নিজেদের স্বার্থ না ভেবে দেশের স্বার্থ নিয়ে ভাবা উচিত: আআমস আরেফিন সিদ্দিক
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, নিজেদের স্বার্থ না ভেবে দেশের স্বার্থ নিয়ে ভাবা উচিত।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়ার ফলে সদ্য পাস হওয়া শিক্ষার্থীদের যে দুরবস্থা হয় তার দায়িত্ব কে নেবে? এখন বলা হচ্ছে এবার যারা পরীক্ষা দিল তাদের কী হবে? সামনের বছর বলা হবে, ১৫ সালে যারা পরীক্ষা দিল তাদের কী হবে? কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময়েই তা নিতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট ব্যাচের কথা চিন্তা করে সার্বিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার আশায় এ বছর ৪০০ সিট খালি হয়ে যাবে। যেখানে একটি সিটের জন্য প্রায় ৪০০ ছাত্র প্রতিযোগিতা করে, সেখানে ৪০০ সিট খালি থাকাটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। গণমাধ্যমে একবার পরীক্ষা নেওয়ার সুফল তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসি থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
গত শুক্রবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আসছে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে টিএসসির সামনে অবস্থিত রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ শুরু করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে তারা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমও তোলেননি। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ যখন বন্ধ করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ততদিনে শেষ হয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম তোলার সময়ও।
এমন সব অভিযোগ তুলে দ্বিতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চান প্রথম বারে সুযোগ না পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক কিছুদিন আগেও এ কথা বলেছিলেন যে, ‘তোমাদের স্বপ্ন যদি ঢাবিই হয়, তাহলে হতাশ হয়ো না। দ্বিতীয়বার একটি সুযোগ তো আছেই।’ তাহলে এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
তারা বলেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে তার সবই খণ্ডনযোগ্য। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালের এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা দুর্ভাগ্য আর যন্ত্রণার শিকার বলেও তিনি জানান।
তাদের সঙ্গে এসেছিলেন অভিভাবকও। ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানায় ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
ভর্তিচ্ছুদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে বাধা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে মিছিল করে শাহবাগ যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
প্রসঙ্গত, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাধারণ সভায় শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবে। পুরাতনরা পারবে না।
এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে অসম প্রতিযোগিতা হয়। কারণ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ে আর অন্যজন উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করেই ভর্তি পরীক্ষায় বসে।
তিনি আরও বলেন, আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পুনরায় ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। ফলে যেখানে প্রথমবার ভর্তি হয়েছে, সেখানকার আসন ফাঁকা হয়ে যায়।