যৌন সংখ্যালঘুরা এইডসের সেবা পাচ্ছেন না
বাংলাদেশে যৌন সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশ এইচআইভি-এইডসের সেবা পাচ্ছেন না। ব্যবস্থা না নিলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার ইউএনএইডসের এ-দেশীয় পরিচালক লিও কেনি এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন। ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত ‘দ্য ভয়েস অব সেক্সুয়াল মাইনরিটি পপুলেশন অন মিডিয়া: কনসালটেশন উইথ মিডিয়া স্টলওয়ার্টস’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজক ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।
লিও কেনি বলেন, সমকামী ও পুরুষ যৌনকর্মীদের ৭৫ শতাংশ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ কোনো সেবা পাচ্ছেন না। ১৯৯৫ সাল থেকে সংক্রমণ রোধে নানা কর্মসূচি চালু থাকায় এইচআইভি-এইডস নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে এত বেশি সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এইচআইভি-এইডস রোগীর সংখ্যা কমছে। কিন্তু বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।
বৈঠকে ইউনেসকোর একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে গণমাধ্যম গবেষক ইয়াসির আমিন জানান, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমকামীদের সংখ্যা বাড়ছে। সমকামী ও পুরুষ যৌনকর্মীরা অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে আড়ালে থাকেন। তাঁরা তথ্য ও সেবা থেকেও বঞ্চিত হন।
বৈঠকে হিজড়া, সমকামী ও পুরুষ যৌনকর্মীদের সংবাদমাধ্যমে উপস্থাপন ও তাঁদের অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচওকেরা বলেন, নারী-পুরুষের বাইরেও পৃথিবীতে বহু মানুষ জন্মান যাঁদের অবয়বের সঙ্গে মানসিকতার মিল নেই। আবার কারও যৌনাঙ্গে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। এরা যৌন সংখ্যালঘু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এঁরা পরিবার ও সমাজে বঞ্চনার শিকার হন।
বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম বদরুদ্দোজা সমকামীদের অধিকার প্রসঙ্গে বলেন, ‘সমাজে বাস করতে হলে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মর্যাদা দিতে হয়। তবে, সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। এখন যে ধ্যান-ধারণা অগ্রহণযোগ্য, সময় পরিক্রমায় তা গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে। কাউকে খেপিয়ে তুলে সবার অধিকার যেন রক্ষিত হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।’
বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারপারসন আনিসুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের কাজকর্মে অনেকেই বিরক্ত। হিজড়ারা পেটের দায়ে নানা কাজ করে। তাঁদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে।
সাদাকালোর নির্বাহী পরিচালক ও হিজড়া সমাজের প্রতিনিধি অনন্যা বণিক বলেন, তাঁরা তাঁদের সক্ষমতা অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত আছেন। তাঁরা করে দেখাতে চান কারও তুলনায় হিজড়ারা পিছিয়ে নেই।
বৈঠকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খতিব ও পেশ ইমাম এ কে এম ফারুক সিদ্দিকী বলেন, ইসলাম ধর্মে হিজড়াদের অধিকার সম্পর্কে বলা আছে। নারী ও পুরুষ সন্তানের মতোই বাবা-মার সম্পত্তিতে তাঁদের হিস্যা আছে।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন কর্মী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালে আহমেদ।