ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে হাঁটতে চলেছে জগন্নাথ, ভেবে সিদ্ধান্ত বাকিদের

Untitled-1_3সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা করে, আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০১৫-১৬) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ আর থাকছে না। এবার একই পথে হাঁটতে চলেছে দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প ভাবছে সরকার। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে যে সময়, খরচ নষ্ট হয় এবং শিক্ষার্থীদের ঝামেলা এড়ানো ছাড়াও পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধিতেই এমনটা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ার কারণে এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের ভর্তির ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েই আলাদাভাবে আবেদনপত্র দাখিলসহ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান একই শহর বা এলাকায় না হওয়ার কারণে এবং অনেকসময় একই দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

জানা গেছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না রাখার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটতে চাচ্ছে। চলতি মাসের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

তবে দেশের শিক্ষাবিদরা মনে করেন, হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক যুক্তি আছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার সুযোগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মতো একইরকম যুক্তি প্রদর্শন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দৈনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, একটা ছেলে দেড় বছর কোচিং করছে আর অন্যজন তিন মাসের কোচিং করছে। এতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার কারণে আমাদেরও ১৫০-২০০ সিট খালি থাকে। চলতি মাসের শেষে একাডেমিক কাউন্সিলে একবারই ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হবে। কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য যদি মত দেন তাহলে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা তাড়হুড়ো করব না। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেব। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের যোজিত জিপিএ ৮ থেকে ৯ করারও প্রস্তাব দেওয়া হবে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ পত্রিকাটিকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো চিন্তাভাবনা করিনি। সমস্যা হলে আগামীতে চিন্তাভাবনা করব। তবে প্রথমবার যারা পরীক্ষা দেয় তারা দ্বিতীয়বারের শিক্ষার্থীদের তুলনায় সুযোগ কম পায়, এটা একটা বিষয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলা পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হলে বেশ চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে বাংলানিউজের এক সংবাদে জানা গেছে, এইচএসসি পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার ই্চ্ছায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলোতে উচ্চমূল্যে কোচিং করে। এছাড়াও গাইড ক্রয়, ভর্তি ফরম পূরণে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একান্তই যদি ভর্তি পরীক্ষা নিতে হয় তাহলে এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই নিতে হবে। এতে কোচিং সেন্টারগুলো অর্থের জন্য শিক্ষার্থী ভেড়াতে পারবে না। এতে সময়ও বাঁচবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা করে, আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০১৫-১৬) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ আর থাকছে না।

এবিষয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবে। পুরাতনরা পারবে না।

এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে অসম প্রতিযোগিতা হয়। কারণ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ে আর অন্যজন উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করেই ভর্তি পরীক্ষায় বসে।

তিনি আরও বলেন, আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পুনরায় ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। ফলে যেখানে প্রথমবার ভর্তি হয়েছে, সেখানকার আসন ফাঁকা হয়ে যায়।

এরই প্রেক্ষিতে এই ঘোষণার পর গত ১৭ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আসছে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে টিএসসির সামনে অবস্থিত রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ শুরু করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে তারা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমও তোলেননি। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ যখন বন্ধ করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ততদিনে শেষ হয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম তোলার সময়ও।

এমন সব অভিযোগ তুলে দ্বিতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চান প্রথম বারে সুযোগ না পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক কিছুদিন আগেও এ কথা বলেছিলেন যে, ‘তোমাদের স্বপ্ন যদি ঢাবিই হয়, তাহলে হতাশ হয়ো না। দ্বিতীয়বার একটি সুযোগ তো আছেই।’ তাহলে এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

তারা বলেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে তার সবই খণ্ডনযোগ্য। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালের এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা দুর্ভাগ্য আর যন্ত্রণার শিকার বলেও তিনি জানান।

তাদের সঙ্গে এসেছিলেন অভিভাবকও। ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানায় ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।

এর পরপরই গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসি থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়ার ফলে সদ্য পাস হওয়া শিক্ষার্থীদের যে দুরবস্থা হয় তার দায়িত্ব কে নেবে? এখন বলা হচ্ছে এবার যারা পরীক্ষা দিল তাদের কী হবে? সামনের বছর বলা হবে, ১৫ সালে যারা পরীক্ষা দিল তাদের কী হবে? কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময়েই তা নিতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট ব্যাচের কথা চিন্তা করে সার্বিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার আশায় এ বছর ৪০০ সিট খালি হয়ে যাবে। যেখানে একটি সিটের জন্য প্রায় ৪০০ ছাত্র প্রতিযোগিতা করে, সেখানে ৪০০ সিট খালি থাকাটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। গণমাধ্যমে একবার পরীক্ষা নেওয়ার সুফল তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

গত ১৭ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনেও জানানো হয়, প্রথমবার এক বিষয়ে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বার অন্য বিষয়ে চলে যাওয়ার কারণে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৪২১টি আসন ফাঁকা ছিল। ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৪১৬ ও ৪২৯টি।

অন্যদিকে গত চার বছরের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ নিচ্ছেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪৭ দশমিক ৭১ শতাংশ দ্বিতীবারের। এ বছর মোট উত্তীর্ণ ৪৫ হাজার ৫৩ জনের মধ্যে ২১ হাজার ৪৯৩ জন দ্বিতীবারের।

২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ছয় হাজার ৮৯৬ জনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেয়েছেন তিন হাজার ৬৮৩ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজার ৬১৭ জনের মধ্যে তিন হাজার ২৮৩ এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজার ৬৬৩ জনের মধ্যে তিন হাজার ৩৩৮ জন সুযোগ পেয়েছেন দ্বিতীয়বারে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend