তিন বছরে প্রায় ৩৭ হাজার আবেদন: শিক্ষকদের অবসরসুবিধা যেন সোনার হরিণ
গত সাড়ে তিনবছরে বাংলাদেশে অবসরসুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৩৬ হাজার ৬৮৭ জন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর। এহিসাব ২০১১ সালের ফেব্রুযারি থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু অবসরসুবিধা যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব আবেদনই অনিষ্পন্ন পড়ে রয়েছে বলে দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সারা দেশে এ ধরনের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। অবসরের পরপরই টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এ জন্য তাঁদের তিন-চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসরসুবিধা বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটিকে জানায়, টাকার অভাবে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষক এসে কান্নাকাটি করেন।
প্রতিবেদনে জানান হয়, অবসর সুবিধার এই টাকার একটি অংশ নেওয়া হয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। এ জন্য চাকরিকালীন তাঁদের মূল বেতনের ৪ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। বাকি টাকা সরকার ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। গড়ে মাসে চাঁদা জমা পড়ে ১৭ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি মাসে গড়ে শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান ৯৫০ জনের মতো। সেই হিসাবে অবসরসুবিধার টাকা দিতে হলে প্রতি মাসে প্রয়োজন ৫৬ কোটি টাকা। এখন মাসে ঘাটতি পড়ছে ৩৯ কোটি টাকা। আর জমা পড়া মোট ৩৬ হাজার ৬৮৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন এক হাজার ৩২২ কোটি ৫৭ হাজার টাকা। এ টাকার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
এদিকে অবসরের টাকা তুলতে এসে নানা ধরনের হয়রানির মুখেও পড়তে হয় শিক্ষকদের বলে অভিযোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। কখনো কখনো ঘুষ দিতে হয় এমন অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে দুর্ব্যবহারও পান তাঁরা। আবার সামান্য কাগজের ঘাটতির কথা বলেও হয়রানি করা হয়।
প্রথম আলো জানায়, নিয়মানুযায়ী বয়স ৬০ বছর অথবা চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যান। তবে কেউ মারা গেলেও নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পাবেন। আবার অন্তত ১০ বছর পূর্ণ করে স্বেচ্ছায় অবসর গেলে জমা হওয়া শুধু ৪ শতাংশ চাঁদার টাকা সুদসহ পাবেন। ২০০২ সালে অবসরসুবিধা বোর্ড প্রতিষ্ঠা হলেও এটা কার্যকর হয় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৫৩ জনকে অবসরের টাকা দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো