রাজধানীতে চলতে-ফিরতে আফ্রিকান নাগরিক, কেন?
রাজধানীর পথে চলতে-ফিরতে আফ্রিকান নাগরিক চোখে পড়েনি, এমন লোকের দেখা মেলা এখন ভার। তাদের সংখ্যা এবং চলাফেরা এখন এতোটাই সচরাচর যে, তাদের আর ভীনদেশের মানুষ মনে করে না অনেকেই। বিশেষ করে উত্তরা এবং খিলক্ষেত এলাকায় অসংখ্য আফ্রিকান নাগরিক বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, দেশে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার বিদেশি নাগরিক বর্তমানে অবৈধভাবে বাস করছেন, যাদের বেশিরভাগই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আফ্রিকান নাগরিকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে এসেছেন ভ্রমণ ভিসায়। পরে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে থেকে যাচ্ছেন। অনেকে এসেছেন বিভিন্ন ক্লাবে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ভুয়া তথ্য দিয়ে।
বাস্তবে খেলোয়াড় হিসেবে নয়, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মিশন নিয়ে নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ঘানা, সুদান, উগান্ডা, তানজানিয়া, ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশের নাগরিকরা এ দেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। আফ্রিকান নাগরিকরা এ দেশে পর্যটক এবং খেলোয়াড় হওয়ার তথ্য দিয়ে ভিসা পাচ্ছেন বেশি। আফ্রিকানরা এও জানে, বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে এসব তথ্য খুব বেশি যাচাই-বাছাই করা হয় না কিংবা কর্মকর্তাদের খুশি করে সহজে ভিসা পাওয়া সম্ভব। ভিসার মেয়াদ পার হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে এ দেশে থাকতে খুব বেগ পেতে হয় না। এ কারণে যত আফ্রিকান নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, তার প্রায় ৬০ শতাংশই থেকে যান।
জানা গেছে, আফ্রিকানরা মূলত চোরাচালান ও জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত। চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে পাঁচ আফ্রিকান নাগরিক বিপুলসংখ্যক জাল মার্কিন ডলারসহ ধরা পড়েন। গত বছর হেরোইন, জাল ডলারসহ আরও চারজনের ধরা পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গত দু’বছরে সব মিলিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ২৮ জন গ্রেফতার হন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অপরাধে বাংলাদেশের জেলে আট শতাধিক বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। এর বাইরে কিছু আছেন, যারা গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে লাপাত্তা। এদের সংখ্যা প্রায় ৪০০।
গত দুই বছরে প্রায় তিন হাজার আফ্রিকান নাগরিকের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত দু’বছরে কমপক্ষে ২৫ জনকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল