সারদা কেলেঙ্কারীতে সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশীট পেশ, বিফল মমতার তদন্ত কমিশন
ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য বিতর্কিত সারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে গতকাল বুধবার প্রথম চার্জশীট পেশ করেছে সেদেশের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)।
তবে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যে তদন্ত কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও তারা কোনো প্রতিবেদনই জমা দিতে পারেনি নির্ধারিত সময়ে।
সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন তাঁর সহকারী দেবযানী মুখার্জী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ড হওয়া সংসদ সদস্য কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে ওই চার্জশীটে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে সারদা কেলেঙ্কারীর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যে তদন্ত কমিশন বসিয়েছিলেন, তার মেয়াদও গতকালই শেষ হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি নির্ধারিত সময়ে।
সারদা গোষ্ঠীর চারটি সংস্থা আর সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সংসদ সদস্য কুনাল ঘোষের সংবাদমাধ্যম কোম্পানী স্ট্র্যাটেজি মিডিয়ার নামে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ দত্ত।
সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন, তাঁর সহকারী দেবযানী মুখার্জী, সংসদ সদস্য কুনাল ঘোষ-রা আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তবে সি বি আই নতুন করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এক কর্তা, এক অতি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজ্য পুলিশের এক প্রাক্তন মহাপরিচালকে সারদা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রী, ব্যবসায়ী এবং শিল্পীদের নিয়মিত জেরা করা হচ্ছে – আরও অনেককে জেরা করা বা গ্রেপ্তার করা বাকি আছে বলে জানিয়েছেন সিবিআই অফিসারেরা।
এটিকে আংশিক চার্জশীট বলে বর্ণনা করা হচ্ছে কারণ সিবিআইয়ের পুরো তদন্ত এখনও শেষ হয় নি। কিন্তু নব্বই দিনের মাথায় চার্জশীট জমা না দিলে অভিযুক্তরা জামিনে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন– এই আশঙ্কাতেই আজ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীরা জানিয়েছেন সারদা মোট কত টাকা বাজার থেকে তুলেছিল, কীভাবে সেই টাকা সরানো হয়েছে– কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বে আইনী ব্যবসায় সাহায্য করেছেন– এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত এখনও শেষ হয় নি। চার্জশীট পেশ হলেও সেই তদন্ত চলবে।
এদিকে গত মাসে প্রাদেশিক বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে একযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। সেসময় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির অভিযোগ, আসানসোল থেকে নির্বাচিত বিজেপির এমপি বাবুল সুপ্রিয় বলেন, সারদা কেলেঙ্কারির ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সকলের ভাষ্য সারদার দুর্নীতিতে মমতাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। মমতা ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় কী পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন, তাও গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বক্তব্যে রয়েছে।
অপরদিকে এবছর আগস্টের শেষ দিকে বিতর্কিত সারদা গ্রুপ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে প্রায় ৭৫০ কোটি রুপি (প্রায় এক হাজার কোটি টাকা) দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস। অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই রুপি বস্তায় ভরে সীমান্তে এনে বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকা সংগ্রহ করা হয় বলে দাবি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অর্থের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়েছে এবং বাকী অর্থ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছে। উভয় খাতে অর্থ লেনদেনে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এ কাজের জন্য বড় অঙ্কের কমিশন পেয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইডি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সারদা গ্রুপের প্রধান সুদীপ্ত সেন স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন ভারতের রাজ্যসভার একজন সদস্য। বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, এই টাকার একটা অংশ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারি ও বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ে তাকে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট ছাড়াও ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে সারদা গ্রুপের পাঠানো রুপির একটা বড় অংশ সীমান্ত পর্যন্ত বহন করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে। বস্তায় ভরে রুপি সীমান্তে এনে বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই টাকা জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশে আনে। বাংলাদেশে এই টাকার একটি অংশের বিনিময়ে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করে ওই দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে এবছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের সারদা গ্রুপের টাকা তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ঘুরে কী ভাবে জামায়াতে ইসলামির জঙ্গি আন্দোলন ও নাশকতায় যোগ হলো তা অনুসন্ধান করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া জঙ্গি কার্যকলাপ প্রতিরোধে আওয়ামী লিগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে একটি সরকারি কমিটিও গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও এই কমিটিতে রয়েছেন। তাঁদেরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, সারদা গ্রুপের কেলেঙ্কারি নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে জেরা করছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা অনলাইন