় জানিয়েছেন। এদিকে দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার দৈনিক কালের কণ্ঠের সাথে এক সাক্ষাৎকারে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমেরিকায় আরাম-আয়েশে জীবন কাটাতে পারতাম। তার পরও আমি কলকাতায় চলে এলাম। আমি বাংলাদেশেও যাব। পরিস্থিতিটা একটু স্বাভাবিক হোক।
কলকাতায় কোথায় আছেন তিনি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আছি কলকাতায়, তবে এখন কথা বলব না।
এদিকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতিফ সিদ্দিকী বিবলেছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান, তবে এ ব্যাপারে দল এবং সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।
তবে সেই সাথে তিনি বলেন, যদি একান্তই দেশে ফিরতে না পারেন, তাহলে তিনি আপাতত ভারতেই থেকে যেতে চান।
অপরদিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হচ্ছেন বলে জানা গেছে। দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছে।
এদিকে দৈনিক সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমাকে দেশে আসতে না দেওয়ার কী কারণ আছে? আর গ্রেপ্তার করলে করুক। তাতে দোষের কী। এ নিয়ে আমি ভাবছি না। আমি এখন আওয়ামী লীগের শোকজ নোটিশের অপেক্ষায় আছি। আমি অবশ্যই শোকজ নোটিশের জবাব দেব। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেও আমি অন্য দলে যাব না।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের খবর প্রচারিত হলেও এবং দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলেও তার সংসদ সদস্যপদ থাকছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে- কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে।
মঙ্গলবার মঙ্গলবার সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ হুইপ বলেন, সংসদের সদস্যপদ বাতিলের বিদ্যমান যে আইন, তা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ তিনি দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, পদত্যাগও করেননি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে কিছু করেননি। যে কারণে তার বিষয়টি ফ্লোর ক্রসিংয়ে পড়েনি।
এদিকে মঙ্গলবার দল থেকে সদ্য বহিষ্কার হওয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে তার বক্তব্যের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নোটিশে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইর্য়ক সফরকালে গত ২৮ সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলীগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনও কাম নাই। এদের কোনও প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, তাবলীগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনও কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।
তিনি তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়েও বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই’ কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।
প্রবাসীদের সম্পর্কে এসময় তিনি মন্তব্য করেন, বিদেশে এসেছেন কামলা দিতে। রাজনীতি করার দরকার কী?
মঞ্চে বসা টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. নুরুন্নবীকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের জন্য একবার তাঁর (নুরুন্নবী) কাছে চাঁদা চেয়েছিলাম। তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এক লাখের কম কারও কাছ থেকে চাঁদা নেয় না।