স্তন-ক্যান্সার এড়াতে ৩০ বছরের মধ্যে দুটি সন্তান
আপনি কি কোনও না কোনও কারণে ৩০ বছরের মধ্যে দুই সন্তানের জননী হতে পারেননি? আপনার কি নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে? অথবা, আপনি কি মদ্যপান, সিগারেট সহ তামাকজাত বিভিন্ন দ্রব্য সেবন করেন? স্তন ক্যান্সারের ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু এমনই নানা কারণ দায়ি৷কাজেই, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলে কিন্তু আপনিও এড়াতে পারেন স্তনের ক্যান্সার। বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়।
৩০ বছরের মধ্যে দুটি সন্তান নিন৷জন্মের পর সন্তানকে অন্তত ছ’মাস স্তন্যপান করান৷ এর সঙ্গে লাগাম টানুন অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে। তা হলেই স্তনের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে পারবেন। কারণ, স্তনের ক্যান্সারের জন্য ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্যই আমেরিকায় একসময় স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মহিলা। ফাস্ট ফুড এবং বেশি নোনতা জাতীয় খাবার খাওয়া, মদ্যপান এবং সিগারেটসহ তামাকজাত বিভিন্ন দ্রব্য সেবন, নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, পরিমাণের তুলনায় জল কম পান করা, ৩০ বছরের মধ্যে দুটি সন্তান না নেওয়া— ৬০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এমন নানা কারণই দায়ী। আমেরিকার মহিলাদের মধ্যে এখন কিন্তু স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে ৷কারণ, তাঁরা জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আনতে সমর্থ হয়েছেন।
অথচ, আমাদের দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মহিলাদের মধ্যে স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে ৷শুধু তাই নয়। মহিলারা যে সব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা দেয় স্তনের ক্যান্সার। কলকাতাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই৷ কারণ, পড়াশোনা এবং কেরিয়ারের জন্য শহরাঞ্চলের বহু মহিলা ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে করেন না। তার ওপর ৩০ বছরের মধ্যে দু’টি সন্তানও নেন না। অনেকে তো একটি মাত্র সন্তান নেন। অনেকে আবার কোনো সন্তানও নেন না। এর পাশাপাশি কেরিয়ারের জন্য অনেক মহিলা আবার সন্তানকে স্তন্যপান করাতেও পারেন না৷অনেকের মধ্যে আবার বিভিন্ন কারণে অনীহাও দেখা যায়।
তার উপর নিয়মিত ফাস্ট ফুড, প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরচর্চা না করা—এমন নানা কারণও রয়েছে৷ অথচ, জীবনযাপনের এই সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হলে, ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব। তবে, প্রাথমিক স্তরে স্তনের ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ সেরেও যায়। এ ক্ষেত্রে বহু মহিলার মধ্যে এখনো সচেতনতার অভাও রয়েছে৷ স্তনে বিভিন্ন ধরনের টিউমার হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ক্যান্সারের টিউমারে কিন্তু ব্যথা থাকবে ৷ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে যে স্তন, সেই স্তনের বৃন্ত থেকে রক্ত বের হতে পারে ৷এমনকী স্তনের ওই বৃন্ত কমলালেবুর মতো আকারও নিতে পারে।
কাজেই, নিজে নিজে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা উচিত। এটাই অন্যতম উপায়। স্তনের কোনো টিউমার যদি ব্যথাযুক্ত হয়, তা হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ৷চিকিৎসক অবশ্য নিশ্চিত হবেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৷দিদিমা অথবা মায়ের ক্ষেত্রে যদি স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তের ইতিহাস থাকে, তা হলে সেজন্য ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বর্তমানে প্রতি বছর স্তনের ক্যান্সারে এ রাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৪ হাজার মহিলা। কলকাতায় এই সংখ্যা তিন হাজার। অন্যদিকে, বর্তমানে এ রাজ্যে স্তনের ক্যান্সারে নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার। এর মধ্যে কলকাতায় রয়েছেন ১২ হাজার মহিলা।
সাক্ষাৎকার : বিশ্বজিৎ ঘোষ। কলকাতা