স্ত্রী সেজে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা, পরে কারাগারে
পরনে জীর্ণ সালোয়ার-কামিজ। কোলে ৪৫ দিনের শিশু। চোখে পানি। নিজেকে নির্যাতিত নারী দাবি করে বিনা খরচে সরকারি সহায়তায় ‘স্বামীর’ বিরুদ্ধে মামলা করতে আসেন এক নারী। নাম তাঁর খাদিজা বেগম (২৬)।
সঙ্গে থাকা জসিম নামের লোকটিকে খালাতো ভাই হিসেবে পরিচয় দেন। ওই নারীর কান্না দেখে আবেদন ফরমও পূরণ করা হয়। মামলা পরিচালনা করতে কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিয়োগ দেন সরকারি আইনজীবীও।
পরে নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে খাদিজা উল্টোপাল্টা জবাব দিতে থাকেন। সন্দেহ হলে তাঁকে জেরা করা হয়। পরে তিনি স্বীকার করেন সঙ্গে থাকা জসিম নামের লোকটি তাঁর খালাতো ভাই নন, আসলে তিনিই তাঁর স্বামী। স্বামীর সঙ্গে শত্রুতার জেরে মিরসরাইয়ের সুজন (৪০) নামের একজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করতে এসেছিলেন তিনি। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করা হয়। সেই মামলায় বিকেলে তাঁদের কারাগারে পাঠান আদালত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদিজা বেগম আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, সুজনকে তিনি চেনেন না। স্বামী জসিমের কথামতো তিনি কোলে বাচ্চা নিয়ে সুজনের স্ত্রী সেজে নারী নির্যাতন মামলা করতে এসেছিলেন।
একই প্রসঙ্গে জসিম বলেন, মিরসরাইয়ের সুজন তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করতেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করতে আইনগত সহায়তা নিতে কার্যালয়ে এসেছেন।
বিনা খরচে সরকারি আইনগত সহায়তা কার্যক্রম চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অফিস সহকারী এরশাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইনগত সহায়তা কমিটি চট্টগ্রামের কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মুজাহিদুর রহমান ওই নারীর কাছে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি এলোমেলো তথ্য দিলে জজের সন্দেহ হয়। জজ সঠিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি অপরাধ স্বীকার করেন।
পরে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হলে উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন খাদিজা ও তাঁর স্বামী জসিমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তিনি বাদী হয়ে প্রতারণা আইনে দুজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আইনগত সহায়তা কমিটি চট্টগ্রামের আইনজীবী ইসকান্দর সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, খাদিজা নিজেকে নির্যাতিত দাবি করতে কোলে শিশু নিয়ে আসেন। যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছেন তাঁর ছবির সঙ্গে নিজের ছবিও যুক্ত করেন কৌশলে। যা সহজে বোঝার কোনো উপায় নেই।
উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি মামলার বাদী সেজে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় আছমা আক্তার নামের এক নারীকে পুলিশে দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম ফারহানা ইয়াছমিন।