‘এল ক্লাসিকো’তে বার্সাকে হারাল রিয়াল
২৩ মার্চ থেকে ২৫ অক্টোবর—সাত মাস রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের মনে তুষের আগুনের মতো জ্বলেছে পরাজয়ের যন্ত্রণা। লিগে সর্বশেষ ‘এল ক্লাসিকো’তে ঘরের মাঠে রিয়ালকে পরাজয়ের যন্ত্রণা উপহার দিয়েছিল বার্সালোনা। এ মৌসুমে প্রথম এল ক্লাসিকো হলো সেই বার্নাব্যুতেই। পুরনো জ্বালা জুরোনোর এ সুযোগ হাতছাড়া করেননি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-করিম বেনজেমারা। ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা বোঝাল কার্লো আনচেলত্তির দল।
‘এল ক্লাসিকো’ মানেই পরতে পরতে উত্তেজনা, রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, লাল কার্ড, রেকর্ড! আজকের ম্যাচে অবশ্য এসব উপদান খুঁজে পাওয়া গেল কমই! উত্তেজনাটা থাকলেও দুদলই উপহার দিয়েছে গতিময় ও পরিচ্ছন্ন ফুটবল।
বার্সা কোচ লুইস এনরিকে চমকে দেন লুইস সুয়ারেজকে শুরুতেই নামিয়ে। বার্সা কোচ গতকালই বলেছিলেন, কম সময়ের জন্য নামবেন সুয়ারেজ। শুরুতে ফাটকাটা বেশ কাজেও লেগেছিল। তবে শেষ অবধি স্প্যানিশ লিগে ‘অগ্নি-অভিষেক’ই হলো উরুগুয়ে স্ট্রাইকারের। বিশ্বকাপে কামড়-কাণ্ডের পর চার মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন সুয়ারেজ। উরুগুয়ে ফরোয়ার্ডের দুর্দান্ত এক ক্রস নামিয়ে জোরালো শটে রিয়ালের জালে জড়িয়ে স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেন নেইমার।
এরপর গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। এ সময় বেশ কিছু চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় আনচেলত্তির ছাত্ররা। অবশ্য রিয়ালকে প্রথম সুযোগটি করে দেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের অন্যতম ভরসা জেরার্ড পিকে। ৩৪ মিনিটে বক্সে মার্সেলোর শটটি আচমকা পড়ে গিয়ে হ্যান্ডবল করেন পিকে। সঙ্গে সঙ্গে হলুদ কার্ড দেখলেন বার্সা ডিফেন্ডার। পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করলেন রোনালদো। লিগে ৯ ম্যাচে ১৬ গোল রিয়াল তারকার।
প্রথমার্ধে দুদলই বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। তবে বিরতির পর এগিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে রিয়াল। টনি ক্রুসের কর্নারে দারুণ এক হেডে দলকে এগিয়ে নেন পেপে। বার্সা যখন সমতায় ফেরাতে মরিয়া, ঠিক তখনই আবার পাল্টা আঘাত রিয়ালের। ৬১ মিনিটে বেনজেমার করা রিয়ালের তৃতীয় গোলটি ছিল দেখার মতো। এক প্রতিআক্রমণে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ভুলের সুযোগে ইসকো বল নিয়ে এগিয়ে গেলেন বার্সার রক্ষণভাগের দিকে। এরপর বল বাড়িয়ে দিলেন রোনালদোকে। পর্তুগিজ উইঙ্গার বল পাস দিলেন হামেস রদ্রিগেজকে। কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড অহেতুক শট না নিয়ে বল বাড়িয়ে দিলেন বেনজেমাকে। ফরাসি ফরোয়ার্ড ম্যাচে বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করলেও এবার ভুল করলেন না। বার্সা গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোকে ভেদ করে বল চালান করে দিলেন জালে। ইনিয়েস্তা ছুটে এসেও থামাতে পারলেন না বেনজেমাকে।
রিয়ালের জয়ের নেপথ্যে বেনজেমা-রোনালদোর যেমন ভূমিকা, তেমনি ইকার ক্যাসিয়াসেরও। রিয়াল গোলরক্ষকের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। বেশ কিছু চোখধাঁধানো সেভ করেছেন ক্যাসিয়াস। বিশেষ করে ২৩ মিনিটে মেসির শটটা দারুণভাবে প্রতিহত করেছেন রিয়াল গোলরক্ষক। ৫৬ মিনিটে মাথিউর আগুনগোলা শটটা ঝাঁপিয়ে যেভাবে ঠেকালেন ক্যাসিয়াস, ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকবে বহুদিন।
বার্সার অন্যতম প্রধান ভরসা মেসি আজ দারুণ নিস্প্রভ। ২৩ মিনিটে ক্যাসিয়াসের প্রতিহত করা শটটা বাদে গোলমুখে তেমন কোনো কারিকুরি দেখাতে পারলেন না বার্সা ফরোয়ার্ড। এদিক দিয়ে রোনালদো বেশ সফল। গোল করেছেন, গোলে সহায়তাও করেছেন।
বার্সার আক্রমণভাগ তো বটেই, রক্ষণভাগের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতোই। মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে ছিল এনরিকের দল। প্রতি-আক্রমণে রিয়াল কতটা ভয়ংকর, বার্সাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়েছে আনচেলত্তির দল। বারবার বক্সের সামনে কিংবা বক্সের ভেতরে বার্সার অতিরিক্ত পাসিং ফুটবল প্রতিরোধ করেছে রিয়ালের জমাট রক্ষণ।
সেট পিসেও রিয়াল থেকে বার্সা ছিল অনেক পিছিয়ে। রিয়াল ৩ কর্নার থেকে গোল আদায় করেছে ১টি, অন্যদিকে বার্সা পেয়েছে ৯টি, সবগুলোই ব্যর্থ! হলুদ কার্ডে অবশ্য রিয়াল থেকে বার্সা এগিয়ে! বার্সা দেখেছে চারটি হলুদ কার্ড, নামগুলোও বেশ বিস্ময়জাগানিয়া—মেসি, নেইমার, ইনিয়েস্তা ও পিকে। অন্যদিকে রিয়ালের হলুদ কার্ড দেখেছেন রোনালদো ও কারভাহাল।
এ পরাজয়ের পরও পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে অবস্থান বার্সার। ৯ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে একে বার্সা, সমান সংখ্যক ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রিয়াল। লিগের দ্বিতীয় ‘এল ক্লাসিকো’ (দ্বিতীয় লেগ) ২২ মার্চ, ন্যু ক্যাম্পে। স্টার স্পোর্টস ২, এএফপি ও রয়টার্স।