সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৯৮৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ
আবাসন সমস্যায় জর্জরিত রাজধানীর সরকারি চাকরিজীবীদের সমস্যা সমাধানে সরকার ৯৮৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে । প্রথম অবস্থায় ঢাকার আজিমপুর ও মতিঝিল সরকারি কলোনীতে ২০ তলা বিশিষ্ট ১০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে ১ হাজার বর্গফুট, ৮শ’ বর্গফুট এবং সাড়ে ৬শ’ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
ঢাকা শহরে বর্তমানে ৩ লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন অথচ আবাসন সুবিধা আছে মাত্র ১৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে এসব ভবন নির্মাণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দেয়া হবে।
এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে মরণ ফাঁদ হিসাবে চিহ্নিত ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানের উন্নয়ন ও সংস্কারে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এসব মরণ ফাঁদের সংস্কার কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দুই প্রকল্পসহ একনেক সভায় মোট ২ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এ সময় জানানো হয়, আজিমপুর সরকারি কলোনীতে ২টি ২০ তলা ভবনে প্রতিটি ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫২টি ফ্ল্যাট এবং ৪টি ২০ তলা ভবনে প্রতিটি ৮শ’ বর্গফুট আয়তনের ৩০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। অপরদিকে মতিঝিল সরকারি কলোনীতে ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি ২০ তলা ভবনে ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ৫৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আজিমপুর এবং মতিঝিল কলোনীতে বেশ কিছু খালি জায়গা আছে। এগুলোতে আগে ভবন তৈরি করা হবে এবং এতে পার্শ্ববর্তী ভবন থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানান্তর করা হবে। এরপর ওই ভবনও নতুন করে তৈরি করা হবে।
সভায় দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত (মরণ ফাঁদ) ১৪৪টি স্থানের সংস্কারে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পথচারী ক্রসিং এর উন্নয়ন, সড়ক বাঁক সরলীকরণ, সাইন, সিগন্যাল ও রোড মার্কিং স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩৪টি, গোপালগঞ্জ জেলায় ৬টি, কুমিল্লায় ৮টি, সিলেটে ১৪টি, খুলনায় ১১টি, বরিশালে ২টি, রংপুরে ৩৫টি এবং রাজশাহী জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট রয়েছে।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (বাপাউবো অংশ) প্রকল্প, ১ হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (১ম সংশোধিত) সংগ্রহ প্রকল্প, ১২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের জন্য সুইচিং স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প, ৮৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে মতলবে ধনাগোদা নদীর উপর সেতু (মতলব সেতু) নির্মাণ প্রকল্প এবং ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্মসূচি সমপ্রসারণ প্রকল্প।
সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র- ইত্তেফাক