মিরপুরে ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন খুন ; স্বামীকে খুন করার জন্য লোক ভাড়া করতে বলে লিনা
স্বামী গিয়াসউদ্দিন মাতুব্বরকে খুনের জন্য তানভীর আহমেদকে লোক ভাড়া করতে বলে স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিন লিনা। তানভীর তার দুই বন্ধু সাদমান ইসলাম মুক্ত ও আকিবুল ইসলাম জিসানকে লিনার বাসায় নিয়ে আসে। পরে স্বামীকে খুন করার জন্য তাদের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন লিনা। তিনি ১৫ হাজার টাকা তার নতুন স্বামী তানভীরের দুই বন্ধু মুক্ত ও জিসানের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, বাকি অর্ধেক দেবে কাজ শেষে। মুক্ত আর জিসান দুজনে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে ভাগ করে নেয়। লিনার স্বামী মিরপুরের ঝুট ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনকে তারা সবাই মিলে খুন করলেও বাকি টাকাটা তারা আর পায়নি। এর আগেই তারা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায়।
এসব তথ্য পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে গিয়াসউদ্দিন খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মুক্ত। গত শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এমন কথা বলেছে সে। এদিকে স্বামী খুনের পরিকল্পনাকারী লিনার এখনো অনুশোচনা হয়নি। তার নেই কোনো দুঃখবোধ। মিরপুর থানা হাজতে সে একদম স্বাভাবিক। পুলিশ জানিয়েছে, তার মোহ এখনো কাটেনি। নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর লিনা খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন কলেজ পড়ুয়া তার দ্বিতীয় স্বামী তানভীরের।
রাজধানীর মিরপুরের ঝুট ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত লিনা তিন দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে রিমান্ডে থাকা তানভীরের বন্ধু মুক্ত গত শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর আগে গত বুধবার গ্রেফতারকৃত তানভীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। লিনা এবং জিসানের তিন দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করা হবে। জিসান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই ইমানুর রহমান বলেন, লিনা খুবই ধূর্ত মহিলা। স্বামীকে খুন করিয়েও তার কোনো পরিবর্তন নেই। গর্ভজাত সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই লিনার। সন্তানদের কথা একবারও জানতে চায়নি সে। তিনি বলেন, লিনার সব কিছুই নাটক। নাটকে ভরপুর। লিনা দাবি করেছেন, তিনি তানভীরকে বিয়ে করেননি। কিন্তু ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া তার নতুন স্বামী তানভীর স্বীকার করেছে, গত ১৫ অক্টোবর তারা কাজীপাড়া কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছেন। বিয়েতে উকিল বাবা হন মনির হোসেন নামের এক যুবক। সাক্ষী হয় গ্রেফতারকৃত জিসান ও পলাতক সোহেল রানা। লিনা ও তানভীরের বিয়ের কাবিননামা গত বৃহস্পতিবার হাতে পান এসআই ইমানুর। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, লিনা অস্বীকার করলেও তানভীর স্বীকার করেছে তাদের গোপন সম্পর্কের কথা। কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করার আগে তারা গোপনে মিলিত হতেন। লিনার বাবার বাড়িতেই তারা দেখা করতেন, সময় কাটাতেন। লিনার ডাকে সাড়া দিতেই তানভীর ছুটত ওই বাসায়। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তানভীরকে বিয়ের কথা অস্বীকার করলে লিনাকে কাবিননামা দেখানো হয়। সেটাও প্রথম সে অস্বীকার করে। কাবিননামায় নিজের সই দেখালে চুপ করে থাকে। তিনি বলেন, খুনের ঘটনায় লিনার নতুন স্বামী তানভীরকে দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করার পর চারজনকে একাধিকবার মুখোমুখি করা হয়েছে। প্রথম স্বামীকে খুন করাতে কত টাকা লিনা দিয়েছে, কে কত টাকা নিয়েছে, তারা গিয়াসের বাসায় ঢুকে কী কী করেছে এবং খুন করার পর কে কোথায় অবস্থান নেয় বিস্তারিত বলেছে। তবে লিনা টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছেন। মিরপুর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, লিনার মোহ এখনো কাটেনি। তিনি বিভিন্ন ভাবে তানভীরের খোঁজ করার চেষ্টা করছেন। জেলখানায় আটক তানভীরকে খাবার-দাবার পাঠানো যায় কিনা, এ নিয়েও তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। লিনা থানা হাজতে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছেন। তিনি যে খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন, এ নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। লিনার নতুন স্বামী তানভীর রাজধানীর বিএন কলেজের প্রথম বর্ষ, মুক্ত ঢাকা কমার্স কলেজের প্রথম বর্ষ এবং জিসান সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একই বর্ষের ছাত্র। গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এদের গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর রাতে মিরপুরে নিজ বাসায় খুন হন গিয়াসউদ্দিন মাতুব্বর (৩৬)। মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের ১৫ নম্বর লেনের সি-ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির চার তলায় তাকে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় গ্রেফতার করে গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী লিনা, তার নতুন স্বামী তানভীর এবং তার অপর দুই বন্ধু মুক্ত ও জিসানকে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত লিনা ও তানভীরের বিয়ের সাক্ষী ও উকিল সাক্ষী সোহেল রানা এবং মনির হোসেনকে পুলিশ খুঁজছে।