পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে আত্মহত্যা বাড়তে পারে!
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) রংপুর জোনের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গত ১৮ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা করেছেন। নাম তার আবু আবদুল্লাহ। দীর্ঘ ৩০ বছর চাকরি জীবন পার করে অবশেষে নিজেকে হত্যার পথে এগুলেন প্রৌঢ় এই কর্মকর্তা। অভিযোগের আঙুল নিজ প্রতিষ্ঠান আরইবির বিরুদ্ধেই। তার এই মৃত্যু সব মহলকেই বিস্মিত করেছে। কত দুঃখ বা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল তার, যে মৃত্যুকেই একমাত্র সমাধান মনে হলো? কী এমন হয়েছিল যে, কর্মজীবনের পুরোটাই যেখানে ব্যয় করলেন, সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর দুঃখবোধ থেকেই তাকে এত বড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো? নিজের স্ত্রী, সন্তানকে রেখে কেন চলে যেতে হলো তাকে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে আমরা কথা বলেছি নিহতের পরিবার ও আরইবির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে। কথা বলেছি বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে। কথা বলতে গিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়েছি। কোনো কোনো কর্মকর্তা আমাদের এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা দুশ্চিন্তিত হওয়ার মতো। একজন তো আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগই জমা দিয়েছেন এই বলে যে, ‘আমারও আত্মহত্যা ব্যতীত পথ খোলা নেই!’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে যে, দ্রুতই কিছু পদক্ষেপ না নেয়া গেলে আরইবিতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আরও ঘটবে। প্রতিবেদন করেছেন আনিস রায়হান
আবু আবদুল্লাহর মৃত্যুরহস্য
আরইবির রংপুর জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু আবদুল্লাহ’র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলছে নানা গুঞ্জন। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই মতামত দেয়া হয়েছে বলে আরইবি’র একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে পুলিশ এ নিয়ে এখনও কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তারা কিছু বলতে পারবে না। সুরতহাল প্রতিবেদন আসতে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ান বোর্ডের প্রেস কনসালট্যান্ট তালুকদার রুমি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কমিটি তো এটাকে আত্মহত্যাই মনে করছে। ঘটনার দিন ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু আবদুল্লাহ লিফটে দশম তলায় যান। সেখানে করিডোরে দু’একজনের সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর অফিস রুমে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে আর তাকে বের হতে দেখা যায়নি। সিসি টিভি চেক করে এসব তথ্যাদি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দশম তলা থেকেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। ওখান থেকে লাফ দিয়েই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আরইবি’র বাইরে যে সিসি টিভি রয়েছে তা সর্বোচ্চ পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাভার করে। বাইরের এই সিসিটিভিতে আবদুল্লাহ সাহেবের পড়ে যাওয়ার ছবিটি ধরা পড়ে মাটির একেবারে কাছে এসে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত এসব তথ্য আত্মহত্যার পক্ষেই যায়। তবে পুলিশ প্রতিবেদন না পাওয়া গেলে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।’
কিন্তু কেন প্রকৌশলী আবু আবদুল্লাহ আত্মহত্যা করলেন? এমন প্রশ্ন করলে এই কর্মকর্তা এড়িয়ে যান। তিনি সরাসরি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যা দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।’ আরইবি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের কাছে মুখ না খুললেও মুখ তাদের বন্ধ নেই। টক অব দ্য আরইবির এখন একটাই- কেন আত্মহত্যা করলেন আবু আবদুল্লাহ!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবি’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, আবু আবদুল্লাহ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ঢাকার খিলক্ষেতের প্রধান কার্যালয়ের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিজের অসুস্থতা এবং সন্তানদের পড়ালেখার জন্য তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বদলি হতে না পারায় এবং বদলির জন্য তদ্বির করতে গিয়ে অপমানের শিকার হয়ে ক্ষোভে দুঃখে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড রংপুর বিভাগীয় অফিসটি অবস্থিত রংপুর সদরের হাজীরহাট উত্তম এলাকায়। সেখানেই সর্বশেষ দেড় বছর প্রকৌশলী আবু আবদুল্লাহ চাকরি করেছেন। চাকরির সুবাদে তিনি রংপুরের পাগলাপীর রেস্ট হাউসে অবস্থান করতেন। আর তার পরিবারের সদস্যরা থাকতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায়। তার সহকর্মী, রংপুর অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একেএম আবু আবদুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ও দক্ষ। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে লেখাপড়া করছে ঢাকায়। তার শ্বশুরবাড়ি দিনাজপুরে। তিনি আরও জানান, ছুটি শেষে আবদুল্লাহ সাহেব বদলির জন্য ঢাকায় যান। তার ইচ্ছা ছিল ঢাকায় চাকরি করার। কয়েক দিন থেকে তিনি ঢাকায় খিলক্ষেত অফিসে ঘোরাঘুরি করছিলেন বদলির জন্য। কিন্তু তার বদলি হচ্ছিল না। এ নিয়ে তার মনটা খারাপ ছিল।’
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) দেওয়ান মো. তফাজ্জল হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আবু আবদুল্লাহ সাহেব একজন অত্যন্ত ভালো ও সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি হাজি ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কী কারণে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, আমি তা বলতে পারব না। তবে এটুকু জানতাম যে, তিনি অসুস্থ ছিলেন। একবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর তার টিবি ধরা পড়েছিল। দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতেও ছিলেন। ঢাকায় বদলির জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন, এতটুকু জানতাম। তার সম্পর্কে এটুকু বলতে পারি যে, তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। তার আত্মসম্মানবোধ প্রখর ছিল।’
এ বিষয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে চাননি। নিহত আবু আবদুল্লাহর ছেলে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘তার যক্ষ্মা রোগ ছিল। শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ ও দুর্বল ছিলেন। দীর্ঘদিন যাবৎ ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ২০ সেপ্টেম্বর তার ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ছুটির মেয়াদ বাড়ানো কিংবা ঢাকায় বদলির বিষয়ে তদবির করতেই তিনি খিলক্ষেতের আরইবির অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানে কী হয়েছিল আমরা তা জানি না। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু আমার পক্ষ থেকে বলার নেই।’ একটি সূত্র জানিয়েছে, পেনশনের টাকা ও অন্যান্য বিষয়াদির কথা চিন্তা করেই তার পরিবার এ নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক বা কথা বাড়–ক, তা চাইছে না বিধায় মুখ বন্ধ রেখেছে।
কারণ অনুসন্ধান ও অভিযোগের মিছিল
প্রকৌশলী আবু আবদুল্লাহর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা তার সহকর্মী ও পরিচিতদের থেকে জানতে পারি, অসুস্থতাজনিত কারণে দীর্ঘদিন থেকে তিনি ঢাকায় বদলি হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাকে কোনো সহযোগিতা করেননি। উল্টো দুর্ব্যবহার করেছেন। প্রখর আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন আবু আবদুল্লাহ তা মেনে নিতে পারেননি। ক্ষোভ ও দুঃখ থেকে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আরইবিতে প্রায় সব সময় সেনাবাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তারাই প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। নানা কারণেই সেনাবাহিনী থেকে আসা এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিভিল কর্মকর্তাদের বনিবনা হয় না। এর আগে আরইবির চেয়ারম্যান হিসেবে যখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ মালেক দায়িত্বে ছিলেন, তখনও আরইবির কর্মকর্তাদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে বলে জানান সংস্থাটির কয়েকজন প্রবীণ কর্মকর্তা। তারা জানান, সিনিয়র যে অফিসার তার চাকরির ৩০ বছর পার করে ফেলেছেন, তিনি এখন এই বয়সে অসুস্থতাসহ আরও অনেক সঙ্গত কারণেই স্ত্রী, সন্তানদের আশেপাশে থাকতে চান। কিন্তু এ বিষয়ে তদবির করতে গিয়ে যদি কটু কথা বা অসম্মানজনক রূঢ় আচরণের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তার আর কিছু করার থাকে না।
তদন্তের এক পর্যায়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেলাম, যেখানে একজন কর্মকর্তা আবু আবদুল্লাহ যেসব অভিযোগ করতে পারতেন বলে অনুমান করা যায়, হুবহু সেসব অভিযোগই উত্থাপন করেছেন। ২৮ বছর ধরে আরইবিভুক্ত পবিসে কর্মরত এই প্রকৌশলীও তার স্ত্রী, সন্তানদের কাছাকাছি থাকতে চান। সেই এলাকাটি ঢাকাতেও নয়। অভিযোগকারী কর্মকর্তার স্ত্রীও একজন চাকুরে। চাকরিসূত্রে তিনি একটি মফস্বল এলাকায় থাকেন। তার সন্তানরা ঢাকায় অধ্যয়নরত। সন্তানদের কাছে নয়, বরং স্ত্রীর কর্মস্থলের কাছাকাছি থাকার জন্য তিনি তদবির করেছিলেন। আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন সব শুনে মৌখিকভাবে তার পদায়ন সঠিক জায়গায় করে দেয়ার কথা বলে তাকে দরখাস্ত করার কথা বলেন। কিন্তু মুখে যা বলেছিলেন, দরখাস্তের ওপর তিনি সেভাবে নির্দেশনা দেননি। এরপর ওই কর্মকর্তা যোগাযোগ করেন মানবসম্পদ পরিদপ্তরে। সেখানকার পরিচালক তার সঙ্গে ‘ভিখারির’ মতো আচরণ করেন।
ওই কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সাথে ২৮ বৎসর এই প্রতিষ্ঠানে শ্রম দেওয়ার পরও কেন এভাবে আমার ওপর অবিচার করা হইল? কোন যুক্তিতে আমাকে এত দূরে এ বয়সে বদলি করা হইল? সব সময় ইত্যাদি প্রশ্ন আমাকে অস্থির করে রাখে। আমি মানসিক অশান্তির কারণে বর্তমানে কর্মস্থলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি না।… আমি গত ছয় মাস যাবৎ বিষয়টি নিয়ে আরইবির সকল স্তরের কর্মকর্তার কাছে ভিখারির মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউই আমাকে গুরুত্ব দিল না।… আমাকে এত দূরে বদলি করায় আমি অত্যন্ত আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছি।’
অভিযোগের এই ফিরিস্তি ও আবু আবদুল্লাহর মৃত্যুর প্রসঙ্গ নিয়ে আমরা প্রশ্ন রাখি বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামালের কাছে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত আত্মহত্যাকে আমরা অনেকগুলো কারণের ফল হিসেবে দেখি। সাধারণ ঘটনা হচ্ছে, বস তার অধীনস্তের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এটা ওই ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে নিলে বড় কোনো সমস্যা হয় না। তবে এটা তিনি যৌক্তিকভাবে না-ও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হচ্ছে, যদি তিনি আগে থেকেই অসুস্থতা বা ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার মধ্যে থাকেন তাহলে তিনি বিষয়টিকে যৌক্তিকভাবে না-ও নিতে পারেন। আবু আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, তিনি হয়তো আগে থেকেই আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। যা তার পরিবারের সদস্যরা চিহ্নিত করতে পারেননি। এর সঙ্গে কোনো একটি বিষয়, হতে পারে যে কারো দুর্ব্যবহার, যোগ হওয়ার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষ এমনিতেই নানা সমস্যার মধ্যে থাকেন। তাদের মাথায় অনেক কিছুর চাপ এসে পড়ে। যা সমাধানের ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে তখন অনেকেই অন্ধকার দেখেন। এরকম একটা লোক যদি কারও কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হন, তাহলে তার পক্ষে এরকম ঘটনা ঘটানোটা অসম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বসদের খুব মনোযোগী হতে হবে। আমাদের দেশে এরকম বড় প্রতিষ্ঠানের বসরা কখনো অধীনস্তদের লেবেলে নেমে তাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন না। তারা নিজের চেয়ারেই থাকেন। ফলে তার ক্লায়েন্টের মনোভাব কখনোই তিনি ধরতে পারেন না, হুকুমদারি করা ছাড়া। কোনো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনরে ঘটনা ঘটলে সেখানকার বসের কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা উচিত। রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থদের এ বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা দরকার যে, কীভাবে তারা অধীনস্তদের সঙ্গে কথা বলবেন, আচরণ করবেন। নইলে বিপদ ঘটাটা অস্বাভাবিক নয়।’
চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া
আবু আবদুল্লাহর মৃত্যু এবং অন্যদের অভিযোগ নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি আরইবি চেয়ারম্যন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সরাসরি আবু আবদুল্লাহকে অসৎ না বললেও সে রকম ইঙ্গিতই দেন। তিনি বারবার বলেন, ‘আমি সৎ, যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় আনাটাকেই ন্যায় মনে করি। সেটাও হবে অফিসিয়ালি। যিনি সৎ, যোগ্য, তিনিই অফিসিয়াল সুযোগ সুবিধা পাবেন।’
আমরা তাকে প্রশ্ন করি, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, আপনি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না। টিপিকাল সেনা আচরণ করেন সিভিলদের সঙ্গে?
এর জবাবে তিনি বলেন, ‘অসদাচরণ কাকে বলে? যে লোকটা অসৎ, তার সঙ্গে কী আচরণ করব? সৎ লোকদের আমি সব সময়ই সম্মান করি। আর কারা অভিযোগ করেছে, তাদের নাম বলতে হবে। নইলে আমি উত্তর দিব না। অসদাচরণের অভিযোগটা একেবারেই অহেতুক। আমার চাকরি জীবনে কেউ আমার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ আনেনি।’
এরপর তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, সম্প্রতি আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বদলির জন্য চেষ্টা করছিলেন। আমরা শুনেছি তিনি সৎ লোক ছিলেন। কিন্তু আপনি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এবং তার সমস্যা সমাধান করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ অমূলক। আবু আবদুল্লাহ তার ৩০ বছর চার মাস ২০ দিন চাকরি জীবনের মধ্যে মাত্র ৩ বছর তিন মাস ১৩ দিন ঢাকার বাইরে চাকরি করেছেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই আরইবিতে যোগদানের চার বছর পর ১৯৮৮ সালের ১৬ আগস্ট তাকে নোয়াখালী বদলি করা হয়। তিনি এক বছর পর ১১ আগস্ট আবার ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। এরপর তিনি ঢাকায় ইএনএম, প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে কাজ করেন। এরপর তাকে প্রায় ১০ বছর পর ১৯৯৭ সালের ১৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বদলি করা হয়। আবার এক বছর পর ঢাকায় ফিরে আসেন ১৯৯৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এর প্রায় ১৫ বছর পর তাকে রংপুর বদলি করা হয়। সেখানে তিনি মাত্র এক বছর ছিলেন। তার মধ্যে তিন মাস ছিলেন ছুটিতে। সেটা তার অসুস্থতার জন্যই। তবে তিনি কোনো লিখিত দরখাস্ত দেননি বদলির জন্য। অবস্থাটা হচ্ছে, ঢাকার বাইরে কেউ যাবে না। তাহলে ঢাকার বাইরের প্রকল্পগুলো কীভাবে চলবে? ৭২ জন জিএম আছেন। তারা সবাই ঢাকা আসতে চান।’
আমরা এমন একজনকে পেয়েছি, তিনি ঢাকা আসতে চান না, শুধু তার স্ত্রীর কর্মস্থলের কাছাকাছি যেতে চান। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আবু আবদুল্লাহ বেঁচে থাকলে যে ধরনের অভিযোগ করতে পারতেন, তিনিও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন?
জবাবে আরইবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেই লোকটা কে, তা আমাকে বলেন। আরেকজন লোক বিপদের মুখে পড়তে পারেন, তাকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য করেন।’
তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক!
জবাবে ব্রিগেডিয়ার মঈন বলেন, ‘নাম না বললে আমি কীভাবে কথা বলব। শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমি কারও সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করি না। তবে অসৎ, অযোগ্যদের অফিসিয়াল সুযোগ সুবিধা দেয়ার বিরোধিতা করি।’