জেতা হলো না ভারতের বিপক্ষে
একটি লাল কার্ডই খেলাটা শেষ করে দিল। অস্ট্রেলীয় রেফারি মার্গারেট বাংলাদেশের মাশুরা পারভীনের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হলেন কেন বোঝা গেল না। একটি ড্রপ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মাশুরার পা ভারতীয় দলের ফরোয়ার্ডের মাথায় লেগে যেতেই দুর্ভাগ্যের শিকার হলো বাংলাদেশ দল। লাল কার্ড দেখতে হলো মাশুরাকে। আর ওই ফাউল থেকে প্রাপ্ত ফ্রি-কিকটি কাজে লাগিয়ে গোল করেই ১০ জনের বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা বের করে নিল ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল।
আগের দুই ম্যাচে জর্ডান ও আরব আমিরাতকে হারানোর পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশের ১৬ বছরের মেয়েরা আজ ভারতকে হারানোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু শেষ অবধি বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরেছে ২-১ গোলে। অথচ খেলার ২০ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল দলের সেরা খেলোয়াড় সানজিদা। এর ঠিক নয় মিনিট পর পেনাল্টি পায় ভারতীয় দলও। সেই পেনাল্টি থেকে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনে ভারতের রোজা দেবী। এই রোজা দেবীর পা থেকেই এসেছে ভারতের জয়সূচক গোলটি।
মাশুরার লাল কার্ড হয়তো বাংলাদেশের ষোড়শীদের মানসিকভাবে শেষ করে দিয়েছিল। নয়তো পুরো খেলায় কড়া মার্কিংয়ে থাকা রোজা দেবী কেন ঠিক ওই মুহূর্তেই অরক্ষিত অবস্থায় করতে পারলেন জয়সূচক গোলটি। দুর্ভাগ্যের কথাটাও বলতে হয়। পুরো ম্যাচে গোলবারের নিচে অসাধারণ বাংলাদেশি গোলরক্ষক আয়েশার হাত থেকে ওই ফ্রি-কিকের বলটিই বা ছুটে যাবে কেন? ছুটে যাওয়া বলে পা ছুঁইয়ে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ করে দেয় ওই রোজাই।
যেকোনো বিচারেই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্তিশালী দল ভারত। নারী ফুটবলের ঐতিহ্য তাদের অনেক পুরোনো। সে তুলনায় একেবারেই অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের মেয়েরা আজকের ম্যাচটি একেবারে খারাপ খেলেনি। কিন্তু শক্তি ও সামর্থ্যে পুরো খেলাতেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের চেয়ে বারবার পিছিয়ে পড়ছিল মনিকা, সানজিদা, বিপাশারা। তার পরও ভারতের বিপক্ষে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা সবার প্রশংসা পেতেই পারে। সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেতে পারে ম্যাচের শেষ সময়ে বাংলাদেশের মেয়েদের লড়াই। এই সময় যে ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
জর্ডান ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে মেয়েরা যেভাবে বল প্লে করছিল, আজ ঠিক সেভাবে খেলাটা ছিল যথেষ্ট কঠিনই। এর মূল কারণটা ছিল ভারতীয়দের ফিটনেস। শক্ত-সামর্থ্য ভারতীয় মেয়েদের পাশ কাটিয়ে বল বের করে নেওয়াটা রীতমতো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য। দ্বিতীয়ার্ধে দ্রুতগতিসম্পন্ন খেলোয়াড় লিপি মাঠে নামায় কিছুটা গুছিয়ে ওঠার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই সুযোগটা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
সবকিছু ছাপিয়েও বাংলাদেশের ষোড়শী মেয়েরা ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করেছে—এ কথা হলফ করেই বলা চলে। কর্মব্যস্ত দিন হওয়া সত্ত্বেও আজও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভিড় করেছিল প্রচুর দর্শক। আজকের এই পরাজয়ে আগামী বছর চীনে অনুষ্ঠেয় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্তপর্বে কোয়ালিফাই করাটা মেয়েদের জন্য দূর আকাশের স্বপ্ন হয়ে গেলেও ইরানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশের মেয়েরা এমন পারফরম্যান্সই অব্যহত রাখবে—এই প্রত্যাশা সবারই।