অকর্মকদের তালিকা নিয়ে বেসিক ব্যাংকে ধূম্রজাল
বেসিক ব্যাংকে কর্মরতদের মধ্যে ইনএকটিভ তথা অকর্মক, অদক্ষ এবং ফাঁকিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংখ্যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজালের। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বেসিক ব্যাংক থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে ৭শ’ জন অকর্মকের সংখ্যা হঠাৎ করেই কমে হয়েছে ১৪৫।
ফলে নতুন করে আরো একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটিতে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের নবপরিচালনা পরিষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি এ্যাকশন প্লান করে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে কর্মরত জনবলের মধ্যে ইনএকটিভ তথা অকর্মক, অদক্ষ, অপ্রয়োজনীয়, দুর্নীতিবাজ এবং কাজে ফাঁকি দেওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও ছিল ওই প্লানেরই একটি অংশ।
এছাড়াও এ প্লানের মধ্যে ছিল ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর অনুসারী ও তার আস্থাভাজনদের তালিকা তৈরি, ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ, দুর্নীতিবাজদের তালিকা করা, পূর্ণাঙ্গভাবে বিশেষ অডিট করা এবং ঋণ বিতরণের কার্যক্রমকে জোরালোভাবে তদারকি করা।
নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদের নির্দেশে অকর্মক লোকের তালিকা তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে প্রধান অফিসসহ সারাদেশের শাখা পর্যায়ে ৭শ’ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। তালিকায় এমন লোকও স্থান পায়, যারা কাজ না করেই বেতন নিচ্ছে। শুধু নামকা ওয়াস্তে অফিস করছে।
অকর্মকদের সংখ্যার বিষয়টি এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বেসিক ব্যাংক। কিন্তু হঠাৎ করেই বেসিক ব্যাংক সেই তালিকা কাঁটছাট করে এ সংখ্যা কমিয়ে এনেছে ১৪৫-এ।
তালিকায় সংখ্যা কমার ব্যাপারে ব্যাংকটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায়, প্রথম একটি তালিকা করা হয়েছে নির্দেশ মোতাবেক। কিন্তু পরবর্তীতে কিছুটা জানাজানি হলে শুরু হয় তদবির। তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে শাখা ব্যবস্থাপকদের দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের হুমকি।
হুমকিতে বলা হয়, আমি অমুক মন্ত্রীর লোক। অমুক নেতা আমার আত্মীয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমার লোক আছে। আমি অমুক কর্মকর্তার মাধ্যমে চাকরি নিয়েছি। সরকারি দলের পরিচয়সহ দেখানো হয় ইউনিয়ন নেতাদের ভয়। ব্যাংকে শান্তি মতো কাজ করতে দেবে না। বদলি করে পাঠিয়ে দেবে। বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দেওয়া হবে এবং বিভিন্ন আরো অনেক হুমকি দেওয়া হয়। ঋণ কেলেঙ্কারিতে সহযোগিতাকারী হিসাবে নাম উঠিয়ে দেবে ইত্যাদি ভয়-ভীতিও দেখানো হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হয়েছে অনেকের। পুনরায় তালিকা করে হেড অফিসে পাঠাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিছু শাখা ব্যবস্থাপক।
আগের তালিকার সংখ্যার সঙ্গে নতুন তালিকার সংখ্যার রয়েছে বিস্তর ফারাক। তালিকায় নামের সংখ্যা এত পরিমাণে কমায় ব্যাংকটিতে শুরু হয়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন। যারা নিয়মিত কাজ করেন তাদের মধ্যে চলছে ক্ষোভ। এমন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অকর্মক লোকদের তালিকা করার পর ভেবেছিলাম নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংকটি। অলস, অদক্ষ এবং দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা কমে যাবে। ভাল কাজ করলে পুরষ্কার পাওয়া যাবে। কিন্তু তদবিরের মাধ্যমে নতুন তালিকা হওয়ায় অকর্মক লোকদের চাপের মধ্যে থাকতে হতে পারে।
এ অকর্মকরা আগের চেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাদের কথা মতোই চলতে হবে অন্যদের। এ বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষভাবে দেখা উচিত বলে বলেও মনে করেন ব্যাংকটির দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তারা।
অকর্মক জনবলের তালিকার সংখ্যার হেরফের হওয়ার বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের পরিচালক এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ড. মুজিব উদ্দিন শীর্ষ নিউজকে বলেন, সংখ্যার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বর্তমান বোর্ড মনে করছে ব্যাংকটিতে ওভার ম্যান পাওয়ার (অতিরিক্ত জনবল) রয়েছে। পরিচলনা পরিষদ উপলব্ধি করছে যে, এ বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখা উচিত।