নালিতাবাড়ীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থোত্সব উপলক্ষ্ উৎসবের আমেজ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীস্টান ধর্ম পল্লীতে দু’দিনব্যাপি তীর্থোত্সব উপলক্ষে সর্বত্রই উত্সবের আমেজ বইছে। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য ওই উত্সবের আমেজ এখন বিরাজ করছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সকল খ্রিষ্ট ভক্তদের মাঝে। তারা এখন শুধু হিসেব করছেন দিন আর ক্ষণের। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ইতোমধ্যেই জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উত্সব ঘিরে।
জানা যায়, প্রায় অর্ধ লক্ষ খ্রিস্টভক্তের অংশগ্রহনে ৩০-৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ‘দয়াময়ী জননী মারিয়া’ এ মূল সুরের উপর ভিত্তি করে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপি বাত্সরিক তীর্থোত্সব। ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটায় পাপ স্বীকার, সাড়ে ৪টায় পবিত্র খ্রীস্টযাগ, রাত ৮ টায় আলোক শোভাযাত্রা, সাড়ে ১১টায় সাক্রান্তের আরাধনা, নিশি জাগরণ ও নিরাময় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন শুক্রবার সকাল ৮ টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোত্সবের সমাপ্তি হবে।
এবার ভাটিক্যানের রাষ্ট্রদুত আর্চ বিশপ কোচারী তীর্থোত্সবের উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উত্সর্গ করবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন ময়মনসিংহ খ্রীস্টধর্ম প্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। এছাড়াও শেষ দিন শুক্রবার সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন তীর্থোৎসবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ তীর্থোৎসবে মহা খ্রিস্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোক শোভাযাত্রা তথা আলোর মিছিল, নিশীজাগরন, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশের পথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খ্রিস্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহন করে প্রায় ২ কিঃ মিঃ পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হৃদয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রিস্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানায় ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে এ দিন।
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১শ কিঃমিঃ, শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিঃমিঃ ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিঃমিঃ উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেষা সবুজ শ্যামলীময় পাহাড় ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অপুর্ব লীলাভুমি বারমারী খ্রিস্ট ধর্মপল্লীতে এ তীর্থ স্থানের অবস্থান। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৪ টি ধর্মপল্লীর ও সারা দেশের হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। আর বারমারীতে এ স্থান পেয়ে খ্রিস্টভক্তরা যেন মহা খুশি।
খ্রিস্টভক্তদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ ইং সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে এ তীর্থ স্থানটিকে নির্বাচন করা হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থ স্থান হিসেবে ঘোষনা করেন। এ তীর্থ স্থানের প্রায় ২ কিঃ মিঃ পাহাড়ী টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে মা-মারিয়ার মূর্তি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিনব্যাপি বার্ষিক তীর্থোৎসব পালিত হয়। ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থোৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি মহাতীর্থ স্থানের রূপ পেতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন মুল সুরের উপর ভিত্তি করে বাৎসরিক তীর্থোৎসব পালিত হয়।
তীর্থোৎসবের ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লীর ভাইস চেয়ারম্যান ও ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা বলেন, দিন দিন এই তীর্থ স্থানে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এবছর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দেশি-বিদেশি খ্রিস্টভক্তরা তীর্থ যাত্রায় অংশগ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তীর্থযাত্রীদের জন্য তীর্থ উদযাপন কর্তৃপক্ষ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তিনি আরও জানান, এবারে নিরাপত্তা প্রদানে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, দমকল বাহিনী, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এ তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠানকে সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।