নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রবণতার সমালোচনা সৈয়দ আশরাফের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। আওয়ামী লীগকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজারো নিবেদিত নেতা-কর্মীর রক্ত, তাঁদের ত্যাগ-মেধার মধ্যে একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই অনুভূতিই কিন্তু আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ শুধু কোনো রাজনৈতিক দল নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নেতাদের দীর্ঘদিন নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রবণতার সমালোচনা করেন সৈয়দ আশরাফ। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে অনেকে জেলা কাউন্সিল আয়োজন করতে উৎসাহী হননি। যাঁরা কাউন্সিল আয়োজন করেননি তাঁদের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল না হয়ে থাকলে, উদ্যোগ নিয়ে তা শেষ করার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কাউন্সিল ব্যবস্থাপনা থেকে সরে আসি, তবে দলে প্রাণসঞ্চার হবে না।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার বিশ্বাসে যদি ঘাটতি আসে, তবে কোনো দিন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আপনি অভীষ্ট লক্ষ্যে যেতে পারবেন না। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সংগঠনে নতুন প্রাণের সঞ্চার দিতে হবে। তা না হলে যতই যুগান্তকারী দল আওয়ামী লীগ হোক না কেন, এটা একদিন সচল থাকবে না। দলকে গতিশীল রাখার একমাত্র উপায় হলো দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু ও অনুশীলন করা।’
যতদিন কর্মীদের আস্থা, ততদিন নেতৃত্ব
নেতাদের মানসিকতার পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু-ভাসানীসহ অনেক নেতৃবৃন্দ। সবাই কিন্তু আওয়ামী লীগের পদে স্থায়ী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের হাল ধরার পর তিনি দলকে একটি যুগান্তকারী সংগঠনে রূপ দেন। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এরপর অনেকেই সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কিন্তু কেউই ওই পদে স্থায়ী ছিলেন না। আমি সারা জীবন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকব, এমনটা ভাবা অনুচিত। যখন সময় ফুরিয়ে যাবে, দল স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে দিবে। এই পরিণতিটা আমরা মানতে চাই না, এটা মেনে নিতে হবে। দলের মধ্যে কেউই আবশ্যিক নয়। আপনার ওপর যতদিন কর্মীদের আস্থা আছে, ততদিন আপনি নেতৃত্ব রাখতে পারবেন। এর ব্যত্যয় হলে এক ঘণ্টায় আপনার নেতৃত্ব চলে যাবে।’
দেশের মানুষ নয়, সংকটে বিএনপি
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাঝেমধ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র সংকটে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের মানুষ সংকটে নেই, সংকটে বিএনপিই। ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে বিএনপি জোট আজ ভাঙনের মুখে। খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। আজ বিএনপি-জামায়াতের সামনে কোনো রাজনীতি নেই। তাই তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁরা জানেন, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই, তাই তাঁরা বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, ষড়যন্ত্র করে কোনো রকমে সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসা যায় কি না।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে হানিফ বলেন, ‘যতই শক্তিশালী বিদেশি প্রভুর কাছে ধরনা দেন না কেন, জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার পাশে আছে, ততদিন এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।’
কাউন্সিল নিয়ে হানিফের আক্ষেপ
কাউন্সিল আয়োজনের বিষয়ে নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে হানিফ বলেন, কাউন্সিল হলো কর্মীদের মিলনমেলা। ঠাকুরগাঁও জেলা কাউন্সিলে জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা আসবেন, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দমেলায় পরিণত হবে, এটাই হবে কাউন্সিল। এই কাউন্সিলে আমাদের নিজের মনের মধ্যে আনন্দ থাকবে, মনের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়া থাকবে, রং থাকবে। আজকের এই কাউন্সিলে রঙের ঘাটতি রয়েছে, রঙের ছোঁয়া নেই। আনন্দের উচ্ছ্বাস খুব একটা খুঁজে পাই না। অনেক জেলায় দেখেছি বর্ণিল সাজে গোটা জেলা সাজিয়ে ফেলে, গোটা জেলার মানুষকে জানিয়ে দেয়। কর্মীদের মিলনমেলা এতটা নিষ্প্রভ হবে, তা আশা করিনি।’
সরকারের নানা অর্জনের বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খাদ্যশস্য ঘাটতি দূর করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুতের সমস্যা নিরসন করে ৩২০০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত, জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বেশ কয়েকটি খাতে এই সরকারের অর্জন রয়েছে। আর অন্যদিকে বিএনপির অর্জনগুলো হলো জঙ্গিবাদের উন্নয়ন, সন্ত্রাসীদের রাজত্ব, তারেকের নেতৃত্বে হাওয়া ভবনের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান।’
সকালে জাতীয় সংগীতের তালে তালে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ জাতীয় পতাকা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়।
উদ্বোধনের পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাব পেশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাক আলম, সংগঠনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলার সাধারণ সম্পাদক মু. সাদেক কুরাইশী। অধিবেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংসদ সেলিনা জাহান, সাংসদ দবিরুল ইসলাম, সাবেক সাংসদ ইমদাদুল হক প্রমুখ।