নাক ডাকার কারণে আর অশান্তি নয় সংসারে!
স্বামী স্ত্রী একে অপরের নাক ডাকার কারণে সারারাত ঘুমোতে পারেন না –এটা নতুন কথা নয়। এ নিয়ে সংসারে হয় অশান্তি। পশ্চিমা বিশ্বে তো এ কারণে ডিভোর্স পর্যন্ত হয়ে থাকে। জেনে নিন নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
নাক ডাকার কারণ
শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য যে নালি থাকে, সেটা সরু হওয়ার কারণে সাধারণত মানুষ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। এ নালি সংকীর্ণ হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ক্ষতিকর নয়। হালকাভাবে নাক ডাকা মানে ভালো ঘুম হওয়ার লক্ষণ বলেই ধরে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ঘুমের ‘পজিশন’ পরিবর্তন করা বা একটু নড়েচড়ে শুলেই নাক ডাকা কমে যেতে পারে।
সাধারণ নাক ডাকা
সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, অ্যালার্জি, নাকে সাইনাসের সমস্যা কিংবা মুখের তালু, ছোট চোয়াল বা অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি কারণেও মানুষ নাক ডাকতে পারে। তাই নাক ডাকা দূর করতে প্রথমেই স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা প্রয়োজন। অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়া কিছুটা কমিয়ে ওজন আয়ত্বে রাখা, অ্যালার্জি, সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগা নিয়ে কিছুটা সতর্ক হওয়া খুবই দরকারি।
ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বিপজ্জনক
নাক ডাকা তখনই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, যখন ঘুমের মধ্যে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ হয়, অর্থাৎ দম বন্ধ হয়ে আসে। আসলে সব স্লিপ অ্যাপনিয়াই নাক-ডাকা, তবে সব নাক-ডাকা স্লিপ অ্যাপনিয়া নয়। এ অসুখ হলে বিকট শব্দ করে নাক ডাকেন অনেকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া অত্যাবশ্যক।
রেকর্ড করা
একজন নাক ডাকেন আর একজন জেগে জেগে শুধু শুয়ে থাকেন –এরকম ঘটনা মোটেই নতুন নয়! যারা নাক ডাকেন তাদের অনেকেই বিষয়টাকে যেমন গুরুত্ব দেন না, তেমনি বিশ্বাসও করেন না যে তারা সত্যিই নাক ডাকেন বা ঘুমের মধ্যে অমন বিকট শব্দ করেন। কেউ আবার উপায়ান্তর না দেখে সঙ্গীকে শোনানোর জন্য তার নাক ডাকার শব্দ ‘রেকর্ড’ করে রাখেন।
সহযোগিতা
কেউ নিয়মিত নাক ডাকলে, তাতে বেশি ভোগেন তাদের সঙ্গীরা। কাজেই নাক ডাকা কমাতে বা একেবারে বন্ধ করতে দু’জনেরই সহযোগিতা প্রয়োজন। কোলনের ‘ইন্টারনিস্ট’ ডা. ক্লাউস ইয়োর্গেন স্ল্যুটার-এর মতে, ‘‘সুস্থ থেকে অর্থাৎ নাক ডাকা বন্ধ করে সংসারে শান্তি বজায় রাখতে চাইলে নিজেরা সঙ্গীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন, শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।’’
মুখ খুলে ঘুমানো
বিকট শব্দে নাক ডাকলে ঘুমের মান ভালো হয় না। ফলে দিনে ক্লান্তি, ‘নার্ভাসনেস’ এবং মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। এমন কি মেজাজ বিগড়ে যায়, যার প্রভাব পরে কাজ-কর্মেও। তাই রাতে একটি বিশেষ ব্যান্ডেজ বেঁধে মুখ খানিকটা খুলে ঘুমালে উপকার হয়। এছাড়া চোয়াল, তালুকে ঠিক ‘পজিশনে’ রেখে শ্বাস নিলে সমস্যার অনেকটা সমাধান করা সম্ভব। এর জন্য নানা ব্যবস্থা থাকলেও নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ বা ইএনটি-র পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
‘অ্যান্টি’ নাক ডাকা মেশিন
নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য রয়েছে ‘অ্যান্টি’ নাক ডাকা মেশিনও। কে কতক্ষণ নাক ডাকেন এবং সেটা কতটা বিপজ্জনক –তা জানা বা পরীক্ষার জন্য জার্মানি এবং উন্নত বিশ্বে রয়েছে বিশেষ যন্ত্রপাতি। নাক, কান এবং গলা বিশেষজ্ঞ আঙ্গেলিকা স্প্যুর্ট বলেন, এই পরীক্ষাগুলোর জন্য রয়েছে বিশেষ ক্লিনিক, যেখানে কমপক্ষে একরাত থাকতে হয় এবং প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমেও এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।