বুড়ো, অছাত্র ও বিবাহিতদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি
বুড়ো, অছাত্র ও বিবাহিতদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটিবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবঘোষিত ২০১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন। অছাত্র, বিবাহিত, বিতর্কিত হওয়ার পরও ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন অনেকেই।
মোট ২০১ জন সদস্য থাকার কথা থাকলেও ঘোষিত হয়েছে ১৫৩ সদস্যের কমিটি। তরুণদের দিয়ে কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও যাঁদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগের বয়স চল্লিশের কোঠায়। জানা যায়, এ কমিটির অনেক নেতাই বিবাহিত। কয়েকজন মামলার আসামি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগও রয়েছে।
ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ঘোষিত কমিটিতে ঢাকার বাইরের কোনো নেতাকর্মীকে স্থান দেয়া হয়নি। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর সাংগঠনিক এলাকা থেকে মনোনীত হয়েছেন।
মাঠপর্যায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নেতা-কর্মীরা। নতুন কমিটি নিয়ে ছাত্রদলে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বঞ্চিত নেতারা নিজস্ব গ্রুপ নিয়ে সভা করছেন। যেকোনো সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় একটি বিক্ষুব্ধ গ্রুপ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
ছাত্রদলের কমিটিতে দেখা যায়, অন্তত ৩৫ নেতা বিবাহিত। কারো কারো সন্তান স্কুলে পড়ছে। বর্তমান কমিটির কোনো নেতাই নিয়মিত ছাত্র নন। বহু বছর আগেই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাঁদের।
কমিটি ঘোষণার পর বঞ্চিত চার-পাঁচটি গ্রুপ বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাতে কমিটি ঘোষণার পর সকালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলেও ‘সুপার ফাইভে’ স্থান পাওয়া সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকার যাননি। শুধু তাঁরাই নন, ঘোষিত কমিটির ২২ সহসভাপতি, ২৪ যুগ্ম সম্পাদক, ২০ সহসম্পাদক, ১৮ সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৭ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন না।
১৫৩ জনের কমিটিতে সভাপতি, ১৮ জন সহসভাপতি, ছয়জন যুগ্ম সম্পাদক, ১০ জন সহসাধারণ সম্পাদক, সাতজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং চারজন সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর লোক হিসেবে পদ পেয়েছেন বলে কমিটির একাধিক নেতা জানান।
আবার পদ পাওয়া অনেক নেতা বলছেন, তাঁদের প্রত্যাশিত পদ দেওয়া হয়নি। বিএনপির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-উপদেষ্টা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর রাজনীতি জিইয়ে রাখতে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল এমন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন এবং পদ পেয়েও পার্টি অফিসে উপস্থিত না হওয়ায় বিদ্রোহের আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ছাত্রলীগ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে এ্যানি বলেন, ‘একজন ছাত্রলীগ করতেই পারে। কিন্তু সে ছাত্রদলে যোগ দিয়ে রাজনীতি করলে আমরা তাকে মূল্যায়ন করব না? অনেকেই অভিযোগ করতে পারে কিন্তু সব কিছু সত্য নয়।’
বিদ্রোহের প্রসঙ্গ ও পল্টন কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যানি বলেন, সরকারের লোকজন এ কাজ করেছে। নির্বাচিত নেতা-কর্মীরা সারা দিন শুভেচ্ছ বিনিময় করল, কোনো ঝামেলা হয়নি। কিন্তু সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।
সূত্র: কালের কণ্ঠ