আগামী ১৮ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় আইটিইউ নির্বাচনে যাচ্ছে বাংলাদেশ
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল রওয়ানা হচ্ছে আগামী ১৮ অক্টোবর। বাংলাদেশ থেকে এ দলের নেতৃত্ব দেবেন জুনাইদ আহমেদ পলক। ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য মূল নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৯ অক্টোবর তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এর আগে আগামী ১৬ অক্টোবর আইটিইউ’র নির্বাচন নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা থাকলেও সময়ের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সামারী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ থেকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন এবং বিটিআরসি ফেস বাই ফেস দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আইটিইউ নির্বাচনে বিভিন্ন কর্মকর্তারা অংশগ্রহন করবেন। তবে এই নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে কত জন অংশগ্রহণ করছেন তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
গত ২০১০ সালে আগেরবারের নির্বাচনে বাংলাদেশ এশিয়ার এই অঞ্চলের ১৩ পদের জন্যে ১৭ দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর এর মধ্যে ১২৩ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ হয় বাংলাদেশ। আর আগামী ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত আইটিউর সম্মেলনে পরবর্তী নির্বাচন হবে। নির্বাচিত হলে এই অঞ্চলে আইটিইউর নীতিনির্ধারণসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে আইটিউ-এর সাধারণ সদস্য পদ পায় বাংলাদেশ। এদিকে গত ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো আইটিউর কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাউন্সিলর নির্বাচনে বিজয়ী হতে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। এ জন্য একটি নির্বাচনী ইশতেহার বা পজেশন পেপারও তৈরি করা হয়। মূলত পজেশন পেপার বা ইশতেহারে সরকার বলতে চাইছে নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ ইউনিয়নের জন্য কি কি করবে। ভোটার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয় নানা ধরণের উপহার সামগ্রী। ঢাকায় ভোটার দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো, উপহার দেওয়াসহ আরও আয়োজন করা হয়। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৫ দিনের সিটিও’র ৫৪তম কাউন্সিল সভা ও বার্ষিক ফোরামে বাংলাদেশ জোর প্রচার চালিয়েছে বলে তখন জানিয়েছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।
এছাড়া এই নির্বাচন উপলক্ষ্যে দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডেভলপমেন্ট কনফারেন্সে’ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। দুবাই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কেউ অংশ নেননি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়ে ছিলেন মাত্র তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। বাংলাদেশ থেকে দুবাই সম্মেলনে অংশ নেয়া বিটিআরসি সচিব মাহবুব আহমেদ অবশ্য দাবি করেছিলেন, তারাও প্রচার চালিয়েছেন। অনুষ্ঠান স্থল থেকে তিনি বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের কাছে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সুভেনির সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। তারও আগে ১৯৭৩ সালে পায় সাধারণ সদস্যপদ। গত নির্বাচনে এশীয় অঞ্চলের ১৩টি পদের জন্য ১৭টি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে ১২৩ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ স্থান লাভ করে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদে ডব্লিউটিডিসি-২০১০ সম্মেলনে তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নেতৃত্বে ১১ সদস্যর প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিল। এই সম্মেলনে আইটিইউ সদস্য ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৩০টির ৫০ জন মন্ত্রী এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন সরকারি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো আইটিউ’র কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু তবে গত ৪ বছর বাংলাদেশ আইটিইউ’র কাউন্সিল পদে থাকলেও দেশের জন্যে তেমন কিছু করতে পারেনি। তবে আইটিইউ’র কাউন্সিলর নির্বাচনে আবারও অংশ নেওয়ার বিষয়ে গত বছর ২১ ডিসেম্বর অন্তবর্তী সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৭ অক্টোবর মূল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।