আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ
পাইকারি বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ছে। ফলে গ্রাহকপর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়বে। আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত ৭ দফা বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।
উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮১ পয়সা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পিডিবি এরই মধ্যে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে।
ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসিতে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই খুচরা পর্যায়ে কী পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন, তা ঠিক করে প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে।
পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়, যদি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো হয় তবে চলতি বছরে পিডিবির ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে। আর যদি প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তবে ভর্তুকির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা হবে।
বিইআরসির একটি সূত্রে জানা যায়, একবারে বেশি না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে, যাতে মানুষের ওপর চাপ কম পড়ে। এদিকে পাইকারি পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়বে খুচরা পর্যায়ে গ্রাহকের বিদ্যুতের দামেও। বেশি দামে পাইকারি বিদ্যুৎ কিনে কম দামে খুচরা পর্যায়ে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে বেশি দিন লোকসান দিতে পারবে না বিতরণ কম্পানিগুলো। তারাও বাধ্য হবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়ানোর সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, একবারে এত বেশি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ হলো, যাতে শিগগিরই আর দাম না বাড়াতে হয়। পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে পিডিবি বিতরণ কম্পানিগুলোর কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ চার টাকা ৭০ পয়সা দরে বিক্রি করছে। এটি বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ৫১ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ চার টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ৫১ পয়সা করার পরও ইউনিটপ্রতি পিডিবির লোকসান হবে এক টাকা তিন পয়সা। কারণ হিসেবে পিডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদনমূল্য হবে ছয় টাকা ৫৪ পয়সা। সরকার লোকসানের অর্থ ঋণ দিয়ে থাকে পিডিবিকে।
জানা গেছে, সরকারের আগের মেয়াদে পাইকারি বিদ্যুতের দাম দুই টাকা ৩৭ পয়সা থেকে ছয় দফায় ৯৮.৩১ শতাংশ বাড়িয়ে চার টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। আর গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে চার টাকা থেকে ৫৩.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ছয় টাকা ১৫ পয়সা করা হয়। সর্বশেষ গত মার্চে ওই দাম বৃদ্ধি পায়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে পিডিবি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কারণেই লোকসান বেড়েছে। পিডিবি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গ্যাসে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তাতে কোনো লোকসান নেই। উপরন্তু পিডিবির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লাভ করছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় যেভাবে গ্যাস ও কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা ছিল তা হয়নি। ফলে এককভাবে জ্বালানি হিসেবে তেলনির্ভরতা না কমে উল্টো আরো বেড়েছে।