২২ অক্টোবরের মধ্যে লতিফকে গ্রেপ্তার না করলে ২৬ অক্টোবর হরতাল
পবিত্র হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারিত লতিফ সিদ্দিকীকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছে সম্মিলিত ইসলামি দলগুলো। এই সময়ের মধ্যে সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে ২৬ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত ইসলামি দলগুলো।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এ ঘোষণা দেন সম্মিলিত ইসলামি দলগুলোর মহাসচিব মাওলানা জাফরউল্লাহ খান।
লিখিত বক্তব্যে মহাসচিব মাওলানা জাফরউল্লাহ খান বলেন, আগামীকাল শুক্রবার জুমার সময় দেশের সব মসজিদে ধর্মবিরোধীদের বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়া হবে। ২১ তারিখ পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।
খেলাফত আন্দোলন, ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, ইসলামিক পার্টি, মুসলীম লীগ ইত্যাদি দল নিয়ে এই সম্মিলিত জোটটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
গত ২ অক্টোবর আইনজীবী শাহ আলম মামলাটি দায়ের করেন। আদালত ওইদিন মামলাটি আমলে নিয়ে আসামি লতিফ সিদ্দিকীকে ১৫ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
বুধবার ১৫ অক্টোবর আদালতে হাজির না হওয়ায় বাদী অ্যাডভোকেট শাহ আলম আদালতের কাছে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ২৩ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
ওই মন্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো লতিফ বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইর্য়ক সফরকালে গত ২৮ সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তারচেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনও কাম নাই। এদের কোনও প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, তাবলিগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনও কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।
তিনি তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়েও বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই’ কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।
প্রবাসীদের সম্পর্কে এসময় তিনি মন্তব্য করেন, বিদেশে এসেছেন কামলা দিতে। রাজনীতি করার দরকার কী?
মঞ্চে বসা টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. নুরুন্নবীকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের জন্য একবার তাঁর (নুরুন্নবী) কাছে চাঁদা চেয়েছিলাম। তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এক লাখের কম কারও কাছ থেকে চাঁদা নেয় না।
এই ঘটনার পরপরই তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর কারণে রাষ্ট্রপতি হজ সেরে দেশে ফেরার পর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভা ও দল থেকে অব্যহতির পর তার সাংসদ পদ থাকবে কি না- সে বিষয়েও সৃষ্টি হয় সংশয়। কিন্তু গত ১৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ থাকছে। সংসদের সদস্যপদ বাতিলের বিদ্যমান যে আইন, তা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ তিনি দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, পদত্যাগও করেননি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে কিছু করেননি। যে কারণে তার বিষয়টি ফ্লোর ক্রসিংয়ে পড়েনি।
উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।